ভালোবাসার মানুষ কেমন হওয়া উচিত?
ভালোবাসার মানুষ:
পৃথিবীর মধ্যে সব থেকে পবিত্রতম শব্দ হল ভালোবাসা।মানুষ থেকে পশু সবাই ই ভালোবাসার কাঙ্গাল। এই একটি বস্তু যদি কেউ জীবনে পায় তাহলে চোখ বুজিয়ে বলা যায় সে এই পৃথিবীর মধ্যে একজন ধনী ব্যক্তি। হ্যাঁ, সত্যিই তাই। বর্তমানে একজন খাঁটি ভালোবাসার মানুষ পাওয়া আর হাতে আকাশের চাঁদ পওয়া প্রায় সমান।এখন প্রশ্ন হচ্ছে-- ভালোবাসার মানুষ কেমন হওয়া উচিত?
এখন-- প্রায় ছেলে মেয়ে, নিজেরাই দেখে শুনে,তাঁর সঙ্গে মিশে -- মানে প্রেম করে বিবাহ করছে। এটা খুব ভালো একটা দিক। কারণ যে মানুষটি সংসার করবে তাঁর পছন্দ অপছন্দ টাই শেষ কথা হওয়া উচিত। যদি একান্তই সে নিজের মনের মতো মানুষ না খুঁজে পায় তাহলে আলাদা কথা। অনেকেই আছে পরিবারের পছন্দ অনুযায়ী বিয়ে করে। কিন্তু আমি মনে করি-- বিয়ে মানে তাঁর সঙ্গে শুধু একটা সম্পর্কের বাঁধনে আবদ্ধ হলাম তা তো নয়, বিয়ের মূল উদ্দেশ্য-- যৌনতা। হ্যাঁ, জীবন সঙ্গী মানেই সে একজন যৌন সঙ্গী। তাই বিয়ের আগে এই কথাটি মাথায় রেখে সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত। এখানে অনেক ভাবনা চিন্তার ব্যপার আছে, পছন্দ অপছন্দের ও ব্যপার আছে। কারণ বাবা মায়ের পরে সব থেকে মিষ্টি সম্পর্ক-- ভালোবাসার সম্পর্ক ।
চিত্র সূত্র- pixabay.com
আজকের আর্টিকেল টি লিখতে আমার সত্যিই কোন বই, পত্রিকা বা ম্যাগাজিনের সাহায্য লাগবে না। এখানে আমার বসত ঘর। আমি জীবনে এ সুখের দেখা পেয়েছি। তাই ভালোবাসার বর্ণনা দিতে আমি বড় ভালোবাসি। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, ভালোবেসে বিয়ে করলেই কি সবাই জীবনে ভালোবাসা পায়? মাঝপথে ভালোবাসা কোথাও থমকে যায় না তো? কি করেই বা বুুঝব আমি যাঁর সঙ্গে ঘর করছি সে আমার ভালোবাসার মানুষ কি না!!
এই সব প্রশ্নের উত্তর আমি আজ দেওয়ার চেষ্টা করব। এই প্রশ্ন গুলো আমার কাছে কোরা তে আসতে থাকে। সেই জন্যই আজকের আর্টিকেলের বিষয় বস্তু এটা নেওয়া।
বর্তমানে হাজার হাজার ছেলে মেয়ে ভালোবেসে, রীতিমত অনেক দিন ঘুরে ফিরে, বুঝে শুনে বিয়ে করছে। তবুও এই সম্পর্ক টা এখন তার জৌলুস হারিয়েছে। দিন দিন সম্পর্ক টা প্রহসনে পরিণত হচ্ছে। ফলে বিয়ের প্রতি অনেক মানুষের আস্থা উঠে গেছে। এর কারণ কি?
আমি আজকে কোন গবেষণার তথ্য তুলে ধবর না, আমি আমার দেখা বাস্তব কিছু উদাহরণ দেব, যেগুলো জীবন্ত সত্যি।
রমেশ আর রমা ( নাম পরিবর্তিত) টানা সাত বছর প্রেম করার পরে বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নিল। এবং বাড়ির অমতের সত্ত্বেও বিয়ে টা করল। প্রথম কিছুদিন ভালোই ছিল, সব কিছুই ঠিকঠাক চলছিল। কিন্তু কিছুদিন যেতে না যেতেই তাঁদের এখন মনে হচ্ছে তাঁরা একে অপরের পরিপূরক নয়। বাড়ির কথা না শুনে মস্ত বড় ভুল করেছে। ও আমার ঠিক মনের মতো নয়। আমি যেমন টা ভেবেছিলাম, ও ঠিক তার উল্টো। এতোদিন দূরে ছিলাম তাই বুঝতে পারি নি। ইত্যাদি ইত্যাদি ইত্যাদি।
এখন প্রশ্ন হল, এতোদিন পরে এরা কেন এমন ভান খাওয়ার মতো, মাতালেন মতো কথা বলছে? এ কথা বাড়ির লোক শুনলে তাঁরা তো দু হাত তুলে আনন্দ করবে! তাঁরা বলবে -- ঐ জন্যই তো বড়দের কথা শুনতে হয়, একটু আমাদের কথার গুরুত্ব দিতে হয়, ব্লালা ব্লালা ব্লালা।
আসলে, সমস্যা টা কোথায় জানেন? এরা বিয়ের আগেই কোটি কোটি বার সম্পর্ক থেকে বেড়িয়ে যাওয়ার কথা ভেবেছে। এবং মাঝে মাঝেই ,এখন একটা শব্দ উঠেছে না-- "ব্রেক আপ" এটাও করেছে!! আমি ভীষণ দুঃখের সঙ্গে বলতে বাধ্য হচ্ছি, যাঁরা কথায় কথায় ব্রেক আপ, ব্রেক আপ করে তাঁদের সম্পর্ক টা কখনোই সুস্থ থাকে না। এই একটা শব্দ সম্পর্কের মধ্যে ঘুন ধরিয়ে দেয়।
যাঁকে আমি প্রাণের থেকেও বেশি ভালোবাসি তাঁর সঙ্গে বিচ্ছেদের কথা কখনোই মুখে আসবে না। হ্যাঁ, মাঝে মাঝে একটু মান অভিমান হতেই পারে। তাই বলে তাঁর সঙ্গে কথা না বলে দিন কাটানো! এটা আমি জীবনেও ভাবতে পারি নি। ঝকড়া করে দিন কাটানো যায়, কিন্তু কথা না বলে নয়। যদিও ভালোবাসতে বাসতে এমন একটা মায়া তৈরি হয়ে যায় যে, পরে ঝকড়া টা থেমে যায়। তখন ঝকড়া নয়, মাঝে মাঝে একটু অভিমান আসে।
আসলে, ওরা দুজনে যখন একত্রিত হয়েছে, তখন কেউ কারো জায়গা থেকে এক চুল ও নড়তে চাইছে না। যেমন, মেয়েটি চায় না, যে ওর বর বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিয়ে ঘুরে বেড়াক, মায়ের সঙ্গে ( ওর কথা অনুযায়ী) আদিখ্যেতা করুক, ও, ওকে ছাড়া অন্য কাউকে গুরুত্ব দিক-- ইত্যাদি।
ওদিকে ছেলেটির কথা, আমি যখন শুনলাম, তখন মেয়েটির কথার সঙ্গে এর কথার মিল ই খুঁজে পেলাম না। এখানে আমার যেটা মনে হয়েছে- মেয়েটি নিজেকে সেভ রাখতে অনেক মিথ্যা কথা বাড়িয়ে বাড়িয়ে বলেছে। কি কি বলেছে সেই প্রসঙ্গে আমি আর গেলাম না। আমি শুধু এটুকু দেখে অবাক হলাম-- ওদের এতো বছরের প্রেমের সম্পর্ক কিন্তু কেউ কাউকে সম্মান দিয়ে কথা বলল না!! দুজনেই নিজেকে ভালো প্রমান করতে ব্যস্ত।
কিন্তু ভালোবাসার মানুষ কে নিয়ে কোন অপ্রীতিকর কথা বলতে কি ইচ্ছা করে? না এটা উচিত? দুজনের সম্পর্ক যখন নালিশের পর্যায়ে পৌঁছায় তখন সেটা আর সম্পর্ক থাকে না, সম্পর্ক টা বোঝা হয়ে যায়। না, ওদের সম্পর্ক টা এখনো শেষ হয়নি তবে ওদের সম্পর্কের ভবিষ্যত, ভবিষ্যত ই বলতে পারবে।
আর একটি সম্পর্ক আরও অদ্ভুত! তাঁরা দুজনে দুবছর প্রেম করার পরে-- রেজেস্ট্রি বিয়ে করেছে--। কিন্তু কেউ কারো সঙ্গে আদেও থাকবে? কি থাকবে না, সেটা নিয়ে পড়েছে দোটানায়। কারণ এখনই দুজনের মধ্যে বোঝাপড়া টা বড্ড দুর্বল। কিন্তু দুজনেই খুব ভালো মানুষ। শুধুমাত্র কিছু বিষয় নিয়ে, দুজনের মধ্যে মতভেদ ঘটে। আমি এটা সলভ্ অনেক চেষ্টা করেছি। যখন দুজনকে বোঝায়, তখন সব কিছু ঠিক হয়ে যায়। আবার একটা বিষয় নিয়ে পুনরায় শুরু হয়ে যায়। আমি বর্তমানে হাল ছেড়ে দিয়েছি। তবে এখনো দুজন দুজনকে না শোধরালে সমস্যা হবেই। এই সমস্যার সমাধান বাইরের কেউ করতে পারে না। বাইরের মানুষ সমস্যার সূত্র টা ধরিয়ে দিতে পারে, এর বেশি কিছু না।
আসলে, ভালোবাসার মানুষের প্রতি কোন অভিযোগের আঙুল ওঠে না, তাঁকে কষ্ট দিয়ে কথা বলতে মন চাই না, তাঁর থেকে দূরে থাকার কথা ভাবা যায় না, তাঁর সঙ্গে ঝকড়া করেও তো সুখ। ঝকড়ার পরেই তো এক রাশ ভালোবাসা প্রাপ্যে হয়।ভালোবাসাতে কখনো হিসাব নিকাশ হয় না, আমি আমার সব টা তাঁকে দেব, আমার দেওয়া যদি খাঁটি হয়, তাহলে, আমি দেওয়ার দ্বিগুণ পাব।
বর্তমানে ভালোবেসে বিয়ে করলেই তাঁরা যে সুখী দম্পতি হবেই, এটা বলা মুশকিল। এর কারণ হল ভালোবাসার সঠিক অর্থ বুঝতে না পারা। যদি কেউ কাউকে সত্যিই ভালোবাসে তাহলে সে কখনোই তাঁর ভালোবাসার মানুষটার সম্পর্কে, অন্য কারো কাছে এক চুল নিন্দা করবে না, বা অন্য কাউকে তাঁর মনের মানুষ কে নিয়ে নিন্দা করতেও দেবে না।
আমি মনে করি, নিজেদের এই মিষ্টি সম্পর্কের মধ্যে একটু আধটু মান অভিমান হলেও সেটা অন্য কাউকে বলতে নেই। আমার যখন তাঁর প্রতি রাগ হবে তখন প্রাণ খুলে তাঁর সম্পর্কে অন্যের কাছে নিন্দা-মন্দ করলাম।কিন্তু যখন আবার আমরা সুন্দর মূহুর্ত উপভোগ করব তখন যাঁর সঙ্গে এতো কিছু বলে এলাম সে আমাদের সম্পর্ক টা নিয়ে হাসাহাসি করবে, আমাদের সম্পর্ক টাকে মূল্যহীন ভাববে। তাই এটা করা উচিত নয়।
তাছাড়া, এমন মানুষ খুব কমই পাওয়া যায়, যে তুমি কারো সঙ্গে নিজের দুঃখের কথা বলছ আর সে তোমাকে ভালো বুদ্ধি দিচ্ছে। বেশিরভাগই মানুষ ই সঠিক রাস্তা দেখায় না।
এছাড়া, একটা জিনিস আমাদের মাথায় রাখা উচিত, এই সম্পর্কটার উপর আমার পুরো ভবিষ্যত জড়িয়ে, তাই এখানে কোন পাগলামি করা যাবে না। প্রতিদিন শরীরের যেমন যত্ন নেওয়া উচিত, তেমনি ভালোবাসার মানুষটির প্রতিও যত্নশীল হওয়া উচিত। আমি তাঁকে এতোটা ভালোবাসব যে সে আমাকে চোখে হারাতে বাধ্য হবে। কখনো ভালোবাসার মানুষ কে অবজ্ঞা করতে নেই, অন্য কারো সামনে বা আড়ালে তাঁকে নিচু প্রতিপন্ন করতে নেই। আজকেই গুগুল এ দেখলাম-- কানাডার একজন দম্পতি-- তাঁর স্বামী কে কুকুরের বেল্ট গলায় জড়িয়ে বাজারে গেছে।কারণ ওখানে এখন লকডাইন চলছে। একমাত্র নিজের পোষ্য কে নিয়ে বাইরে বার হওয়ার নিয়ম আছে। তাই স্বামী কে কুকুর বানিয়েছে। অনেক মহিলারা দেখলাম, স্বামী কে প্রশংসা করেছেন। তাঁরা বলছেন স্বামী এমনই হওয়া উচিত। যে স্ত্রীর সব কথা শুনে চলবে।
সত্যি বলছি, আমার কপালে এমন স্বামী জুটলে আমিই তাঁকে বিদায় করতাম। যে ছেলের কোন নিজস্ব ব্যক্তিত্ব নেই, সে ছেলেকে কোন মেয়ে সম্মান করে না। ঐ কুকুরের বেল্ট গলায় ঝুলিয়ে ঘোড়ায়। অনেক মেয়ের আমার কথায় আপত্তি থাকতে পারে। কিন্তু তবুও আমি এ কথায় বলব।
যাইহোক, এবার চলুন জেনে আসি--
ভালোবাসার মানুষ কেমন হওয়া উচিত?
#1. তাঁর কাছে যাওয়ার জন্য মনটা ছটফট করবে:
একটা সময় ছিল যখন আমি দশ মিনিট চোখের দেখা দেখার জন্য ছটফট করতাম। আমরা বাসে তিন+ তিন ঘন্টা যাতায়াত করতাম মাত্র আধঘণ্টা এক সঙ্গে কিছুটা সময় কাটানোর জন্য। ঐ টুকু সময়ই ছিল আমাদের কাছে সোনার থেকেও দামি কিছু। কি অপূর্ব মুহুর্ত, কি আদর মাখা সময় তা মুখের ভাষায় বলা সম্ভব নয়।
চিত্র সূত্র- pixabay.com
কিন্তু প্রশ্ন হল-- প্রেম করার সময় তো এমন অনুভূতি সবার হয়! এতে আর আশ্চর্য হওয়ার কি হল? প্রেমে পাগল লোকজন এমনই বলে তাই না?
না, একটু পার্থক্য আছে। আমরা দশ বছর এই সম্পর্কের মধ্যে আছি। কিন্তু আজও কোনদিন দশ মিনিটের জন্যও আমরা একে অপরের কাছে থাকতে বিরক্ত বোধ করিনি। এখনো এমন কোন ঘন্টা আমাদের উপর দিয়ে যেতে পারিনি যে ঘন্টাতে আমাদের মধ্যে ঝকড়া বাসা বেঁধে আছে। এর রহস্য একটাই-- আমাদের বোঝাপড়াটা ভীষণ মজবুত। এ নিয়ে অনেক কাহিনী আছে। আমার জানাশোনা যাঁরা এই আর্টিকেল টি পড়বে তাঁরা কিছুটা জানে। সময় হলে আমি সবটা জানাবো। কিন্তু এখনো সে সময় আসেনি। বিগত কিছু বছর আমাদের উপর দিয়ে অনেক ঝড় ঝাপটা বয়ে গেছে এখনো যাচ্ছে। তবে আমরা দু'জনে দু'জনার হাতটি শক্ত করে ধরে আছি।
তাই বলছি-- ভালোবাসার মানুষ এমনই হবে যাঁকে কাছে পাওয়ার জন্য মন ব্যাকুল হয়ে থাকবে। যে সর্বক্ষণ পাশে থাকলেও বিরক্ত আসবে না। আগের আর্টিকেলেও বলেছি, আমাদের মধ্যে একটি ভ্রান্ত ধারণা আছে, আমরা মনে করি বিয়ে হয়ে যাওয়া মানেই কেল্লা ফতে। আর নিজেকে পরিপাটি করার প্রয়োজন নেই, শরীরের যত্ন নেওয়ার দরকার নেই। শরীরের মেদ জমছে জমুক আমার তো বিয়ে হয়ে গেছে। কিন্তু এটা একটা ভীষণ ভুল ধারণা।নিজের মন ভালো রাখতে, নিজেকে আনন্দে রাখতে, সব সময় তরতাজা মনোভাব রাখতে, সাজের প্রয়োজন আছে। এতে সংসার ও সুস্থ থাকে। আশা করি আমি কি বোঝাতে চাইছি সেটা সবাই বুঝতে পারছে। নতুন করে আজকে আর এ বিষয়ে গেলাম না।
#2. টুকরো কথাও তাঁর সঙ্গে শেয়ার করতে ইচ্ছে হয়:
ভালোবাসার মানুষ মানে, সে একজন মনের মানুষ, তাই তাঁর সঙ্গে সব কিছু শেয়ার করা যায়। আমি সব কিছু শেয়ার করি। বিশ্বাস করুন, এতে সম্পর্ক টা খুব ভালো থাকে। আপনি আপনার সব কথা তাঁকে বলুন, দেখবেন সেও আপনাকে বিশ্বাস করে সব মনের কথা খুলে বলছে। অনেক শিক্ষিত মানুষেরও এমন ধারণা আছে যে, বরের সঙ্গে সব বলতে নেই , বা বৌ কে কখনোই সব বলতে হয় না। বাবা-- আমরা তো দম আটকে মরে যাব।
যখন, আপনি কথা চাপতে থাকবেন, তখন দেখবেন মনের মধ্যে, একটা ভয় বাসা বাঁধতে থাকবে, এই ভয় থেকেই তাঁর কাছ থেকে দূরে সরতে থাকবেন, আপনার নিজের ই অজান্তেই। অবশ্য এই বলার রাস্তা টা দুজন দুজনকেই করে দেওয়া উচিত। সম্পর্ক টা তেমন ভাবেই তৈরি করতে হবে।
এই প্রসঙ্গে একটা মজার কথা শেয়ার করি। আমি আজও পর্যন্ত একা একা একটা টিপের পাতা ও কিনি না। কিছুদিন আগে, আমাদের পাশের ফ্ল্যাটের এক বৌদি জামা কাপড়ের ব্যবসা করছে। সে আমাকে শীতের কিছু পোশাক দেখিয়েছে। আমি হোয়াটস অ্যাপ ছবি তুলে ওকে দেখিয়েছি। তো ও বলছে, একটা চাদর নাও, আর এগুলো নিতে হবে না খুব একটা ভালো লাগছে না। আমি সেই মতো একটা চাদর নিয়েছি, এবং বাকি গুলো নেব না বলেছি। উনি বুঝতে পেরেছেন এটা ঠিক আমার বর বলেছে, না নিতে তাই আমি নিচ্ছি না।
আমি দেখতে পাচ্ছি, উনি বেশ রেগে রেগে বলছে, শোনো তোমাকে একটা কথা বলি-- নিজের নিজস্ব একটা স্পেস রাখবা, তা না হলে একটা সময় দম আটকে আসবে। বর কে বেশি মাথায় তুলতে নেই- নিজের পছন্দের মূল্য নিজে দিতে হয়। ইত্যাদি ইত্যাদি। আমি ওর সঙ্গে সব টা বললাম এবং বাদবাকি জিনিস গুলো এক প্রকার নিতে বাধ্য হলাম। এই ঘটনা উল্লেখ করলাম এই কারণে যে, আমরা কিছু মেয়ে মনে করি -- পাশের মানুষটার সঙ্গে সব কিছু শেয়ার করা মানে, নিজের কোন স্বাধীনতা থাকে না।
না, গো এটা কে কখনো স্বাধীনতা বলে না। স্বাধীনতা অন্য জিনিস। আমি তাকে সঙ্গে করেও স্বাধীন ভাবে বাঁচ তে পারি। তাঁকে পাশে বসিয়ে দিগন্তে ঘুরতে পারি, তাঁকে বুকে করে সব কিছু করতে পারি। তবে সবটাই নির্ভর করে দুজনের মনোভাবের উপরে।
এই প্রসঙ্গে, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বিখ্যাত উক্তি বলতে ইচ্ছে করছে--
" আমার তৃষ্ণা তোমার সুধা
তোমার তৃপ্তি আমার সুধা।"
#3.পরিবর্তন করার চেষ্টা না করা:
সে যেমন তাঁকে তেমন ভাবে গ্রহণ করা উচিত। নিজের মনের সুখের জন্য, তাঁকে পাল্টে কি লাভ? বরং ক্ষতি হয়। আমি আমার স্বামীর মন বুঝে তাঁর মনের মতো হওয়ার চেষ্টা করেছি, ঠিক একই ভাবে ও কিছুটা নিজেকে পাল্টেছে। আমরা কেউ কাউকে পরিবর্তন করার চেষ্টা করিনি।
আমি এটা লক্ষ্য করেছি, ওর কোনটা ভালো লাগে, ও দেখেছে আমি কি ভালোবাসি। তাইতো পকেটের এক কোণে, ছোট্ট এক প্যাকেট বাদাম আমার জন্য ঠিক আসে। কারণ ওটা খেতে আমি ভালোবাসি।
ভালোবাসার মানুষ তো এমন ই হওয়া দরকার। কেউ কারো উপরে কিছু চাপিয়ে দেবে না। কিন্তু নিজের ইচ্ছায় বহন করবে অনেক কিছু। এ সম্পর্ক এক অন্য সম্পর্ক। যা তুলনা করা যায় না।
হুমায়ূন আহমেদ বলেছিলেন---
" মাঝে মাঝে আত্মার সম্পর্ক রক্তের সম্পর্ককেও অতিক্রম করে যায়।"
এ যেন সাত রঙের রামধনু--।
চিত্র সূত্র- pixabay.com
#4. ঈর্ষা বোধ থাকবেই:
এ যেন সেই ক্যাটবেরির মতো-- এ স্বাদের ভাগ হবে না। হ্যাঁ, ভালোবাসার মানুষ কখনোই চাইবে না, তুমি অন্য কারো সঙ্গে হেসে কথা বলো। যেমন আমি কখনোই চাইব না, আমার স্বামী অন্য কোন নারীর সঙ্গে কথায় কথায় গল্পের আসর বসাক। অবশ্যই তাঁর প্রতি বিশ্বাস আছে, কিন্তু তবুও এটা ঠিক ভালো লাগে না। ও কেবল আমার। ঠিক একি রকম মনোভাব সেও রাখবে।
আর একটা কথা বলি, এটা আমি কালকে পড়লাম। একটা গবেষণায় দেখা গেছে-- কোনও মানুষ তাঁর বিপরীত লিঙ্গের মানুষের সঙ্গে শুধু বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের পর্যায়ে থাকতে পারে না। ক্রমাগত একে অপরের সঙ্গে মিশতে মিশতে কখন নিজের অজান্তে প্রেমে পড়ে যাবে, সেটা নিজে বুঝতেও পারা যাবে না।
তাই আগে ভাগে এই রাস্তা ত্যাগ করাই ভালো।
আরও পড়ুন: দাম্পত্য জীবনে সুখী হওয়ার উপায়
#5.ওর জন্য সব কিছু করা যায়:
হ্যাঁ, ঐ মানুষ টার জন্য পৃথিবীর যে কোন চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হওয়া যায়। ভালোবাসার দম অনেক । সারা পৃথিবী একদিকে আর সে থাকবে একদিকে, এটা শুধু সিনেমার ডায়লগ নয়, এটা বাস্তব।
এখানে কে খারাপ বলল, কে মন্দ বলল কিছু কানে আসে না। এখানে মন শুধু তুমি তুমি করে। এ এক ধরনের রোগ। এ হল প্রেম রোগ। যাঁর এ রোগে ধরেছে সে মরেছে।
আবার বিখ্যাত লেখক গতিয়ে বলে--
" একমাত্র ভালোবাসা সারাতে পারে সব রোগ।"
হ্যাঁ, সত্যিই তো তাই। এর জন্য লোকে দেশ থেকে দেশান্তরে চলে যায়।
#6. চোখ বন্ধ করে বিশ্বাস করা যায়:
সত্যি বলছি, ভালোবাসার মানুষ টা যদি বিষ ও এনে দেয় তাও বিশ্বাস করে খেয়ে নেওয়া যায়। এখানে কোন অবিশ্বাসের জায়গা থাকে না।
কিছু কিছু বদ মানুষ এর সুযোগ ও নেয়। তবে সত্যিই যদি সে তাঁর ,প্রিয় মানুষ টিকে ভালোবাসে তবে, সে কখনোই তাঁর কোন ক্ষতি করবে না। নিজের উপর দিয়ে হাজার ঝড় বয়ে গেলেও।
#7.তাঁর হাত টি ধরেও যেন সুখ:
ভালোবাসার মানুষ মানেই সেখানে শারীরিক সম্পর্ক থাকবে। কিন্তু এখানে ঐ সম্পর্কটাই শেষ কথা নয়। এমন এমন মূহুর্ত আসে যখন তাঁর হাতটি ধরেও শান্তি পাওয়া যায়।
পাশে হাঁটতেও কত ভালো লাগে। তাঁর আঙুলের ছোঁয়াতেও যেন একটা জাদু আছে। এই জন্যই তো লোকে প্রেমে এতো পাগল হয়।
#8. সব থেকে নিরাপদ স্থান:
মানুষ দুটি জায়গায় ভীষণ নিরাপদ অনুভব করে। এক, বাবা মায়ের কাছে। দুই, প্রিয় মানুষটির কাছে।
পাশে থাকলে যেন নিজেকে ডন ডন মনে হয়। মনে হয়, কোন বিপদ এই মূহুর্তে আমাকে ছুঁতে পারবে না।
উপসংহার
এই জন্যই আমার সবার কাছে একটা অনুরোধ,কেউ কখনো ভালোবাসার মানুষ টিকে ঠকাবেন না। এ কষ্ট সহ্য করা আর আত্মহত্যা করার মধ্যে কোন পার্থক্য নেই। ভালোবাসা খুব স্পর্শকাতর একটি বিষয়। এটাকে নিয়ে কেউ খেলা করবেন না।
টমাস কুলার বলেছেন-----
" ভালোবাসতে শেখ,ভালোবাসা দিতে শেখ।তাহলে তোমার জীবনে ভালোবাসার অভাব হবে না।"
ধন্যবাদ।
তথ্যসূত্র- নিজস্ব মতামত, উক্তি সংগৃহীত।
চিত্র সূত্র- pixabay.com
TAGS, relationships, love, ভালোবাসার মানুষ।
কোন মন্তব্য নেই: