স্বামী স্ত্রীর ভালোবাসা কেমন হওয়া উচিত?
চিত্রসূত্র-pixabay.com
স্বামী স্ত্রীর ভালোবাসা:
পৃথিবীর প্রতিটা মেয়েই চাই তাঁর স্বামীর প্রিয়তমা স্ত্রী হয়ে সারা জীবন টা কাটাতে।স্বামীর ভালোবাসা ছাড়া একটি মেয়ের জীবন অর্থহীন।তবে স্বামী স্ত্রীর সম্পর্ক থাকলেই যে সেই স্বামী স্ত্রীর মধ্যে গভীর ভালবাসা বিরাজ করে তা কিন্তু নয়।স্বামী স্ত্রীর ভালোবাসা টা দু'জনের বোঝাপড়ার উপরে নির্ভর করে।
স্বামী স্ত্রীর মধ্যে একটি সুন্দর সম্পর্ক তৈরি করতে হলে সর্বাঙ্গে দুজনের বোঝাপড়ার উপর জোর দিতে হবে।যদি কোনও দম্পতি ইচ্ছা করে যে তাঁদের সম্পর্ক টাকে সবসময় আনন্দে পরিপূর্ণ করে রাখবে তাহলে তাঁরা সেটাই করতে সক্ষম হবে। এ সম্পর্কের গভীরতা নির্ভর করে দুজনের মনোভাবের উপর।
স্বামী স্ত্রীর ভালোবাসায় স্ত্রীর ভূমিকা:
আমি মনে করি স্বামী স্ত্রীর ভালোবাসা টা মধুময় করে তুলতে স্ত্রীর ভূমিকা টা বেশি হয়।স্বামীর মন বুঝে তাঁর মনমতো চলা স্ত্রীর কর্তব্য।এক্ষেত্রে যে মেয়ে নারী স্বাধীনতা, নারীর মর্যাদা ক্ষুন্ন কিংবা নারীর সত্তার প্রসঙ্গ উল্লেখ করে সে আর যাইহোক স্বামীর প্রিয়তমা স্ত্রী কখনোই হতে পারবে না।এ সম্পর্ক টা হল একি কয়েনের এপিঠ ওপিঠ।
ডরোথি ডিক্স নামে বিখ্যাত একজন সমাজ সেবিকা বলেছিলেন--
"কোনও লোকের বিয়ের আনন্দ সব থেকে বেশি নির্ভর করে সাধারণভাবে তাঁর স্ত্রীর মেজাজ আর চরিত্রের প্রকৃতির উপর।কোনও সুন্দরী স্ত্রী নানারকম সদ্ গুনের অধিকারিণী হলেও যদি তাঁর মেজাজ টি ভালো না হয়,সে যদি কলহপ্রিয়া হয় বা ঈর্ষাপরায়ণা হয় তাহলে জীবনের অর্থাত্ বিবাহিত জীবনের সব আনন্দ ই মাটি হয়ে যায়।"
প্রতিটি পুরুষ চাই তাঁর স্ত্রীর কাছে মর্যাদা পেতে।স্ত্রীর সঙ্গে যেটুকু সময় কাটাবে সেই সময় টা যেন হয় মধুর।নারীর মন যদি কোমল হয় তাহলে একটি পুরুষের মন হয় তার অধিক কোমল। পুরুষ সাংসারিক কহল পছন্দ করে না।আর যে সংসারে কলহ বিরাজ করে সে সংসারের পুরুষ কর্মক্ষেত্রে বার বার বাঁধা প্রাপ্ত হয়।
এ প্রসঙ্গে বিখ্যাত মনোবিজ্ঞানী ড: লুই এম.ট্রুম্যান পেন প্রায় একশরও বেশি বিয়ে নিয়ে গবেষণা করেছেন।গবেষণার ফল থেকে তিনি দেখেছেন বেশির ভাগ বিয়ে সফলতা লাভ করে না, তার কারণ স্ত্রী স্বামীর দোষ ত্রুটি ধরতে আরম্ভ করায়।
যে নারীর স্বামীর সব কাজে দোষ ত্রুটি ধরার প্রবৃত্তি মনের মধ্যে পোষণ করে তাঁদের সাংসারিক জীবন কখনোই সুখের হয় না।
বিশ্ব বিখ্যাত দার্শনিক সক্রেটিস তাঁর কলহপ্রিয়া স্ত্রীর সাহচর্য থেকে আত্মরক্ষার জন্যই দূরে সরে গিয়ে এথেন্স শহরের কোন এক গাছের তলায় বসেই তাঁর দার্শনিক তত্ত্ব প্রচার করতেন।
আধুনিক যুগে দাঁড়িয়ে এই ঘটনা আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করছে। এখন বেশিরভাগ স্বামী স্ত্রীর মধ্যে কলহ যেন নিত্যদিনের সঙ্গী।সামান্য একটু ভুলবোঝাবুঝির কারণে কত সম্পর্ক নষ্টের মুখে তার কোনো হিসাব নেই।
অথচ এই সমস্ত কিছু ই পরিহার করা সম্ভব, যদি একটু ভালো করে যেটা নিয়ে সমস্যা হচ্ছে সেটা নিয়ে চিন্তা করা যায় তবে।সামান্য চেষ্টা আর একটু যত্ন সমস্ত সমস্যার সমাধান করে দিতে পারে।
অনেকের ভুল ধারণা হল রূপ, যৌবন আর সৌন্দর্যের মাধ্যমেই বোধ হয় মানুষকে সন্তুষ্ট করা যায়।কিন্তু তা কখনোই নয়, সৌন্দর্য ক্ষণিকের আনন্দ বয়ে আনে, চিরকাল নয়।আসলে ভালোবাসর সঙ্গে সৌন্দর্যের কোনও যোগ নেই।দৈনিক সৌন্দর্য কখনোই ভালোবাসা বা সুখের পক্ষে একান্ত অপরিহার্য বস্তু নয়।
বহু নারীর সৌন্দর্য তাঁদের স্বামীর মনোরঞ্জন করাতে ব্যর্থ হয়েছে। আবার এমন নারীর ও উদাহরণ মেলে যাঁর রূপ যৌবন নয়, খাঁটি ভালোবাসার মাধ্যমে সে তাঁর স্বামীর প্রিয়তমা স্ত্রী হয়ে সারা জীবন টা কাটিয়ে দিয়েছেন।
আসুন এই প্রসঙ্গে ইংল্যান্ডের বিখ্যাত প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন ডিসরেলির জীবন কাহিনীতে আলোকপাত করি-
ডিসরেলি বলেছিলেন, জীবনে আমি প্রচুর ভুল করতে পারি তবে কখনো ভালবাসার জন্য বিয়ে করব না।
আর তা তিনি করেন ও নি।
তিনি প্রায় পঁয়ত্রিশ বছর পর্যন্ত একাই জীবন কাটিয়েছেন।আর তার পর এক ধনী বিধবাকে বিয়ে করেন, যিনি ছিলেন ডিসরেলির থেকে পনেরোটা বছর বড়।
যে বিধবার সব চুল ছিলো সাদা, সৌন্দর্য হীন।
প্রেম?
না, তা তো নয়।
সেই ভদ্র মহিলা খুব ভালো করেই জানতেন যে ডিসরেলি তাঁকে ভালোবাসে না। ডিসরেলি তাঁকে একবছর অপেক্ষা করতে অনুরোধ করেন যাতে তাঁর চরিত্র বুঝতে পারেন।তারপর সেই সময় কাটলে তাঁকে বিয়ে করেন।
খুবই গদ্য ময় , ব্যবসায়িক কথা বলে মনে হল তাই না?
হতে পারে ।কিন্তু তা সত্তেও ডিসরেলির ঐ বিয়ে অনেক বিয়ের চেয়ে সফলতায় ভরা ছিলো।বিয়ের ইতিহাসে এটাই আশ্চর্য।
যে ধনী বিধবাকে তিনি বেছে নিয়েছিলেন সেই ভদ্রমহিলা কিন্তু তরুণী সুন্দরী বা দারুণ কিছু দেখতে ছিলেন না।
তাঁর কথাবার্তায় সাহিত্য বা ইতিহাস সম্বন্ধে হাস্যোদ্রেক করার মতই সব ঘটত।
যেমন উদাহরণ হিসেবে দেখা যায়, তিনি জানতেন না আগে কারা এসেছিল গ্রীক না রোমানরা।পোশাক সম্বন্ধে তাঁর রুচি ছিলো জঘন্য, বাড়িঘর সাজানো সম্পর্কে ও রুচি ছিলো অদ্ভুত।
কিন্তু তিনি একটি বিষয়ে ছিলেন ওস্তাদ---
পুরুষ কে কিভাবে নাড়াচাড়া করতে হয় সে ব্যাপারে তিনি ছিলেন একেবারে সিদ্ধহস্ত।স্বামীর মন রাখার ব্যাপারে তিনি ছিলেন অসামান্য দক্ষ।
তিনি তাঁর কোনও কথা,কিংবা নিজের বুদ্ধি ডিসরেলির উপর চাপিয়ে দিতেন না।ডিসরেলি যখন চালাক চতুর ডাচেসদের সঙ্গে কথাবার্তা বলে বিরক্ত মনে ঘরে ফিরে আসতেন, তখন মেরী অ্যানের কথাবার্তায় তিনি আনন্দ উপভোগ করতেন।বাড়ির আবহাওয়া তাঁর মন কে ক্রমেই আনন্দময় করে তুলতো।স্ত্রীর আপ্যায়ন তাঁকে মধুর শান্তি এনে দিত।
বাড়িতে বয়স্কা স্ত্রীর সঙ্গে যে সময় টা তিনি কাটাতেন সেটাই ছিলো তাঁর কাছে পরম আদরের ,পরম সুখের।তাঁর স্ত্রী তাঁর কাছে ছিলেন পরম বিশ্বাসের পাত্রী।তাঁর পরামর্শদাতা। প্রতি রাতে তিনি তারাতারি বাড়ি ফিরে স্ত্রী কে সারাদিনের সমস্ত কাজের বিবরণী শোনাতেন।
আর সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল , মেরী অ্যান আদপেই বিশ্বাস করতেন না যে তাঁর স্বামী কোনও কাজ করতে চান, আর তাতে তিনি ব্যর্থ হবেন।
ত্রিশ বছর ধরে মেরী অ্যান শুধু ডিসরেলির জন্যই বেঁচে ছিলেন।একমাত্র তাঁরই জন্য।তাঁর সমস্ত অর্থ সম্পদ তাঁর কাছে দামী ছিল শুধু স্বামীর সুখের জন্য।
তার পরিবর্তে তিনি ছিলেন ডিসরেলির নায়িকা।
জনসমক্ষে মেরী অ্যান যতটাই বুদ্ধিহীনা বলে মনে হয়ে থাকুক, ডিসরেলি কিন্তু কখনই স্ত্রীর সমালোচনা করেন নি।কখনও স্ত্রীর সঙ্গে চড়ে কথা বলেননি।তাছাড়া কেউ যদি তাঁকে ঠাট্টা করতে চাইতো তাহলে তিনি সঙ্গে সঙ্গে ই স্ত্রীর সমর্থনে দ্রুত অগ্রসর হতেন।এর মধ্যে থাকতো তীব্র বিশ্বস্ততা।
মেরী অ্যান হয়তো ত্রুটিহীনা ছিলেন না, তা সত্তেও তিন দশক ধরে স্বামীর বিষয়ে কথা বলতে তাঁর ক্লান্তি আসেনি।তিনি সব সময় ই তাঁর প্রশংসা করতেন।
যার জন্য ডিসরেলি বলতেন,
' আমরা ত্রিশ বছর বিবাহিত জীবন যাপন করছি, অথচ আমি কখনই একঘেয়ে বোধ করিনি।
মেরী অ্যান বলতেন, 'আমার জীবনে এসেছে কেবলই আনন্দ।'
ডিসরেলি মাঝে মাঝে তাঁর স্ত্রী কে ঠাট্টা করে বলতেন,
"জানো আমি তোমার টাকার জন্যই তোমায় বিয়ে করেছি।"
মেরী অ্যান হেসে বলতেন,
" হ্যাঁ, তবে আবার যদি তুমি আমাকে বিয়ে করো তাহলে এবার নিশ্চয়ই আমাকে ভালোবাসার জন্যই করবে।"
ডিসরেলি বলতেন, একদম ঠিক বলেছো।
না, মেরী অ্যান আদপেই সুন্দরী ছিলেন না।কিন্তু ডিসরেলি তাঁর নিজের মত জীবন যাপন করায় কখন ও তিনি বাধা দিতেন না।
বর্তমানে যে বিষয় টা নিয়েই একটি সম্পর্কের মধ্যে বিবাদের মূল সূত্রপাত। যদি কোনও সম্পর্কের মধ্যে শর্ত চলে আসে, একগুচ্ছ বাইন্ডিং প্রবেশ করে তাহলে সে সম্পর্কের মধ্যে কোনও প্রাণ থাকবে না।
বিবাহিত জীবনে সুখের রহস্য কি?
এই প্রসঙ্গে মিসেস জ্যামরস বলেন---
"কোনও জীবন সঙ্গী বেছে নেওয়ার সময়' বিয়ের পরেই ভদ্রতাকে স্থান দিতে হয়।স্ত্রীরা যদি স্বামীর প্রতি ভদ্রতা দেখায় তাহলে আর কিছু লাগে না।"
ভালোবাসা কে শেষ করতে কড়া কথা বা খারাপ আচরণ হলো ক্যানসারের মতো।
আমি নিজের বিবাহিত জীবনে ভীষণই ভাবে উপলব্ধি করেছি যে, একে অপরের সুখ- দুঃখের সাথী হওয়ার মতো আনন্দময়, সুখময় জিনিস এই পৃথিবীতে আর কিছু নেই।একজনের হাসি আনন্দের অংশীদার হওয়া মানেই হল বিবাহিত জীবনে সুখ আনার চাবিকাঠি।
দাম্পত্য জীবনের সাফল্যের মূল কথা হল পরস্পরের সান্নিধ্য লাভ, পরস্পরের মধ্যে গভীর ভালোবাসা, ছোট্ট ছোট্ট বিষয়ে স্বার্থত্যাগ আর প্রিয় মানুষটার প্রতি সুন্দর ধারণা গড়ে তোলা।
চিত্রসূত্র-pixabay.com
এছাড়া যে কোনও বিবাহিত জীবনের সাফল্য তাঁর সঙ্গীর সঙ্গে পছন্দ অপছন্দ আর অভ্যাসের মিলের উপরেই নির্ভর করে।যে স্ত্রী তাঁর স্বামীর অলস মুহূর্ত কে,মন খারাপের মুহূর্ত কে আনন্দে ভরিয়ে তুলতে পারে, সে স্ত্রী তাঁর স্বামীর কাছে কখনোই অবহেলার স্বীকার হন না।
আপনি যদি আপনার স্বামীর প্রিয়তমা স্ত্রী হতে চান তাহলে, আপনার উচিত স্বামীর সমস্ত ব্যক্তিগত ইচ্ছা, তাঁর শখ, আল্লাদ যাতে পূরণ করতে পারে সেদিকে খেয়াল রাখা।
আপনার কাজ হবে স্বামী কে অনুপ্রাণিত করা।
স্বামী স্ত্রীর ভালোবাসায় স্বামীর ভূমিকা:
তবে অবশ্যই সব ক্ষেত্রেই স্বামী ও স্ত্রীর প্রতি সুন্দর ব্যবহার করা চাই।তাঁর প্রতি সাহায্যের হাত টা বাড়িয়ে দেওয়া চাই।
অ্যাণ্ডে মাওরিচ তাঁর ' দি আর্ট আফ ম্যারেজ ' বইতে বলেছেন,
"কোনও বিবাহিত মানুষ সুখী হতে পারে না যদি না সেই আনন্দে দুজনেরই সমান ভাগ থাকে।এটা কখনই সম্ভব নয় যে দুজন মানুষের ধ্যান ধারণা, মনোভাব সবই একই রকম হবে।"
তাই সংসার করতে করতে দুজন দুজনের পরিপূরক হয়ে ওঠার নাম ই তো সুখী জীবন ।এক সঙ্গে থাকতে থাকতে একটা সময়ের পর বোঝাপড়াটা শক্ত হয়ে ওঠে, তখনই সংসারে সুখের আবির্ভাব ঘটে।
আর যে সমস্ত স্ত্রীরা বুদ্ধিমতি হন তাঁরা তাঁর স্বামীর শখ ও ইচ্ছা তে উত্সাহ দেন।এবং তাঁদের স্বামীরাও নিঃসেন্দহে স্ত্রীর প্রতি অনুরক্ত থাকেন।
মানবজীবনে প্রেম হল পরমাণু শক্তির মতো। যার শক্তি সম্পর্কে ধারণা কল্পনার অতীত।স্বামীর জীবনে আপনার ভালোবাসার গুরুত্ব অত্যন্ত মৌলিক।স্বামী স্ত্রীর ভালোবাসা তাঁর সংসার কে সুখী করার অন্তরায় হিসাবে কাজ করে।
আসুন এবার আলোকপাত করি কিভাবে ভালোবাসার মান উন্নত করা যায় সে প্রসঙ্গে----
#1.ভালোবাসার দৈনন্দিন প্রকাশ:
ভালোবাসাই দাম্পত্য জীবনের মূল ভীত।অনেক মহিলায় সংসারে সংকটের সময় মহত্ ভূমিকা পালনের যোগ্যতা রাখেন।কিন্তু আবার কিছু মহিলা থাকেন ভীষণ উদাসীন।সেই সব সাংসারিক জীবনে ব্যর্থতা নেমে আসে।
ড: লুই এম.ট্রুম্যান ও তাঁর সহকর্মীরা একটি সমীক্ষা করে দেখেন--
"জীবন যখন স্বাভাবিক পথ ধরে চলতে থাকে তখন স্ত্রীরা এত বেশি উদাসীন বা ব্যস্ত থাকেন যে স্বামীকে তাঁর জীবনে কতখানি প্রয়োজন তা জানবার অবকাশ পান না।"
তিনি বলেন আমার অভিজ্ঞতা থেকে জানি যে, যেসব মহিলা তাঁর স্বামী তাঁকে ভালোবাসেন না, স্বামী তাঁকে অবহেলা করে, তাঁর প্রতি অসহ্য হয়, স্বামী তাঁকে যথাযোগ্য সম্মান দেন না বলে অভিযোগ করেন ,আসলে সেই সব মহিলারা নিজেরাই ভালোবাসা ও প্রশংসার মূল্য জানে না।
অপরদিকে যেসব মহিলা ভালোবাসার ব্যাপারে অত্যন্ত সজাগ ও উদার তাঁরা তাঁর স্বামীর কাছ থেকে অপরিসীম ভালোবাসা লাভ করে।
আবার স্বামীকেও প্রতিদিন স্ত্রীর প্রতি কিছু না কিছু বিশেষ ভূমিকা পালন করা উচিত।তাঁর পছন্দ অপছেন্দর প্রতি লক্ষ্য রাখা উচিত। তাঁর পছন্দের খাবার টা যদি হাতের মুঠোই করে এনে তাঁকে দেওয়া যায় তাহলে সেই মানুষ টা যে কতটা খুশি হবে সেটা কল্পনার বাইরে।
মোট কথা দু'জন কেই দু'জনার পরিপূরক হয়ে উঠতে হবে। এবং কী কী নিয়ম মেনে চললে স্বামী স্ত্রীর সাথে সম্পর্ক ভালো থাকে? সে সম্পর্কে যদি জানতে চান তাহলে উপরের লিঙ্কে প্রবেশ করুন এবং বিস্তারিত পড়ুন।
চিত্রসূত্র-pixabay.com
#2.সুরাসিকা হয়ে উঠুন:স্বামীর ভালোবাসা
যাঁরা সব ব্যাপার সহজ ভাবে হৃষ্ট মনে গ্রহণ করতে পারে, তাঁরা কখনোই হতাশায় ভোগে না।বরং সব কিছু সরলভাবে মানিয়ে নিতে পারলে দাম্পত্য জীবনে প্রেমের ভিত্তি সুদৃঢ় হয়ে ওঠে।
মতভেদ করে কখনো সংসার করা যায় না, সংসার কোন বস্তু নয় এটা মায়ার জগৎ।এখানে প্রেম দিলে অধিক প্রেম পাওয়া যায়।তাই মন প্রাণ খুলে একে অপরকে খুব ভালোবাসুন ।
#3.উদার হয়ে উঠুন:
বিবাহিত জীবনে আধাআধি কোনও ব্যাপার থাকে না।প্রেমের মূল কথাটি হল নিজেকে স্বামীর কাছে নিঃস্বার্থ ভাবে উজার করে দেওয়া।এবং স্বামী ও স্ত্রীকে নিঃস্বার্থ ভাবে ভালোবাসবে।
এমন অনেক স্ত্রী আছেন যাঁরা বিয়ের পর স্বামীর পুরানো বন্ধুদের সহ্য করতে পারেন না ,তাঁদের ঈর্ষা করেন।কিন্তু এই বিষয় গুলো যদি সহজ ভাবে মেনে নেওয়া যায় তাহলে কোনও অশান্তির ভয় থাকে না। এই ঘটনা দাম্পত্য জীবন কে দুঃখ ময় করে তোলে।
আবার এমন প্রচুর স্বামী আছে যাঁরা তাঁর স্ত্রীর বিবাহের আগের সম্পর্ক নিয়ে প্রচন্ড অশান্তি করে।এটা করা একদম ই উচিত নয়। এতে ভালোবাসা কমতে থাকে।অতীতের ঘটে যাওয়া ঘটনা নিয়ে বর্তমান দিনে অশান্তি করা মূর্খামি ছাড়া আর কিছু নয়।
#4.সামান্য জিনিসের ও প্রশংসা করুন:
সামান্য প্রশংসার গুন অপরিসীম। এটা যে কোনও সম্পর্কের ভীত বলা যায়।স্বামী কে সুখী করার জন্য, স্বামী যা যা করে থাকেন তার উল্লেখ করে প্রশংসা করা প্রতিটা স্ত্রীরই কর্তব্য।
জনসমক্ষে স্বামীর নিন্দা করলে সে সম্পর্ক বেশী দিন স্থায়ী হয় না।
আবার কোন বুদ্ধিমান স্বামী ও তাঁর স্ত্রী কে বাইরের কোন মানুষের সামনে কখনোই অপমান করবে না।
স্ত্রী কিংবা স্বামী যদি একে অপরকে একটু খানি প্রশংসা করে তাহলে দু'জন দু'জনের প্রতি শ্রদ্ধা বাড়ে, ভালোবাসা বাড়ে।
#5.সুবিবেচক হয়ে উঠুন:
স্বামী যখন সারা দিন পরে ঘরে ফিরে একটু বিশ্রাম নিতে চান,তখন কোনও বিবেচক স্ত্রীর সাজগোজ করে বাইরে যাওয়া উচিত নয়।স্বামীর প্রতি গভীর ভালোবাসা থাকলে স্বামী কখন কি চান স্ত্রী স্বাভাবিকভাবেই সেটা উপলব্ধি করতে পারেন।এবং স্বামীর সুখ ও স্বাচ্ছন্দ্যের আলোয় নিজেকে উদ্ভাসিত করে তাঁর কাছে ভালোবাসার ফসল আদায় করতে পারেন।
ভালোবাসা হল অমূল্য সম্পদ ।ভালোবাসা ছাড়া সম্মান ও সম্পদের কোনও দাম নেই।তাই যদি আপনার ভালোবাসায় আপনার স্বামী প্রকৃত সুখী হন তাহলে জেনে রাখুন আপনার জীবন যাপনের ধরন অনেক গুন বেড়ে যাবে।
আবার অনেক স্বামী আছে যাঁরা স্ত্রী কে ঘরে একা রেখে অনেক রাত পর্যন্ত বাইরে বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দেয়।স্ত্রীর সুবিধা অসুবিধার কথা বিবেচনা করে না। কেবল নিজের মনোরঞ্জনের কথা ভাবে।এমন করতে থাকলে সেই সম্পর্কে মধ্যে শান্তি থাকবে না।
তাই স্বামী স্ত্রীর মধ্যে ভালোবাসা অটুট রাখতে হলে দুজনেরই সুবিবেচক হওয়া প্রয়োজন।
#6.আনন্দময় পরিবেশ:
একজন স্ত্রী হিসাবে আপনি আপনার ঘরের যে পরিবেশ সৃষ্টি করে রাখবেন তার উপরে আপনার স্বামীর কাজকর্মে ব্যাপক ভাবে প্রভাব পড়বে।তাই ঘরের পরিবেশ কে শান্তি পূর্ণ আর আনন্দ ময় করে রাখা উচিত।
স্ত্রী হিসাবে আমাদের কাজ হবে পরম নিষ্ঠায় স্বামীর দৈহিক আর মানসিক শক্তি বাড়িয়ে তোলা।সংসারে যেন সব সময় একটা মধুর পরিবেশ তৈরি হয় সে দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।
চিত্রসূত্র-pixabay.com
সংসার হবে ঝকড়া বিবাদহীন শান্তির নীড়।তাহলেই স্বামী আপনাকে সবসময় চোখে হারাবে।আর স্বামী কে দিয়ে যদি কোনও কাজ করাতে চান তাহলে মিষ্টি ভাষায় তাঁর সঙ্গে কথা বলুন।সে আপনার সব কিছু করে দিতে রাজি থাকবে।
আবার স্বামী ও সব সময় লক্ষ্য রাখা উচিত যে তাঁর স্ত্রীর মুখে হাসি আছে কিনা,সে কোন কষ্টে আছে কিনা।একটি মেয়ে তাঁর সংসার পরিবার ছেড়ে একটা অচেনা অজানা পরিবেশ আসে কেবল একটা মানুষের উপর ভরসা করে।তাই সেই মানুষ টা যাতে ভালো থাকে ,আনন্দে থাকে, খুশিতে থাকে সেটা লক্ষ্য রাখা একজন স্বামী হিসেবে কর্তব্যের মধ্যে পড়ে।
ব্যাস শুধু এই টুকু নিয়ম অনুসরণ করুন, তাহলে আপনাদের মধ্যে ভালোবাসা টা সারা জীবন অক্ষুণ্ণ থাকবে। আপনারাও হয়ে উঠতে পারবেন একে অপরের প্রিয় মানুষ ।
আমার লেখা টা যদি ভাল লেগে থাকে তাহলে শেয়ার করতে ভুলবেন না এবং একটা কমেন্টস করবেন এতে আমি অনুপ্রাণিত হব।
ধন্যবাদ😊
তথ্যসূত্র সংগৃহীত
চিত্রসূত্র-pixabay.comপ্রিয়তমা স্ত্রী
Tags,প্রিয়তমা স্ত্রী
কোন মন্তব্য নেই: