দাম্পত্য সম্পর্ক খারাপ হলে কি করণীয়!
দাম্পত্য সম্পর্ক খারাপ হলে কি করণীয়:
দাম্পত্য সম্পর্ক সুস্থ সুন্দর রাখতে গেলে প্রথমে আমাদের কিছু বিষয়ের উপর নজর দিতে হবে। আমাদের প্রথমে খুঁজতে হবে বা জানতে হবে কেনো দাম্পত্য সম্পর্ক খারাপ হয় সেটা। একটি সম্পর্কে, যখন আমরা আবদ্ধ হই তখন সেই সম্পর্কের কাছে আমাদের অনেক আশা প্রত্যাশা থাকে। কিন্তু এই আশা প্রত্যাশা টা আমরা বেশিরভাগটাই আমাদের সঙ্গীর কাছে করে থাকি। আমি নিজে তাঁর আশা প্রত্যাশা কতটা পূরণ করতে পারছি, বা নিজেকে তাঁর কতটা পরিপূরক করে তুলতে পেরেছি এটা নিয়ে আমরা নিজেকে পর্যালোচনা করি না। ফলে আমার সঙ্গীর কাছে আমি যা যা আশা আবদার নিয়ে উপনীত হয়েছিলাম, সে সব কড়াই গুন্ডাই হিসাব না পেলে আমরা অভিযোগের সুর চড়াতে থাকি, যার ফলস্বরূপ ধীরে ধীরে আমাদের সম্পর্কের মধ্যে তিক্ততা শুরু হয়।
চিত্র সূত্র- pixabay.com
বর্তমানে সম্পর্ক খারাপ হচ্ছে, বা বেশিরভাগ সম্পর্ক খারাপের দিকে যাচ্ছে তার মূল্য কারণ হল- দুজনের মধ্যে বোঝাপড়ার বড্ড অভাব। এবং সঙ্গে আছে, একে অপরের প্রতি ছোট্ট ছোট্ট অভিযোগ। এই ছোট্ট ছোট্ট অভিযোগ গুলোই একটা সময়ের পর বিরাট হয়ে দাঁড়ায়।আমি আমার আশপাশের মানুষ এবং আমার নিকট কিছু দম্পতি কে নিয়ে, আমি আমার মতো করে তাঁদের জীবন যাপন তাঁদের সম্পর্ক, তাঁদের মনোভাব ইত্যাদি বিষয়ে পর্যবেক্ষণ করে যেটুকু বুঝেছি সেটা হল---
দাম্পত্য সম্পর্ক খারাপ হয়, তার প্রধান কারণ হল, এরা একে অপরের ভালো দিক টা কেউ কারো কাছে প্রকাশ করে না, একে অপরের গুন গুলো নিয়ে প্রশংসা করতে জানে না। কিন্তু দোষ ত্রুটি পেলে সেটা নিয়ে লেবুর মতো কচলাতে থাকে। যার ফলে সম্পর্কের মধ্যে তিক্ততার সৃষ্টি হয়।যেমন একটি উদাহরণ দিই--
আমার পরিচিত এক জোড়া দম্পতি আছে, তাঁরা যখন দুজনে মিলে মিশে থাকে ভালো থাকে তখন কিন্তু কখনো একে অপরের সঙ্গে যে ওরা ভালো আছে এটা মুখে বলে না, কিন্তু কোনো সমস্যা হলেই দুজন দুজনের গায়ে কাঁদা ছোড়াছুড়ি করতে থাকে। একদম ছোট্ট ছোট্ট বিষয় নিয়ে দুজন দুজনের প্রতি দোষারোপ করতে থাকে। এবং মাসের মধ্যে দশবার আমাকে ফোন করে বলে , আমরা আর এই সম্পর্ক কে টিকিয়ে রাখতে পারছি না, আমি এই সম্পর্ক থেকে বেড়িয়ে যেতে চাই।
একটা কথা আমি এখানে বলতে চাই, আমাদের মুখের কথা আমাদের মস্তিষ্ক দারুণ ভাবে ধরে নেয়। আমরা সচেতন ভাবে যেটা বলি অবচেতন মন আমাদের সেই দিকেই ঠেলে দেয়। আমরা যদি মুখে বারবার উচ্চারণ করি, আমি আমার সঙ্গীর সঙ্গী ভালো নেই, ওর সঙ্গে আমার থাকা সম্ভব নয়, ইত্যাদি ইত্যাদি, তাহলে সত্যি সত্যিই এমন কিছু তোমার সঙ্গে ঘটবে, যেই ঘটনা তোমাদের সম্পর্কের মধ্যে ফাটল ধরাবে। এবং সম্পর্ক টা থাকবে কি থাকবে না সেটা নিয়ে টানাটানি শুরু হয়ে যাবে ।
চিত্র সূত্র- pixabay.com
কিন্তু আমরা মুখে যদি বলি, আমি আমার সঙ্গী র সঙ্গে খুশি তে, শান্তি তে আছি, আমরা দুজনে আনন্দে আছি, ভালো আছি, তাহলে আমাদের মন তাঁর প্রতি অভিযোগ করা থেকে বিরত থাকবে। এবং তুমি নিজের ই অজান্তে তাঁকে ভালোবেসে ফেলবে। এখানে অনেকেরই মনে হতে পারে স্বামী স্ত্রী মানেই তো তাঁদের মধ্যে ভালোবাসার সম্পর্ক এমনিতেই থাকে, তাহলে নতুন করে আবার ভালোবাসা আসার কি আছে!!
আসলে এখানেই তো আমরা মস্ত বড় ভুল টা করি। তোমার ঘরে চাল আছে, কিন্তু যতক্ষণ সেই চাল তুমি রান্না না করছ ততক্ষণ পর্যন্ত যেমন সেই চাল তোমার খিঁদে নিবৃত্তি করতে পারবে না, ঠিক তেমনি তোমাদের সম্পর্ক টা ভালোবাসার কিন্তু সেই ভালোবাসা জাগিয়ে তোলার প্রধান অস্ত্র হল- আমি তোমাকে খুব ভালোবাসি, তুমি আমার জীবনে ভীষণ দামী একটা মানুষ, এই সমস্ত কথা। দুজন দুজনকে বোঝানো যে , সে আমার জীবনে কতটা মূল্যবান একজন মানুষ । ব্যস এই টুকু করতে পারলে আমাদের দাম্পত্য সম্পর্ক কখনোই খারাপ হবে না।
তুমি যদি ভালোবাসাকে অর্থ দিয়ে মাপতে যাও তাহলে তুমি কখনো তোমার দাম্পত্য সম্পর্ক কে ভালো রাখতে পারবে না। দাম্পত্য সম্পর্ক খারাপ হয়, কারণ তাঁরা কেউ কারো হৃদয় কে ছুঁতে জানে না বলে।
অনেক দম্পতি এটা বলে যে, আমার সঙ্গী আমার মনের সব চাহিদা পূরণ করে না। এখানে আমার কথা হচ্ছে, তুমি কি তোমার সঙ্গীর চাহিদার কথা ভাবো? তুমি তাঁর কাছে যেটা চাইছো সেটা কি নিজে তাঁর জন্য করো? আগেই বললাম, আমরা অভিযোগ করতে এতো ব্যস্ত থাকি যে , নিজের দিক টা আর ভাবিই না।
আরও একটা কথা মনে রাখতে হবে, আমরা একে অপরের বিরুদ্ধে অভিযোগ করতে করতে আমাদের জীবনের মূল্যবান সময় টা নষ্ট করছি। যে সময়টা আর কখনোই আমরা ফিরে পাব না, তাই দুজনের মধ্যে ভুলবোঝাবুঝি হলে সেটা একটা নিরিবিলি জায়গায় বসে একে অপরের দিকে মায়া ভরা দৃষ্টি তে তাকিয়ে দেখুন, আমি কথা দিচ্ছি সব অভিমান অভিযোগ মন থেকে চলে যাবে।
একটা সুস্থ সম্পর্ক পরিবেশের জন্য ভালবাসার বার্তা বহন করে । তাই সুস্থ থাকুন, একে অপরকে অনেক ভালোবাসুন, দেখবেন নতুন করে আবার ভীষণ বাঁচতে ইচ্ছে করছে ।
তথ্যসূত্র- নিজস্ব মতামত
ছবি- pixabay.com
কোন মন্তব্য নেই: