সুখ মানে কি?সুখী হওয়ার ১০ টি উপায় ।

 সুখ মানে কি?


                        সুখ শব্দ টি শুনলেই মন টা যেন সুখী সুখী হয়ে ওঠে, মন যেন একটু সুখ পেতে চাই। দুটি অক্ষর দিয়ে গঠিত একটি শব্দ যার মূল্য অপরিসীম। পৃথিবীর প্রতিটা মানুষই এই সুুখের সন্ধানে ঘোরে।কিন্তু বাস্তবে এর দেখা পায় গুটিকয়েক মানুষ ই।


           কারণ সুখ, শান্তি এগুলো কোন বস্তু নয়, কোটি কোটি টাকা পকেটে থাকলেও কেনা যায় না। সুখ বাইরে নয়, সুখ থাকে হৃদয়ের ভিতরে। কিন্তু মজার বিষয় হল এই হৃদয় প্রতিটা মানুষের ই আছে, কিন্তু সুখ সবার থাকে না!  এর কারণ কি?

              এর কারণ হল, অনুভূতি। সুখ কোন লক্ষ্যবস্তু নয়, এটা একটা মানসিক পরিস্থিতি মাত্র। এই পৃথিবীর যে কেউ সুখী হতে পারে যদি সে সুখী হওয়ার রহস্য ধরতে পারে তবেই। আমরা সুখ খুুঁজি বাইরে এবং বস্তুতে। যাঁর কারণ হতাশ হয়ে পড়ি। আমি সুখী কি সুখী না? এটা একমাত্র আমার অনুুুভূতি আমাকে জানিয়ে দেবে।  এবার প্রশ্ন হল অনুুুভূতি কি? অনুভূতি হল আমার মনের অস্তিত্ব মনের বন্ধু। আমাদের মনের ভিতরে দুটি অনুভূতি থাকে। ভালো অনুভূতি, খারাপ অনুভূতি। এই অনুুুুভূতি মূূূলত আসে ভাবনা থেকে। আমরা যেমন ভাবনা মনের মধ্যে স্থান দেব আমাদের অনুভূতি তেমন হবে। এবং ভালো ভাবনা, সব সময় ভালো অনুুুভব করায়। আমদের মন তখন উত্তেজনা,  আনন্দ, প্রেম ইত্যাদি বয়ে আনে। তাই আমাদের অনুভূতি  যদি সব সময় সুন্দর থাকে তাহলে আমরা সুুখের দেখা সব সময় পাব।


সুখী মন
                             সুখের অনুভূতি 
                     চিত্র সূত্র- pixabay.com 


                কিন্তু প্রশ্ন হল,  অনুভূতি কি সব সময় সুন্দর রাখা সম্ভব? 

             হ্যাঁ,  সম্ভব।  তবে তার জন্য মনের পরিচর্যার প্রয়োজন। নিজেকে আগে বুঝতে হবে, জানতে হবে। নিজের ক্ষমতা সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে হবে। আমাদের ক্ষমতা অপরিসীম। কিন্তু আমরা আমাদের ক্ষমতার এক শতাংশ ও ব্যবহার করি না! 

   আব্রাহাম লিঙ্কন বলেছেন--- 

            "বেশির ভাগ মানুষ ই নিজে যতটা সুখী হতে চায়, ততটাই সুখী হয়। "


          সুখী হতে হলে আগে বিষাদ, হতাশা ঝেড়ে ফেলতে হবে। সুখী হওয়ার জন্য দৃঢ়সংকল্প হতে হবে।  ব্যর্থ মানুষের সঙ্গ ত্যাগ করতে হবে। উদ্যমী মানুষের সঙ্গে মিশতে হবে। যে সকল পরিচিত ব্যক্তিরা ফালতু কথা বলে সময় নষ্ট করে,  আমাদের ব্যক্তি গত ব্যাপারে নাক গলায়, কোন অপ্রয়োজনীয় বিষয় নিয়ে আলোচনা করে মন কে বিক্ষিপ্ত করতে চায় তাঁদের বর্জন করতে হবে।

        নেপোলিয়ান হিল মানুষের জীবনের বারোটি সম্পদের কথা বলেছেন। যেগুলো প্রতিটি মানুষের জীবনে থাকা আবশ্যক --- 

1. ইতিবাচক মানসিকতা।

2. সুস্থ শরীর।

3.মানবিক সম্পর্কের সু-ছন্দ।

4.ভয় মুক্ত জীবন।

5. কৃতিত্ব অর্জনের আশা।

6.বিশ্বাস করার ক্ষমতা।

7.নিজের আর্শীবাদ ভাগ করে নেওয়ার ইচ্ছা।

8.ভালোবাসার জন্য ত্যাগ করা।

9.সব বিষয়ে মুক্ত মানসিকতা।

10.অন্য কে বোঝার ক্ষমতা।

11. অর্থিক নিরাপত্তা।

12.সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য বস্তু।

               এগুলো  কিন্তু প্রতিটি মানুষের পাওয়ার মতো ক্ষমতা আছে, যদি  সে নিজের মন কে নিয়ন্ত্রণ করতে জানে তবেই।আমাদের প্রাণ সৃষ্টি হয়েছে সুন্দর জীবন যাপন করার জন্যই। জীবন সার্থকতার জন্য।নিজের মন কে নিয়ন্ত্রণ করতে পারলে সার্থক হওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় আত্মবিশ্বাস অর্জন করাও সম্ভব।

      আসলে আমাদের মনের মধ্যেই রয়েছে স্বর্গ-নরক।আমাদের ভাবনাই এই স্বর্গ- নরকের স্রষ্টা।এই মনই পারে স্বর্গ কে নরকে পরিণত করতে বা নরক কে স্বর্গে পরিণত করতে। আমরা যদি মনে করি আমি অসুখী তাহলে সেই ফ্রিকোয়েন্সি আমাকে অসুখীর রাস্তায় নিয়ে যাবে। আমার সঙ্গে এমন কিছু ঘটবে যেটা সুখ কে তাড়িয়ে দেবে। ধরুন,  আপনি ছোট্ট কোন একটা সমস্যায় পড়েছেন, এবার আপনার মনে হল আমার জীবনে সুখ টা স্থায়ী নয়, আমি সব সময় খারাপ অবস্থার মধ্যে থাকি ইত্যাদি ইত্যাদি। আপনি সত্যি সত্যি খারাপ অবস্থা কাটিয়ে উঠতে পারবেন না।

          আমরা যে দিনের মধ্যে কত কথা ভুল বলি, এবং নিজের বিপদ নিজে ডেকে আনি তার হদিস পেলে মাথা খারাপ হয়ে যাবে। আমরা সারাদিন মুখে যা যা উচ্চারণ করি, যা ভাবি সেটাই আমাদের মধ্যে অনুভূতি হয়ে মনে বিরাজ করে আমাদের জীবন পরিচালনা করে। তাহলে এবার ভাবুন, ভালো ভাবনা আমাদের জীবন এ কতটা গুরুত্বপূর্ণ !

      আপনি যদি, কোন নেতিবাচক মানুষের সঙ্গে দিন কাটান তাহলে আপনার মধ্যে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে বাধ্য। আর ইতিবাচক মানসিকতার মানুষের সঙ্গে থাকলে আপনার মধ্যে আত্মবিশ্বাস বাড়বে।  আপনি ভালো অনুভব করবেন।


       আমি  যদি Rhonda Byrne এর The Secret না পড়তাম তাহলে এ রহস্যের সন্ধান হয়তো কোন দিন ও পেতাম না। আমি এখন একজন সত্যি কারের সুখী মানুষ। কতটা বিশ্বাস করবেন জানি না,  তবে আমার আকাশ দেখলেও মন আনন্দে ভরে ওঠে। গাছের সঙ্গে কথা বলতেও ভালো লাগে। মন টা সব সময় খুশিতে ভরে থাকে। তার কারণ আমি সুখে থাকার রহস্যের সন্ধান পেয়েছি।  

     কিছুদিন আগে আমার এক বান্ধবী আমাকে জিজ্ঞাসা করছিল, আচ্ছা, একটা কথা বলত -- আমার husband খুব ভালো পোস্ট এ চাকরি করে,  আমার শ্বশুর বাড়ির অবস্থা খুব ভালো।  আমাদের ছোট্ট একটি বেবি।আমাদের দুজনের মধ্যে ভালই মিল আছে। তবুও কেন আমার স্বামীর মন ভালো থাকে না। ও বেশিরভাগ সময়ই হতাশা অনুভব করে।


          আসলে এ সমস্যা আমার মনে হয় এখন বেশিরভাগ মানুষের ই।  এর কারণ কি জানেন?

        একটা নির্দিষ্ট লক্ষ্য স্থাপন করার পরে সেই লক্ষ্য পূরণ হয়ে গেলে পরবর্তী তে জীবন নিয়ে আর নতুন কোন পরিকল্পনা না করা। ভালো থাকতে গেলে ভাবনায় অভিনবত্ব আনতে হবে, জীবন কে উপভোগ করতে হবে, এবং আমি খুব ভাল আছি, সুস্থ আছি, সুখে আছি শান্তিতে আছি এটা সব সময় মুখে বা মনে উচ্চারণ করতে হবে। একটা সত্যি কথা বলেন তো? আপনি দিনের মধ্যে কতবার বলেন যে আমি সুখে আছি বা ভালো আছি? একবার ও বলেন কি সন্দেহ আছে। আসলে এটা যে বলতে হয় সেটাই জানি না। 

             গরীব মানুষ সারা জীবন গরীব থেকে যায়, কারণ সে তার গরীব ভাবনা থেকে সরতে পারে না।
আর কিছু মানুষ দিনের পর দিন ধনী হতে থাকে।তার কারণ ও এই ভাবনা। ছোটবেলা একটা কথা খুব শুনতাম । বড়োরা বলত-- যে ধনী, ভগবান তাকে যেন আরও ধনী করে, উনি গরীব এর দিকে তাকায় না।কিন্তু এখানে আসল রহস্য খেলা করে ভাবনায়। তাঁদের যত ধন সম্পত্তি বাড়ে তত খুশি হয়, এবং সুন্দর ভাবনা ভাবে, এবং আরও ধন সম্পত্তির আহ্বান করে তাই তাঁরা ধনী হয়ে ওঠে।  অনেকেই কোন  রহস্য না জেনেও কিন্তু নিজের ভাবনাকে সুন্দর করে মনে আত্মবিশ্বাস জাগিয়ে তুলে নিজের জীবন পাল্টে ফেলে। সুখের ক্ষেত্রেও ঠিক একই নীতি প্রযোজ্য। শুধু সুখ বলে নয় সব ক্ষেত্রেই একি নিয়ম কাজ করে।


        এবার অনেকের মনে প্রশ্ন আসতে পারে যে, গরীব তো গরিব হয়ে জীবন কাটাতে চাই না তবুও কেন গরীব থাকে!!  আসলে, তারা না চাইলেও ভাবনার পরিবর্তন করতে পারে না। মনের কষ্ট, দুঃখ কে তাড়াতে পারে না। ফলে নিজের অবস্থানের পরিবর্তন ঘটাতে অক্ষম হন।  

      আমাদের জীবনের পরিবর্তন তখনই সম্ভব হবে যখন আমরা মনের মধ্যে বিশ্বাস কে স্থান দেব তখন। একটা প্রাচীন প্রবাদ আছে---

    বিশ্বাসে মিলায় বস্তু, তর্কে বহু দূর।

       "  আপনার জীবন আপনার ই হাতে। এখন আপনি কোথায় আছেন বা আপনার জীবনে কি ঘটেছে সেটা কোন ব্যাপার নয় । এখন আপনি সচেতন ভাবে নিজের ভাবনা বেছে নিয়ে নিজের জীবন পরিবর্তন করতে পারেন।হতাশা জনক পরিস্থিতি বলে কিছু নেই । আপনার জীবনের প্রতিটি পরিস্থিতি আপনি বদলাতে পারেন যে কোন মূহুর্তে।"


                      ----  The secret 



    The secret কিন্তু প্রচুর মানুষের হাতে গেছ
, প্রচুর মানুষ পড়ছে। কিন্তু সফলতা সেই লাভ করেছে যে বিশ্বাস স্থাপন করেছে সে। আর যাঁরা এই গ্রন্থটি কে বিশ্বাস করে হাতে তুলে নিয়েছে তাঁরা নিজের জীবনে মিরাকেল ঘটিয়েছে। আমার ইচ্ছা আছে-- মানুষের মনের অন্ধকার দূর করে The secret সবার সামনে তুলে ধরা। তাই আজকে সামান্য একটু অংশ তুলে ধরলাম। যাইহোক মূল প্রসঙ্গে আসি----


           এবার আমরা জানব সুখী হওয়ার ১০টি উপায় সম্পর্কে 


 #১. সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর:


           কৃতজ্ঞতা জীবন কে সুন্দর করতে দারুণ একটি কার্যকরী পন্থা। হ্যাঁ, কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করা। আমাদের উচিত প্রতিটা মানুষের কাছে কৃতজ্ঞ থাকা। আমাদের যে মানুষ টা বাড়িতে খবরের কাগজ বয়ে দিয়ে যায় তিনি থেকে শুরু করে যাঁদের কাছ থেকে সবজি কিনি তাঁদের কাছে পর্যন্ত আমাদের কৃতজ্ঞ থাকা উচিত।

      আমরা ভাবি, যে জিনিস টাকা দিয়ে কিনি সে জিনিস এর প্রতি কৃতজ্ঞ থাকব কেন? এটাই তো লাখ টাকার প্রশ্ন।  আপনি কিনতে পারেন টাকা দিয়ে কিন্তু সে জিনিস গুলো যাঁরা আনে তাঁদের কষ্ট কে কুনিশ জানাতে আমরা কৃতজ্ঞ থাকব।  এখানে টাকা নয়, মানবিকতা প্রাধান্য পাবে। 

         সকালে ঘুম থেকে ওঠে প্রথম কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করব ভগবানের কাছে, তিনি আমাদের এতো সুন্দর পৃথিবী তে প্রেরণ করেছেন তাই। তারপর বাবা মায়ের কাছে। তাঁরা আমাদের এই পৃথিবীর আলো দেখিয়েছে তাই। তারপর প্রকৃতি থেকে শুরু করে পৃথিবীর প্রতিটা মানুষের কাছে ই কৃতজ্ঞ থাকব। কারণ আমাদের জীবন সুন্দর করতে সবার কম বেশি অবদান থাকে। যে ডাক্তার ওষুধ আবিষ্কার করেন সেও আমার জীবন রক্ষক। একটা উদাহরণ দিলাম-- আরও অনেক উদাহরণ আছে।


      এই কৃতজ্ঞতার মাধ্যমে আমাদের মন সুন্দর, কোমল,  উজ্জ্বল হয়। তাই সুখী জীবন চাইলে কৃতজ্ঞতা কে জীবনে স্থান দিতেই হবে। 

         এই জন্যই তো কিছু মানুষ হৃদয়ে সুখ অনুভব করে। কারণ এই কথা গুলো পড়া আর মেনে চলার মধ্যে পার্থক্য বিস্তর। তবে আপনি ৩১ দিন বিশ্বাসের সঙ্গে মেনে চলুন, আপনি নিজে এর সুফল অনুভব করতে সক্ষম হবেন।  আমার আর্টিকেল লেখার উদ্দেশ্য কিন্তু শুধু অর্থ নয়, আমি চাই আমি যেটুকু জানি সেটুকু সবাই কে জানাতে। এবং মানুষের মনের অন্ধকার দূর করতে। 

    বিজ্ঞানে এটা প্রমাণ হয়েছে যে, "সুখী হতে হলে সচেতন প্রচেষ্টার প্রয়োজন।"

  সুখী হওয়ার জন্য সুখ নিয়ে চর্চা করতে হবে। 


    #২.একজন আশাবাদী  মানুষ হয়ে ওঠো:


             সব সময় মনের মধ্যে ইতিবাচক ভাবনা রাখতে হবে। সব কিছুতেই ভালো কিছু হবে এই আশা রাখতে হবে। মনের কোন স্থানে খারাপ ভাবনার জায়গা দিলে হবে না।  নিজে একজন আশাবাদী মানুষ হতে হবে এবং অন্য কে আশা দিতে হবে। সুপরামর্শ দিতে হবে। নিজের মন টা সব সময় সুন্দর, পবিত্র,  খাঁটি,  রাখতে হবে। কোন রকম হিংসা যেন মনে না আসে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। 

         কারণ এক টুকরো হিংসা আসলে সব পরিশ্রম জলে যাবে। আপনি তাহলে সুখের থেকে দূরে সরে যাবেন। সুখ খুব সূক্ষ্ম অনুভূতি। এ নষ্ট হতে সময় নেয় না, কিন্তু তৈরি করতে সময় লাগে। মনের মধ্যে বেশি হিসাব নিকাশ প্রবেশ করলেও এ চলে যাবে। সবার প্রতি স্নেহ শীল হতে হবে। তবে যদি কেউ আমাদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করে তাহলে তাঁর সঙ্গে কোন রকম বিবাদে লিপ্ত না হয়ে তার কাছ থেকে সরে আসতে হবে।

    শ্রী রাম কৃষ্ণের একটা কথা মনে রাখতে হবে -- 

   তুই ভক্ত হও, তবে বোকা হবি না।

    আমরা যদি আশাবাদী মানুষ হয়ে উঠি, তাহলে সব পরিস্থিতি আমাদের কাছে আর্শীবাদ হয়ে দেখা দেবে।

    একটা গল্প বলি---

                        নাট হামসুন নামে এক ব্যক্তি ছিলেন। তাঁর বাড়ি নরওয়ে তে। তিনি যে কাজে হাত দিতেন সে কাজেই ব্যর্থ হতেন। শেষে তিনি হতাশা হয়ে পড়লেন কিন্তু হাল ছাড়লেন না, তিনি স্থির করলেন, যে তাঁর জীবন সংগ্রামের ঘটনা গুলি গল্প আকারে লিখবেন।  শুনে আশ্চর্য হয়ে যাবেন--- তাঁর লেখা হাঙ্গার নামক বই টি সাহিত্যের জন্য নোবেল পুরস্কার পেয়েছিল। তাঁর জীরনের ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতা গুলি তাঁকে ধনী ও বিখ্যাত করে তুলে ছিল।

            তাই আশাবাদী মানুষ হলে, ধন সম্পত্তি সুখ শান্তি সব পাওয়া যায়। তার জন্য একটু ধৈর্য্য ধরতে হয়। 


      #৩. নিজের প্রতিটি কাজকে আনন্দময় করে তোলো:


                     সব কাজ করতে হবে আনন্দের সঙ্গে। আমরা যখন আনন্দ করে কোন কাজ করি তখন আমাদের মধ্যে এক উদ্দীপনা কাজ করে আমরা তখন ভালো অনুভব করি আমাদের মন তখন সুখে থাকে। তাই ছোট্ট ছোট্ট কাজ কেও আনন্দের সঙ্গে করতে হবে। তার পরেই আমরা অনুভূতি অনুভব করতে সক্ষম হব।

      সুখ, কতটা অনুভূতির বিষয় তার আর একটা ছোট্ট উদাহরণ দিই-----

   ধরুন,  আপনি এবং আমি  আইসক্রিম খাচ্ছি। আইসক্রিম একটা বস্তু। তার স্বাদ গন্ধ সব এক। কিন্তু আপনার মধ্যে যদি সুখের অনুভূতি টা থাকে তাহলে আপনি ঐ আইসক্রিম টা খেয়ে যে সুখ পাবেন আমার মধ্যে যদি সুখের অনুভূতি না থাকে তাহলে আমি সুন্দর অনুভূতি অনুভব করতে সক্ষম হব না।  অনুভূতি কিন্তু আইসক্রিম এ নেই ,আছে মনের মধ্যে। 



   #৪. চাহিদা কম কর:


                  বর্তমানে মানুষের মধ্যে চাহিদার পরিমাণ দিন দিন বেড়ে চলেছে। অতিরিক্ত চাহিদা মনের শান্তি নষ্ট করে,  সুখের বাঁধা হয়ে দাঁড়ায়।

        আপনি যদি চাহিদা কে নিয়ন্ত্রণ করতে না পারেন তাহলে সুখ অনুভব করতে পারবেন না। কারণ চাহিদা কখনোই থেমে থাকে না। আজকে যদি আপনার একটা চাহিদা পূরণ হয়, তাহলে সেই চাহিদা আরও একটি নতুন চাহিদা নিয়ে হাজির হবে। 

 যেসব, ধরুন,  আপনি মনে করলেন আপনি যদি আপনার বন্ধুর মতো একটা দাশ হাজার টাকার ফোন পেতেন তাহলে সুখী হতেন। আপনি অনেক কষ্ট মষ্ট করে একটা ফোন কিনলেন এবং দু'দিন মতো আনন্দে থাকলেন। তারপরে দেখলেন আপনার বন্ধুর হাতে কুঁড়ি হাজার টাকার মোবাইল। সঙ্গে সঙ্গে সব সুখের ইতি ঘটল। আপনার মন এবার ঘন্টা বাজাতে শুরু করেছে-- ঐ ফোন টা কিনতে পারলে আমি সুখী হতাম বা শান্তি পেতাম। 

    আমাদের চাহিদা এভাবেই একটার পর একটা আসতে থাকে। তাই চাহিদা কে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য,  নিজের যেটুকু আছে সেটা নিয়ে সন্তুষ্ট থাকুন। এবং ভালো কিছু পেতে ইচ্ছা হলে সেটা অন্য কারো দেখে নয়, নিজের থেকে সেটা নিন ও তাতে সুখ অনুভব করুন। 

   #৫.ধ্যান করুন:


            প্রাত্যহিক জীবনে ধ্যানের গুরুত্ব অপরিসীম।ধ্যান করলে মন শান্ত থাকে। প্রতিটি মানুষের প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে ওঠে নিয়ম করে দশ মিনিট হলেও ধ্যান করা উচিত।

সুখী মন
                                ধ্যান মগ্ন 
                      চিত্র সূত্র- pixabay.com 


  ধ্যান সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে আর্টিকেল টি পড়ুন--



   #6. পরিবারের সঙ্গে সময় কাটান:


         আমরা তখনই পরিপূর্ণ সুখ অনুভব করতে পারব যখন আমাদের পরিবারের সবার সঙ্গে সুন্দর সম্পর্ক বজায় থাকবে। যতই কাজ থাক কিছু টা সময় পরিবারের সকলে মিলে হইচই করে দিন অতিবাহিত করা দরকার। পরিবার হল আমাদের বাঁচার অক্সিজেন।

      পরিবারের সবাই খুশিতে থাকলে, ভালো থাকলে মনটা কতটা সুন্দর থাকে বলুন তো। পরিবারের মানুষের মুখে হাসি ফোটাতেই তো আমরা এতো পরিশ্রম করি। তাহলে তাঁদের সঙ্গে কিছুটা সময় প্রাণ খুলে হাসলে, গল্প করলে কি সুন্দর হয় বলুন। 

      তবে, পরিবারের সব সদস্য সমান হবে না। তাই নিজে সবাই কে ভালোবাসুন কিন্তু তার বিনিময়ে অন্যের কাছে ভালোবাসা ফিরত চাইবেন না। ভালোবাসা দিয়ে কতটা ভালোবাসলেন তার হিসাব করবেন না। এতে কষ্ট বাড়ে। সবাই কে হাসি, খুশি দিয়ে যান।

সুখী মন
                                  হাসি মুখ
                       চিত্র সূত্র- pixabay.com 


    #৭. ভার্চুয়াল কম, বাস্তবে বেশি থাকুন:


         যত প্রকৃতির সঙ্গে সময় কাটাবেন,  রাস্তা ঘাটের মানুষের সঙ্গে,  অপরিচিত মানুষের সঙ্গে কথা বলবেন সময় কাটাবেন তত অভিজ্ঞতা বাড়বে। 

       অনেকেই আছে, রাস্তায় চলতে চলতে ও ফোন ঘাটতে ঘাটতে যায়। এরা জীবন থেকে যে কি হারিয়ে ফেলে তা জানেও না। রাস্তা ঘাট হল বাস্তব সিনেমা হল, আর এখানে ঘুরে বেড়ানো প্রতিটা মানুষ হল নায়ক নায়িকা। যাঁদের কাছ থেকে অনেক কিছু শেখার আছে।

     একজন ক্লান্ত মুখের ছবি দেখে আমাদের হৃদয় কেঁদে ওঠে। তখন মনে হয়, এই সমাজের অনেক অসহায় মানুষের জন্য অনেক কাজ করার আজে। তখন আমাদের ভিতরে একটা মায়াবী অনুভূতি জাগরিত হয়। আমাদের কত কিছু ভাবতে সাহায্য করে।

   তাই রাস্তায় চলার সময় প্রতিটা মানুষের দিকে তাকান। 

      সোস্যাল মিডিয়া তে শিক্ষা মূলক বিষয় গুলো দেখুন, কারণ এখানে অনেক কিছু শেখার আছে। তবে কার সঙ্গে কখন চ্যাটিং করব এ চিন্তা দূর করুন। ঐ সময় টা নিজের পরিবার কে দিন। 

    #৮. নিশ্চিত মনে ঘুমাতে যান:


           মনের মধ্যে এক গাঁদা বাইরের অপ্রয়োজনীয় আবর্জনা রাখবেন না। যেমন ধরুন,অমুক আমার সঙ্গে কেনো কথা বলল না। তমুক কেন আমার মেসেজ সিন করল না। ও কেনো আমাকে ঐ কথাটা বলল ইত্যাদি ইত্যাদি ফালতু চিন্তা বন্ধ করুন।

       মন কে খালি রাখুন। এবং রিলাক্স করে জীবন কাটান। যাতে রাতের ঘুম যেন উড়ে না যায়। 


   আমি প্রচুর মানুষ কে জানি যাঁরা সারা রাত ই প্রায় জাগে দিনের বেলা ঘুমায়। এটা তো প্রকৃতি বিরূদ্ধ কাজ। এতে মানসিক স্থিতি নষ্ট হয়। 

   রাত দশটা থেকে এগারো টার মধ্যে ঘুমাতে যাওয়া দরকার। এবং সূর্য উদিত হওয়ার আগে ওঠা প্রয়োজন। 

      কারণ,  শৃঙ্খলা ময় জীবন যাপন না করলে জীবন সুন্দর হয় না।  এবং রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে ভগবানের কাছে কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করতে হবে, আমার সারা দিন টা সুন্দর কেটেছে তাই। 

    #৯.সাহায্যের হাত টি বাড়ান:


        মানুষ কে সাহায্য করার জন্য সদা তৈরি থাকতে হবে। আমি যে টুকু পারি সেটুকু আমার থেকে যাঁরা সমস্যায় আছে তাঁদের পাশে দাঁড়াবো। 

   আমি যেটা ভাবতে পারি, যে কাজটি করতে পারি সেটা অনেকেই করতে পারে না। আমার ভগবান সেই ক্ষমতা দিয়েছে , তবে সেটা একা ভোগ করার জন্য নয়। আমি এখন ব্লগ লিখছি, অনেকেই সেটা পারবে না। আমার উচিত হবে, এখানে আমি যেটুকু অর্থ উপার্জন করতে সক্ষম হব তার কিছুটা যাঁরা কষ্টে দিন যাপন করছে তাঁদের দেওয়া। এভাবেই আমরা একে অপরের পাশে দাঁড়াবো। তবেই আমি সুখের সন্ধান পাব।

      ঐ যে প্রথমেই বললাম,  এই সুখ মাত্র এক শতাংশ মানুষের মধ্যে ঘোরাফেরা করে কারণ এক শতাংশ মানুষ এই কাজ গুলো করে। 


      #১০. নিজের ইচ্ছা কে প্রাধান্য দিন:


         কখনো যদি মনে হয়, এখন আকাশ টার দিকে তাকিয়ে থাকতে খুব ভালো লাগছে তখন সব কাজ ওলট পালট করে ইচ্ছার প্রাধান্য দিন। 

       যদি মনে হয়, আজ একটু মন খুলে মিষ্টি খেতে ইচ্ছে করছে তখন তাই করুন। ডায়েট থাক তখন মাথায়। ( এটা কেন বললাম বলুন তো? আমি তো মিষ্টি পাগল মানুষ তাই, ভীষণ স্বাস্থ্য সচেতন তবে মিষ্টি কে দূরে  রেখে নয়!)


        এছাড়া কিছুটা সময় নিজের সঙ্গে একাকী কথা বলুন। সে কেমন আছে জানতে চান। মনের ইচ্ছা গুলো মন দিয়ে শুনুন। 



                                      উপসংহার 


      আবার ও বলছি,  সুখের কোন নির্দিষ্ট মাপ কাঠি নেই। আপনি সব থেকে ভালো বুঝতে পারবেন আপনি কিসে বা কি ভাবে সুখ পাবেন।  তবে মন সুন্দর রাখতে হবে এটা কিন্তু মাস্ট। আর প্রতিনিয়ত জ্ঞান সঞ্চয় করতে হবে। এক জায়গায় আটকে থাকলে হবে না। জানার শেখার আগ্রহ টা যেন মৃত্যুর আগ পর্যন্ত রয়। 


         আমরা যখন,  নতুন কিছু শিখি নতুন কিছু জানি তখন মনের অনুভূতি সুন্দর হয়। আমাদের মন আনন্দ পায়। জীবন টা খুব সুন্দর, একে শুধু খাদ্য দিতে হবে। এই খাদ্য হচ্ছে সুখ, শান্তি। আপনার অর্থ কম থাক তাতে কিছু যায় আসে না, কিন্তু সুখ যেন একটু ও না কমে সেটা লক্ষ্য রাখতে হবে। সুখ টাকায় নেই  সুখ থাকে মনে। আবার টাকার ও খুব প্রয়োজন। এই টাকা আমরা তখনই উপার্জন করতে পারব যখন আমাদের মন ভালো থাকবে। তবে মন কে যত্ন করতে না পারলে টাকা থেকেও কোন লাভ নেই।  তাই অনুভূতি টা রাখতে হবে সব সময় তরতাজা।


ধন্যবাদ। 

চিত্র সূত্র- pixabay.com 

তথ্য সূত্র-  The secret,  ডেল কার্নেগি র গ্রন্থ। 

TAGS,  আত্মা উন্নয়ন,  সুখ, 

          









                

কোন মন্তব্য নেই:

Blogger দ্বারা পরিচালিত.