জীবন সঙ্গী কেমন হওয়া উচিত?
জীবন সঙ্গী কেমন হওয়া উচিত?
জীবন সঙ্গী, মানে একটি জীবনের সর্বক্ষণের সঙ্গী।সেই জীবন সঙ্গী কেমন হওয়া উচিত? আজ আমরা এ প্রশ্নের উত্তর খোঁজার চেষ্টা করব---
পশু পাখী থেকে মানুষ, প্রতিটা প্রাণীর একজন সঙ্গিনীর ভীষণ প্রয়োজন। যাঁর সঙ্গে সুখ,দুঃখ, আনন্দ, হাসি, কান্না সব কিছুই নির্দ্বিধায় ভাগ করে নিতে পারব, এমন সঙ্গীর সন্ধানে সকলেই থাকে।আমাদের জীবনের একটা ভাগ কাটে বাবা মা এর কাছে, পরিবারের কাছে, জীবনের আর দুটি অংশ মানে যৌবন থেকে বৃদ্ধ পর্যন্ত কাটে জীবন সঙ্গিনীর সাথে। তাই সেই জীবন সঙ্গী নির্বাচন করা, বা জীবনে মনে মন মেলানোর মানুষ টা খুব গুরুত্বপূর্ণ।
কিছুদিন আগে কোরা তে আমাকে একজন প্রশ্ন করেন, তিনি বলেন-- আমি জীবনে উপযুক্ত সঙ্গী কিভাবে নির্বাচন করব?
আমি তাঁকে ঘুরিয়ে প্রথমে এটা বলি, আচ্ছা আপনার প্রশ্নটি এমন হলে কেমন হতো, যে-- আমি কারো উপযুক্ত সঙ্গী কিভাবে হব?
আসলে, আমরা এখানেই বড় ভুলটা করি। আমরা সকলেই চাই আমার যেন একটা উপযুক্ত, মনের মতো একজন জীবন সঙ্গী হয়। আমরা এটা কখনোই ভাবি না আমি আমার সঙ্গীর উপযুক্ত বা মনের মতো কিভাবে হব। সত্যি কথা বলতে, যে দম্পতি একে অপরের মনের মতো হওয়ার মনোভাব নিয়ে সংসার জীবনে প্রবেশ করে তাঁরাই জীবনে সুখের চাবিকাঠি খুঁজে পায়। আর যাঁরা কিছু শব্দের সমষ্টি নিয়ে বসে থাকে ভাবে আমার যে জীবন সঙ্গী হবে তাঁর মধ্যে এই এই গুন গুলো থাকবে বা আমাকে এমন এমন ভাবে প্রাধান্য দেবে, আমার মনের মতো হবে --- তাঁরা কখনো নিজে সুখ পাবে না এবং তাঁর সঙ্গী ও তাঁর কাছে সুখী হবে না।
কারণ আমরা কেউ কারো মতো নই। একজন মানুষ কখনোই অন্য আর একজনের পুরোপুরি মনের মতো হয়ে জন্মায় না। কেউ ই একশো শতাংশ মনের মতো সঙ্গী খুঁজে পাবে না, কিছুটা মনের মতো হবে আর বাকিটা দুজন দুজনের পছন্দ, চাওয়া পাওয়া, ইচ্ছা অনিচ্ছা অনুযায়ী নিজেদের তৈরি করে নিতে প্রস্তুত থাকবে।
অ্যান্ডে মাওরিচ তাঁর 'দি আর্ট অফ ম্যারেজ' গ্রন্থে বলেছেন --
"কোন বিবাহিত মানুষ সুখী হতে পারে না যদি না সেই আনন্দে দুজনেরই সমান ভাগ থাকে।এটা কখনোই সম্ভব নয় যে দুজন মানুষের ধ্যান- ধারণা, মনোভাব সবই একই রকম হবে।"
হ্যাঁ, এটা মাথায় রাখা প্রয়োজন যে, আমার পাশের মানুষ টা পুুরোপুরি আমার মনের মতো হবে না, কিন্তু আমি তাঁর মনের মতো হওয়ার চেষ্টা করব। সে কীসে ভাল থাকে, আমি কি করলে সে খুশি হয়, আমার কোন ব্যবহারে সে আনন্দ পাচ্ছে, আমার কোন কাজে বা কোন কথায় সে কষ্ট পাচ্ছে কিংবা তাঁর মন কিসে খারাপ হচ্ছে বা ভাল হচ্ছে , এগুলো যদি আমরা দুজনেই দুুুু'জনার প্রতি লক্ষ্য রাখি তাহলে সম্পর্ক টা খুব সহজ সরল হয়ে উঠবে।
চিত্র সূত্র- pixabay.com
আমরা বলি জীবন সঙ্গিনীর সঙ্গে বন্ধুত্ব পূর্ণ সম্পর্ক তৈরি করা প্রয়োজন। এই কথা টা বলি বটে কিন্তু এর গভীর অর্থ কখনো উপলব্ধি করি না। একজন প্রিয় বন্ধুর সঙ্গে আমরা যে ভাবে সমস্ত কথা শেয়ার করি, তার সঙ্গে যেমন কোন আড়াল আবডাল থাকে না, ঠিক তেমনি ভাবে কি আমরা আমাদের জীবন সঙ্গিনীর সঙ্গে মিশি! যদি মিশি তাহলে সে সম্পর্ক মধুর হতে বাধ্য।
আমরা যতই আধুনিক হই না কেন, যে স্ত্রী তাঁর স্বামীর মন বুঝে চলতে পারবে, সে সংসার তত সুখী হবে। কোন সম্পর্ক সুন্দর, সুস্থ রাখতে স্ত্রীদের ভূমিকা অপরিসীম। কারণ একটি মেয়ে যতটা ত্যাগ স্বীকার করতে পারে, যতটা নরম হতে পারে একটি ছেলে সেটা পারে না। কিন্তু ছেলেদের মন ও খুব নরম। তবে ওরা কোন বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে লজ্জা করে বা ভয় পায়।
একটি মেয়ে একটি ছেলের জীবন অমূল পাল্টে দিতে পারে। স্ত্রীর সহানুভূতি সম্পূর্ণ হাত একটি ছেলেকে সাফল্যের শীর্ষতম স্থানে পৌঁছায়। আবার একটি ছেলে যদি ইচ্ছা করে তাহলে তাঁর স্ত্রীর জীবন নতুনে মুড়ে দিতে পারে। এর জন্য প্রয়োজন দুজন দুজনকে বোঝা, আত্মার সঙ্গে আত্মার মিলন ঘটানো। স্বামী-স্ত্রীর দুজনের মিলিত আকাঙ্খাই স্বামীর সাফল্যের পথ নির্দেশিত হয়, এক্ষেত্রে উচিত স্বামী কে প্রেরণা জোগানো, আর স্বামীর কর্তব্য কোন সুদূর প্রসারী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা।
স্বামী স্ত্রীর ভালোবাসা শুধু মাত্র প্রেমের প্রসন্ন দৃষ্টির মধ্যেই থাকে না-- আদর্শ দম্পতির সর্বশ্রেষ্ঠ প্রেম আর ভালোবাসা হল পরস্পর হৃদয় কে মন কে জানতে চাওয়া বুঝতে চাওয়া।
আরও পড়ুন: স্বামী স্ত্রীর ভালোবাসা কেমন হওয়া উচিত?
একজন জীবন সঙ্গী কতটা সাবলীল কতটা বন্ধুত্বপূর্ণ হওয়া উচিত, তার কিছু উদাহরণ দেব---
এখন যে কাহিনী টি বলব সেটি হল ঊনিশ শতকের শেষের দিকের। একজন মিস্ত্রি আমেরিকার মিশিগান রাজ্য ইলেকট্রিক লাইট কোম্পানী তে কাজ করতেন। প্রতিদিন দশ ঘন্টা কাজ করে সে মাত্র এগারো ডলার উপার্জন করতেন।কিন্তু রাতে বাড়ি এসে বিশ্রাম না নিয়ে সে বিশেষ এক ধরনের ইঞ্জিন তৈরির কাজে ব্যস্ত থাকতেন। তাঁর সেই কাজের কেউ দাম দিত না, বা কেউ বিশ্বাস করত না যে সে ঐ কাজে জীবনে কখনো সফলতা পাবে।
কিন্তু একমাত্র তাঁর স্ত্রী বিশ্বাস করত যে তাঁর স্বামী একদিন অবশ্যই সফল হবেন। তাঁর শত কাজের মধ্যেও সে তাঁর স্বামী কে এই কাজে সাহায্য করতেন। স্ত্রীর এই অসামান্য ভূমিকা স্বামীর মধ্যে এনেছিল আত্মবিশ্বাস ও অনুপ্রেরণা।
চিত্র সূত্র- pixabay.com
অবশেষে ১৮৯৩ সালে এক বিচিত্র ঘটনা সকলকে অবাক করে তোলে। একদিন পাড়াপড়শিরা ক্রমাগত কিছু অদ্ভুত শব্দ শুনতে পেয়ে আশ্চর্য হয়ে গেল।তাঁরা পথের দিকে তাকিয়ে দেখে সেই পাগল যুবকটি ও তাঁর স্ত্রী ঘোড়াবিহীন একটা গাড়িতে করে রাস্তা দিয়ে চলছে। তখন ঘোড়া ছাড়া গাড়ি যে চলতে পারে সেটা গ্রামের মানুষের ভাবনার বাইরে ছিল। তাই তাঁরা নিজের চোখকেই যেন বিশ্বাস করতে পারছে না।
পরিশ্রম, প্রচেষ্টা এবং পাশের মানুষটার শক্ত হাতের দ্বারা জন্ম নিয়েছিল একজন অনন্য প্রতিভাধর। এই অসীম প্রতিভাধর যুবকটি হলেন- হেনরি ফোর্ড ।যিনি মোটরগাড়ি আবিষ্কার করে সারা বিশ্বে আলোড়ন সৃষ্টি করেছিলেন। তিনি বলতেন , আমার আমি কে আবিষ্কার করতে সক্ষম হয়েছি আমার পাশের মানুষ টার জন্য।
হ্যাঁ, জীবন সঙ্গিনী এমনই হওয়া উচিত।
এবারে যে ঘটনা টি উল্লেখ করব, সেটি আপনাকে গালে হাত দিয়ে গভীর ভাবনার জগতে টেনে নিয়ে যেতে বাধ্য করবে। এই কাহিনীটি ১১ নভেম্বর ২০১৮ সালের এই সময় পত্রিকার সৌমী দত্তর লেখনী থেকে সংগৃহীত। এটি একদা মার্কিনমুুুলুক নিবাসী তরুণ দম্পতির রোমাঞ্চকর কাহিনী।
তাঁদের বয়স সবে আঠাশের চৌকাঠ ছুঁয়েছে, কিন্তু এই বয়সেই তাঁরা অসাধ্য সাধন করেছেন। তাঁরা শহরের আতিশয্য মোড়া, নিশ্চিত জীবনের ডোর খুলে অনিশ্চয়তার জীবনে গা ভাসিয়েছেন। আচ্ছা আপনার সঙ্গী টি যদি বলে চলো, আরাম বিলাসিতাময় জীবন ছেড়ে এক অনিশ্চিত জীবনের খোঁজে চলে যায় সারা জীবনের মতো, আপনি কি তাঁর কথায় রাজি হবেন? অবশ্য আমার সঙ্গী আমাকে বললে আমি সত্যিই ছুটব। চলুন মূল গল্পটি আগে শুনি---
এই বাস্তব গল্পের নায়ক নায়িকা জন আর জুলি। জুলি ফ্রিল্যান্স ইলাস্ট্রেটর, ডিজাইনার ও। সে বাচ্ছাদের জন্য বেশ কয়েকটি ভেগান বইয়ের অলংকরণ করেছেন। জন ও একটি ভাল চাকরি করে। কিন্তু হঠাৎ তাঁদের এই ইট-কাঠ-পাথরের জীবন অসহ্য হয়ে উঠল। তাঁরা প্রথাগত জীবন যাপন থেকে মুক্তি পেতে চাইছিল। যেখানে অফিসের কোন তাড়া নেই,নেই ডেডলাইনের চাপ। দিনগত পাপক্ষয় সেরে ঘরে ফেরার ক্লান্তি নেই, কাছের মানুষটাকে সময় দিতে না পারার অভিযোগ নেই। এ যেন দুজনে কূজনে একান্তে নিভৃতে বাস। এ যেন এক স্বপ্নের ঘোর। এক- দু'দিনের কষ্টার্জিত ছুটি নয়, এ সফর - জীবন চিরতরে।
হ্যাঁ, তাঁরা দুজন গাড়ি- বাড়ি সমস্ত সম্পত্তি বেঁচে বেরিয়ে পড়ে অজানার সন্ধানে। তাঁরা ভেসে যায় আদরের নৌকায়। তাঁরা জলপথে নিত্য নতুন দ্বীপে সফর, সমুদ্রের বুকেই বাকি জীবন কাটিয়ে দেওয়া উদ্দেশ্য বেড়িয়ে পড়েন।
প্রতিদিন নতুন নতুন অভিজ্ঞতা, অ্যাডভেঞ্জার। আর সেই সব অ্যাডভেঞ্জারের ভিডিও করে সপ্তাহান্তে আপলোড করা ইউটিউব চ্যানেল এ। জন আর জুলির নিজস্ব ওয়েবসাইট " স্যাগিসিজ " এ নিজেদের এই অ্যাডভেঞ্জারের খুটিনাটি সাজিয়ে রাখে। একবার ভাবুন কতটা চমকপ্রদ।
২০১৭ -এর মাঝামাঝি একটি ৩৫ ফুট ৩ ইঞ্চি লম্বা আর ১২ ফুট চওড়া সেলবোটটার নিয়ে বেড়িয়ে পড়েন। তাঁদের এই সুমুদ্র- সফরে খরচ নেহাত কম নয়। তাঁরা এই খরচ সামলায় ইউটিউব ভিডিও আপলোড করে। অবশ্য তাঁদের বাড়ি ভাড়া, সম্পত্তির কর, বিমার খরচ কিছুই নেই। সেলবোটে সোলার প্যানেল থেকেই বৈদ্যুতের জোগান আসে, ফলে বিদ্যুৎ বিলের প্রশ্ন নেই। খরচ কমাতে অত্যাধুনিক কোন গ্যাজেট রাখে না।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে সমুদ্রের বুকে ইন্টারনেট সংযোগ পান কী করে। তাঁরা সাধারণ লোকাল মোবাইল ইন্টারনেট ব্যবহার করে, আর প্রত্যন্ত স্থানে ভরসা ওয়াইফাই। আমার সব চেয়ে ভাল লেগেছে, তাঁরা খরচ কমাতে সেকেন্ড হ্যান্ড জামাকাপড় ব্যবহার করে।
তাঁরা আজীবন এভাবেই সমুদ্রের বুকেই জীবন কাটাবে স্বপ্নের মতো। বয়স হলে কী হবে, তা নিয়ে ভাবেন না দুই তরুণ তুর্কী। তাঁরা জানিয়েছেন, এই ইট-কাঠ-পাথরের জগতে আর কোন দিন ও ফিরবে না। তাঁরা সব পিছুটান ছেড়ে ভাসিয়েছেন তাঁদের 'আদরের নৌকা ', যার কূল নাই, সীমাা নাই--- অথৈ দরিয়ার শুধু পানি আর পানি'------।
না, আপনাকে এতো কিছু করতে বা এতোটা ঝুঁকি নিতে আমি বলছি না। তবে পাশের মানুষ টার মন বুঝে, তাঁর সুখ দুঃখের সঙ্গী হলে কেমন হয়? কেউ কারো উপরে কিছু চাপিয়ে না দিয়ে, নিজের ইচ্ছা মত অন্য জন কে চলতে বাধ্য না করে একে অপরের মতামত কে প্রাধান্য দিলে কেমন হয়।
আমার ব্যক্তিগত জীবন থেকে এটুকু বলতে পারি, দুটি মানুষের যদি সুন্দর, স্বচ্ছ মানসিকতা থাকে, তাহলে জীবন টা বড় সুন্দর। আমরা কখনো কে কতটা কার জন্য কি করলাম বা জীবনে কি কি ত্যাগ করলাম তার হিসাব রাখি না। কেবল এটুকু মাথায় রাখি দুজনে ভাল থাকব, সঙ্গে পরিবারের সবাই কে সুখে রাখব। তার জন্য দুজনেই ত্যাগ স্বীকার করতেও প্রস্তুত। সবাই কে ভাল রাখতে গিয়ে আমাদের জীবনের অনেক স্পেশাল মূহুর্ত হারিয়ে যায়।
আজ আমি নিজেকে যেটুকু এগিয়ে নিয়ে যেতে পেরেছি বা পারছি তার সম্পূর্ণ অবদান আমার পাশের মানুষ টার। তাই নিজের জীবনের ছোট্ট ছোট্ট অভিজ্ঞতা দিয়ে এটুকু বলতে পারি, জীবন বড় সুন্দর, যদি একে অপরের পরিপূরক হয়ে ওঠা যায় তবে। কাছের মানুষের ভালোবাসা ছাড়া জীবন অর্থহীন।
চিত্র সূত্র- pixabay.com
আসুন এবার জানি, উপযুক্ত জীবন সঙ্গীর কিছু বৈশিষ্ট্য-------
#1. একে অন্যের প্রতি মনের যত্ন নেওয়া:
একে অপরের প্রতি সহমর্মিতা, একজন অন্যজনের মনের সব কথা বুঝতে পারা, আমার কিসে ভালো হবে সেটা না ভেবে আমাদের কিসে ভালো হবে সেটা দেখাই হল, সুখে জীবন যাপন করার মূল রহস্য।
মনের যত্ন নেওয়া উচিত পাশের মানুষ টার, মন ছুঁয়ে যায় এমন কথা যদি বলে আমার প্রিয় মানুষ তাহলে বাঁচ তে ইচ্ছে করে বহু দিন।
আপনি খেতে বসেছেন দুপুরে, পাশে আছে প্রিয় মানুষ টি। সারাদিন ধরে আপনার প্রিয় কোন খারাপ যত্ন করে সে রান্না করেছে। আপনি যদি হঠাৎ করে আপনার হাত টা তাঁর মাথায় ছুঁয়ে দেন, তাঁকে আলতো করে বুঝিয়ে দেন, আপনি আজ কতটা খুশি হয়েছেন নিজের প্রিয় খাবার টি পেয়ে। বিশ্বাস করুন এমন খাবার আপনি নিত্যদিন পেতে থাকবেন।
সুস্থ ভাবে বাঁচ তে গেলে এগুলোর খুব প্রয়োজন। এগুলিই তো মনের সুখ। বাঁচার আপার আনন্দ। কোন একজন নয়, দুজন হয়ে ওঠো, দুজনের বাঁচার ট্যাবলেট।
#2.একে অপরের প্রতি দৃষ্টি ভঙ্গি থাকুক সুস্থ:
একটি সম্পর্কের মধ্যে যদি কাঁদা ছোড়া ছুড়ি হয়, তাহলে সে সম্পর্কের মধ্যে কোন প্রাণ থাকে না। বর্তমানে অসুস্থ সম্পর্ক চারিদিকে বিদ্যমান। একে অপরের ছোট করে, নিজের মতকে প্রাধান্য দেওয়া সম্পর্কের মধ্যে উঁই ধরানোর সমান।
পাশের মানুষ টার প্রতি দৃষ্টি থাকবে মায়াবী, সে হবে আমার নিজের আত্মা। সেই মানুষটি যেন আমাকে চোখে হারায়, সে যেন আমাকে ভরসা করে, আমার কথায়, আমার ব্যবহারে তাঁর যেন আমার প্রতি স্নেহ তৈরি হয় এগুলো মাথায় রাখতে হবে দুজনেরই।
আমার কাজ, আমার কথা, আমার আচরণ তাঁর দৃষ্টি তে স্বচ্ছতা আনবে আমার প্রতি। তবেই সুন্দর সম্পর্ক বজায় থাকবে।
#3.দুজনের মূল্যবোধ:
দুটি মানুষের মধ্যে মূল্যবোধ, কোন বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়া, কোন বিষয় নিয়ে গভীর আলোচনা করা তখনই সম্ভব যখন দুজনেই হবে সমকক্ষ।
একজন মানুষ যদি কোন বিষয়ে ভুল কথা বলে তাহলে পাশের মানুষ টার উচিত তাঁর ভুল সংশোধন করে দেওয়া, তাঁকে উপহাস না করা, তাঁর হাতে হাতটি রেখে সঠিক টা বোঝানো-- এভাবেই মূল্যবোধের সূচনা হয়। এভাবেই একজন আর একজনের মূল্যবোধ তৈরি করতে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতে পারে। সবার যে সমান মূল্যবোধ থাকবে তা কিন্তু নয়। তবে চেষ্টা করলে পাশের মানুষ টাকে নিজের ভাবনা চিন্তার সামিল করে নেওয়া যায়।
এতে লাভ হয় দুজনেরই। তবে যাঁকে বোঝানো হচ্ছে তাঁর মধ্যে বুঝার ক্ষমতা টা থাকতে হবে।
#4.মানসিক পরিপক্বতা:
সকলের মানসিক পরিপক্বতা সমান নয়।তবে শেখার ইচ্ছা থাকলে এটিও আয়ত্ত করা সম্ভব। আমি একটু কম বুঝতেই পারি, কিন্তু আমি কম বুঝে যদি বেশি বোঝার ভান করি তখনই বাঁধে সমস্যা। শুরু হয় ইগোর লড়াই।
একে অপরের প্রতি যদি বন্ধুত্ব পূর্ণ মনোভাব নিয়ে কথা বলা যায় তাহলে সম্পর্ক আপনা আপ মধুর হয়ে ওঠে। সর্বোপরি ভাল থাকব এমন ভাবনা থাকা দরকার দুজনের মধ্যেই।
মনে রাখতে হবে- নো ওয়ান ইজ পারফেক্ট।
#5.বিশ্বাসী এবং নির্ভরযোগ্য:
সম্পর্কের মধ্যে বিশ্বাস হল, সম্পর্কের আত্মা। আমার জীবনের সঙ্গী তাঁর প্রতি আমি যেন চোখ বুজিয়ে বিশ্বাস স্থাপন করতে পারি, বা আমার উপরে সে যেন চোখ বন্ধ করে বিশ্বাস রাখতে পারে এটুকু দায়িত্ব দুজনকেই নিতে হবে।
আমি হবো তাঁর নির্ভরযোগ্য খুঁটি, সে হবে সেই খুঁটির দড়ি তারপর ই তো বাঁধন টা মজবুত হবে।
চিত্র সূত্র- pixabay.com
#6. সততা:
কোন সম্পর্কের মধ্যে সততার স্থান সবার আগে। সৎ মানুষ সব কাজে জয়ী হয়, ছলনা কখনো সততা কে টপকে যেতে পারে না। তাই সম্পর্কের মধ্যে যেন কখনও ছলনার প্রবেশ না ঘটে। যদি ছলনার প্রবেশ ঘটে তাহলে তার মূল্য একদিন না একদিন ঠিক চোকাতে হবে।
তাই কোন ছলনা নয়, সম্পর্কের মধ্যে সততা রাখুন। যাতে আপনার পাশের মানুষ টা আপনার পাশে শুতে গিয়ে দ্বিধা বোধ না করে।
উপসংহার
পরিশেষে বলার, জীবন সঙ্গী কেমন হওয়া উচিত তার কোন নির্দিষ্ট ব্যাখা নেই। জীবন তো একটা সমুদ্রের মতো। যেখানে মাঝে মাঝেই ঢেউ আছড়ে পড়বে, কখনো কখনো প্রবল বেগে ঝড় উঠবে। তবে সব কিছুকেই সামলানো সম্ভব যদি, হাতে থাকে একটি শক্ত হাত।
তবে আমার ব্যক্তিগত ভাবে মনে হয়, এর জন্য পরিবারের শিক্ষা খুব গুরুত্বপূর্ণ। জীবন সঙ্গিনীর সঙ্গে কেমন আচরণ করা উচিত, তার শিক্ষা শুরু করানোর দরকার পরিবার থেকে। সঙ্গে আমাদের প্রথাগত শিক্ষার সঙ্গে সঙ্গে জীবন পরিচালনার শিক্ষাও দেওয়া উচিত।
কারণ সব শিক্ষায়, বেকার হয়ে যাবে যদি জীবনে, মনে সুখ না থাকে। আর কি করে বা কিভাবে সুখী হতে হয়, কি করলে জীবন মধুর তম হয়ে উঠবে তার জন্য শিক্ষা দেওয়া উচিত সব কিছুর আগে। কিন্তু আমরা এটাতেই বড্ড অবহেলা করি, যাঁর মাশুল নিজেকেই গুনতে হয় আজীবন।
আমি আবারও বলছি, আমার জীবন সঙ্গী কেমন হবে এটা না ভেবে আমি কিভাবে সব জায়গায়, সব পরিস্থিতিতে পাশের মানুষ টার সঙ্গে মানিয়ে চলতে পারব, সেভাবে নিজেকে তৈরি করতে হবে। এই প্রচেষ্টা যদি দুজনেরই থাকে তাহলে কখনো কোনও সম্পর্কের মধ্যে বিবাদ বাঁধবে না এটুকু বলা যায়।
সর্বোপরি সবার প্রতি অনেক শুভেচ্ছা রইল।
ধন্যবাদ।
তথ্যসূত্র-- এই সময় পত্রিকা, ডেল কার্নেগি র রচনাবলী এবং নিজস্ব অনুভূতি।
চিত্র সূত্র-- pixabay.com
TAGS, Life partner, জীবন সঙ্গী, স্বামী স্ত্রীর সম্পর্ক
কোন মন্তব্য নেই: