জীবনকে সহজ করে উপভোগ করার উপায়:10 টি অভ্যাস এখনই বাদ দিন!

 জীবনকে সহজ করে উপভোগ করার উপায়:


                  মানবজীবন বড় সুন্দর।অনেক ভাগ্য করে এই মানবজীবন লাভ করেছি।তাই এ জীবন কে সহজ করে উপভোগ করতে হবে সব সময়। আমরা নিজেকে বাদ দিয়ে পৃথিবীর সব বিষয় নিয়েই মাথা ঘামায়। কিন্তু ভালো থাকতে গেলে সুস্থ থাকতে গেলে নিজেকে জানতে হবে,বুঝতে হবে।আমাদের প্রত্যেকের মধ্যে নিজেকে ভালো রাখার, হাসি খুশি রাখার সম্ভাব্য সমস্ত উপাদান আছে আমাদের ই মধ্যে। স্রেফ আমরা তার দিকে নজর দিই না তাই দেখতে পায় না।

       প্রথমে নিজের মন কে ভালো করে জানতে হবে,এবং নিজের মতো করে খুশিতে জীবন কাটাতে হবে। নিজের ভিতরের সত্তার সাথে যখন আমরা পরিচিত হবো তখন আমরা আপার সুখ, আনন্দ, শান্তি খুঁজে পাব।

সহজ জীবন
                        উল্লাসময় সুন্দর জীবন 
                        চিত্র সূত্র- pixabay.com 

  
               পৃথিবীর প্রতিটা সফল মানুষ ই সহজ,সরল ভাবে জীবন উপভোগ করে।তাঁরা নিজের ইচ্ছা মতো চলে। তাঁরা নিজের মতামত, নিজস্ব চিন্তা ধারা কে প্রাধান্য দেন। লোকে কী বলবে, লোকে কী ভাববে এ কথা মনের মধ্যে ঘুরপাক খেলে প্রাণ খুলে বাঁচা হবে না।তাই তাঁরা এই সমস্ত তুচ্ছ বিষয় কে প্রাধান্য দেন না।


              প্রাচীন গ্রীক দার্শনিকরা বলতেন-- 'নিজেকে জান '। তোমার জীবনকে  নিজের  পছন্দমত ভাবে গড়ে তুলতে হলে, তোমার ভেতরের শক্তি কে কাজে লাগাতে হলে নিজেকে তোমার জানতেই হবে।

            অবশ্য এর জন্য ধ্যানের প্রয়োজন। গভীর ভাবনার প্রয়োজন।কি ভাবে ভালো থাকতে হয়, এ কথা আমরা সকলেই জানি কিন্তু সেটা কে হৃদয়স্ত করতে জানি না!  আমরা তো প্রত্যেকেই জানি,  কারো উপরে হিংসা করতে নেই, কাউকে ঘৃণা করতে নেই, রাগ আমাদের শরীরের ক্ষতি করে,  অহংকার আমাদের পতন ডেকে আনে। তবুও আমরা এগুলো কেনো করি? ঠিক এখানেই ভাবনার প্রয়োজন। সাধারণ মানুষ এখানেই হেরে যায়, আর মহান মানুষ এটাই কেই জয় করে। সব কিছু জানা আর সেটা কে অক্ষরে অক্ষরে পালন করার মধ্যে আকাশ পাতাল পার্থক্য।

  
               আমরা জীবন কে সহজ ভাবে পরিচালনা করতে পারি না তার কারণ নিজের ভাবনা কে সহজ করতে জানি না। আমরা সব সময় কিছু অজুহাতের শরণাপন্ন হই, আমরা বলি অমক আমার সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করছে, তাই আমি ও তার সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করলাম। তমক আমাকে নিয়ে সমালোচনা করেছে তাই আমি ও তাঁকে কিছু কথা শুনিয়ে দিয়ে আসলাম। বা কেউ আমার উপরে হিংসা করলে আমি ও তাঁর উপরে হিংসা করব-- ইত্যাদি ইত্যাদি।

              আসলে এগুলো করেই আমরা আমাদের শক্তি অপচয় করি, মানসিক স্থিতি নষ্ট করি, নিজের মন কে চঞ্চল করে তুলি। তাই আমাদের জীবন সহজের পরিবর্তে জটিল আকার ধারণ করে। ভালো থাকতে হলে এ সবের উর্ধে উঠতে হবে। কিন্তু প্রশ্ন হল সেটা কিভাবে সম্ভব?

              সেটা সম্ভব হবে তখনই যখন আমরা দিনের পর দিন জ্ঞান আহরণ করব তখন। মনের সব অন্ধকার দূর হয়ে যাবে যদি সেখানে জ্ঞানের দ্বীপ জ্বলে ওঠে তবেই।  এতো বড় পৃথিবীতে কেবল কিছু মানুষের জীবন সদা হাস্য-উজ্জ্বল, আনন্দময়, শান্তিময়। কারণ এই পৃথিবীর কিছু মানুষ নিজেকে জানার বোঝার ক্ষমতা রাখে। এ বড় কঠিন কাজ, এ হলো সাধনার বিষয়। 


            তবে কোন কাজ ই কঠিন নয়, যদি তুমি সেই কাজ মন থেকে করো।আমরা ইচ্ছা করলে যে কোন মূহুর্তে নিজেকে পরিবর্তন করতে পারি, নিজের ভিতরের খারাপ গুন গুলো নষ্ট করে একজন ভালো মানুষ রূপে নিজেকে তুলে ধরতে পারি। কিন্তু এখানেও একটা সমস্যা আছে!! 

         সমস্যা হল, আমরা কেউ ই নিজের খারাপ গুন গুলো দেখতে পায় না!আমরা প্রত্যেকেই মনে করি আমরা ভীষণ ভালো।কোন রোগ নির্মূল করতে হলে আগে তো রোগ টিকে খুঁজে বার করতে হবে তাই না? এটাই হচ্ছে আসল খেল। আমরা সাধারণ মানুষ আত্মসমালোচনা করতে জানি না। আমরা পরের সমালোচনা করতে সিদ্ধহস্ত কিন্তু নিজের নয়। আর এখানেই মহান মানুষের সঙ্গে আমাদের পার্থক্য। কিন্তু ভালো থাকতে হলে, জীবন কে সহজ করতে হলে মনের মধ্যে থেকে রাগ, ভয়, অহংকার, ঘৃণা, বিদ্বেষ, হিংসা, মোট কথা সব খারাপ কে ত্যাগ করতে হবে। 

এমার্সন বলেছেন-- "সুুুখী মানুষ কখনো মন্দ মানুষ হয় না।"


          আমাদের মধ্যে অনেকেরই ভুল ধারণা আছে,  আমরা ভাবি জীবন তখনই সহজ সরল হবে যখন জীবনে অর্থের আগমন ঘটবে।  হ্যাঁ,  এটা ঠিক সুন্দর করে, হাসি খুশি এবং শান্তি তে বাঁচ তে গেলে অর্থের দরকার। কিন্তু কেবল অর্থ ই এখানে সব নয়, অর্থ যদি সব হতো তাহলে প্রতিটা অর্থবান ব্যক্তির জীবন সহজ সরল সুন্দর হতো। 

            অর্থ এবং সুন্দর, সুস্থ জীবন এই দু'টিই আমরা পেতে পারি। যদি আমরা নিজেকে আবিষ্কার করতে জানি তবেই। জীবন কে উপভোগ ও করেছেন এবং বিপুল অর্থ সম্পত্তির মালিক ও হয়েছেন এমন কিছু মানুষের উদাহরণ দিই--- 

       প্লেটো,সক্রেটিস, লিওর্নাদ্য দ্য ভিঞ্চি, উইলিয়াম শেক্সপিয়ার, আইজ্যাক নিউটন, ইত্যাদি।

               আমরা ভাবি, তাঁরা তো সবাই মহান মানুষ। আরে মশাই তাঁরা ও একটা সময় সাধারণ মানুষ ই ছিলো। তাঁরা তাঁদের জ্ঞান প্রয়োগ করে আজ মহান মানুষে পরিণত হয়েছেন। আসলে আমরা ভাবতে ভয় পায়। আমাদের শত্রু আমরা নিজেরাই। আমরা বৃথা ভাবি, বাইরের লোক আমাদের ক্ষতি করে। আসল ক্ষতি তো আমরাই আমাদের করি। আমি যদি না চাই তাহলে পৃথিবীর কোন শক্তি নেই আমার ক্ষতি করার। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত আমরা এ কথা বিশ্বাস ই করি না। ফলে আমরা কিছু ভুল ধারণা মনের মধ্যে পুষে রাখি এবং জীবন কে বৃথা উত্তেজিত করে তুলি। 



           বব প্রক্টর বলেছেন--- 

     "যদি আপনি যা চান তাকে আপনার মনের মধ্যে ভাবতে পারেন এবং অন্য ভাবনার ওপর প্রভূত করতে দেন তবে তাকে আপনি আপনার জীবনে নিয়ে আসবেন।"

            এ কথার অর্থ হল, আপনি  যেটা  ভাববেন সেটাই আপনার জীবন। আপনি যদি, জীবনে সুখ চান, তাহলে সেটাই পাবেন, অর্থ চাইলে অর্থ, সহজ সরল জীবন চাইলে তাই পাবেন। আমাদের পাওয়ার কোন শেষ নেই। আপনি সব কিছু পেতে পারেন যদি আপনি নিজেকে বিশ্বাস  করতে পারেন তবেই।   আমরা এখানেই তো বড্ড পিছিয়ে!! 

 
           নিজের জীবন কে উপভোগ করতে হলে, আগে নিজের উপর অগাধ আস্থা রাখতে হবে। নিজের উপরে বিশ্বাস স্থাপন করতে হবে। একটি সুন্দর, সহজ সরল মন তৈরি করতে হবে। মনের সব জটিলতা কে দূর করতে হবে। এবং নিজেকে প্রচুর ভালোবাসতে হবে। 


  আসুন জীবন কে সহজ করে উপভোগ করতে এই দশটি অভ্যাস আজই ত্যাগ করি-----


   আমাদের কিছু অভ্যাস আমাদের সহজ জীবনের পথে বাঁধা হয়ে দাঁড়ায়। আমরা অনেক সময় বুঝতে পারি না কোন কোন অভ্যাস বা বিষয় আমাদের জীবন কে পিছনের দিকে ঠেলে নিয়ে যাচ্ছে। আজ আমরা এগুলো সম্পর্কে বিস্তারিত জানার চেষ্টা করব।

      #1. ভয় ও সংশয় দূর করুন:


             আমরা জীবন নিয়ে বড্ড বেশি ভয় পায়।এই ভয় আত্মবিশ্বাস কে নষ্ট করে। আমি কোন কাজ ই করতে সক্ষম হব না যদি মন থেকে ভয় না দূর করি। এই ভয় প্রচুর প্রতিভা কে নষ্ট করে, জীবন কে দুর্বিষহ করে তোলে। 

   এমার্সন বলেছেন-- আমাদের বিনা তথ্যে ভয়ের সঙ্গে লড়াই করা নিষ্প্রয়োজন। নিজের উপর বিশ্বাস    রাখো, বাস্তব সত্যের  মুখোমুখি হও। ভয় কে দূূরে রাখলে তুমি একজন আত্মবিশ্বাসী ও সার্থক মানুষ হয়ে উঠতে পারবে।

   নেপোলিয়ান হিল বলেছেন--- ভয় সাত ধরনের হয়। আর  এরই বশীভূত হয় মানুষ। 

 ক. দারিদ্র ভয়।
 খ. সমালোচিত হওয়ার ভয়।
 গ. স্বাস্থ্যহানির ভয়।
 ঘ. ভালোবাসা হারানোর ভয়।
 ঙ. বার্ধক্যের ভয়।
 চ. স্বাধীনতা হারানোর ভয়।
 ছ. মৃত্যু কালীন ভয়।

        মনের মধ্যে আত্মবিশ্বাস জাগাতে পারলে এই ভয় গুলো দূরে সরে যায়।


     ভয়ের সঙ্গে যোগ হয় সংশয়। শেক্সপিয়ার বলেছেন-- সংশয় একটা বিশ্বাসঘাতক শত্রু। আমাদের সমস্ত কাজে অনিষ্ট করে এই সংশয়।

  ক্যালেব কেল্টন বলেছেন-- জ্ঞানের রাজ্যে পৌঁছাতে গেলে  আমাদের সংশয় নামক পথকে অতিক্রম করতেই হবে।  যখন আমরা মনের সংশয় কে যুক্তি, তর্ক, অভিজ্ঞতা দিয়ে দূর করতে পারি তখন আমরা যেটা লাভ করি সেটা সারাজীবন আমাদের সঙ্গে থাকে। 

       তাই একটি সুন্দর সহজ সরল জীবন পেতে মনের মধ্যে ভয় দূর করুন এবং প্রাণ খুলে আনন্দ করুন। জীবনের প্রতি সেকেন্ড কে উপভোগ করুন।

সহজ জীবন
                   চলো জীবনকে উপভোগ করি
                      চিত্র সূত্র- pixabay.com 


         #2. যখন তখন মন খারাপ করা বন্ধ করুন:


           আমাদের মন হলো পাগলা ঘোড়া। একে সঠিক পুষ্টিকর খাদ্য না দিলে এ যখন তখন বিগড়ে বসে। এবং আমাদের সমস্ত কাজ পন্ড করে। তাই মনের খাবারের প্রয়োজন। মনের খাবার হচ্ছে জ্ঞান। 

         আমরা সকলেই জ্ঞান মূলক কথা শুনি কিন্তু সেটা আত্মস্থ করতে পারি না। আমরা কিন্তু জানি, মন খারাপ করলে জীবনীশক্তি নষ্ট হয়,  কর্মক্ষমতা কমে যায়, মন অস্থির হয়ে ওঠে।  তাও বোকার মতো মন খারাপ করে নিজের মূল্যবান সময় নষ্ট করি। 


           মন কে সব সময় নিজের নিয়ন্ত্রণে রাখতে হয়। কিন্তু আমরা সেটা পারি না। আমাদের মন ভালো রাখার দায়িত্ব অন্যের উপরে ছেড়ে দিই। যার ফলস্বরূপ কষ্ট পেতে হয়।  আমাদের সঙ্গে কেউ সুন্দর করে কথা বললে, সুন্দর ব্যবহার করলে আমাদের মন আনন্দিত হয়। কিন্তু কেউ একটু রুক্ষ সুরে কথা বললে আমরা দুঃখ পায়। তার মানে আমার মন কিন্তু আমার নিয়ন্ত্রণে নেই। আর এটাই সকল দুঃখের কারণ।
সহজ জীবন
                          মন খারাপের সময় 
                       চিত্র সূত্র- pixabay.com 


         কারণ,  সবাই তো সব সময় আমার সঙ্গে মধুর সুরে কথা বলবে না, আমার সব চাহিদা পূরণ করবে না। এটাই তো স্বাভাবিক।  কিন্তু আমরা এই সহজ বিষয় টা মানতে চাই না বলে মনে কষ্ট পায়। আমি যদি অন্যের উপরে নির্ভরশীল হয়ে থাকি তাহলে আমার আর ভালো থাকা হবে না। কারণ তাঁদের তো সব সময় মন নাও ভালো থাকতে পারে। আগে তো তাঁর মন ভালো থাকবে, তারপরে তো সে আমার সঙ্গে সুন্দর করে কথা বলবে।  কিন্তু আমি যদি নিজের মন কে নিজের নিয়ন্ত্রণে রাখতে জানি, আমি নিজে যদি মন ভালো রেখে হাসি খুশি তে থাকি তাহলে তখন আর অন্য কারো কথায় মন কষ্ট পাবে না। কারণ আমি নিজেকে ভালো রাখতে জানি। 


      #3. সন্দেহ আর ক্ষোভ ত্যাগ করুন:


         মন থেকে সমস্ত প্রকার  সন্দেহ, অসন্তোষ, ক্ষোভ ত্যাগ করুন। জীবন কে সহজ সরল ভাবে উপভোগ করতে গেলে মনটাকে একদম ছোট্ট শিশুর মতো রাখতে হবে। শিশুরা কখনো কারো উপরে কোন ক্ষোভ করে না , নিন্দা করে না, সন্দেহ প্রকাশ করে না তাই তাঁদের মন  সব সময় সুন্দর, পবিত্র, কোমল থাকে।     

          আমরাও ইচ্ছা করলে এমনটি থাকতে পারি। কিন্তু তার জন্য মানসিকতা কে সুন্দর করতে হবে। সবাই কে আপন ভাবতে হবে, ভালোবাসতে হবে। অন্য কেউ আমাকে ভালোবাসল কি বাসল না এই হিসাব বন্ধ করতে হবে। মনে রাখতে হবে আমি সকলকে ভালোবাসব আমার নিজের ভালোর জন্য। এখানে আমার স্বার্থ লুকিয়ে আছে। আমরা ভাবি, আমি ওকে কত ভালোবাসলাম ,স্নেহ করলাম কিন্তু ও আমাদের ভালোবাসার দাম দিলো না। 

         আমরা যদি কিছু পাওয়ার জন্য কাউকে ভালোবাসি তাহলে তাঁর কাছ থেকে দুঃখ ই পাবো। কিন্তু তাঁকে ভালোবেসে আমি ভালো থাকব, আমার মন শান্তি পাবে এটা যদি ভাবি, তাঁর কাছ থেকে কিছু পাওয়ার আশা না করে তাঁকে ভালোবাসি তাহলেই আমরা ভালো থাকব।  এবং কারো উপরে সন্দেহ করব না। ক্ষোপ প্রকাশ করব না। কারণ এগুলো করলে সম্পর্ক নষ্ট হয়। কাজের কাজ কিচ্ছুটি হয় না। মন চঞ্চল হয়ে ওঠে। তাই এগুলো বন্ধ করতে হবে। 


     #4. অতীতে পড়ে থাকবেন না:


            অনেক মানুষ আছে যাঁরা অতীত কে আঁকড়ে ধরে বর্তমান সময় কে নষ্ট করে। আমাদের জীবন টা একটা পাল তোলা নৌকা। এখানে ঝড় ঝাপটা সব কিছু আসবে আবার কালের নিয়মে চলেও যাবে। আমাদের কাজ হল সময়ের সঙ্গে এগিয়ে যাওয়া। 

       আজকে যে জিনিস টা খুব খারাপ মনে হচ্ছে,  কিছু দিন পরেই আমরা দেখতে পাবো, ওটা খারাপ ছিল না, ওটা ছিল জীবনে চলার পথে একটা শিক্ষা। আপনার ডট পয়েন্টের কথা জানা আছে?

      ডট পয়েন্ট হচ্ছে,  আমরা যদি ফেলে   আসা দিন গুলোর দিকে যদি গভীর ভাবে লক্ষ্য করি তাহলে দেখতে পাবো জীবনের প্রতিটি ঘটনার পিছনে কোন না উদ্দেশ্য আছে। আমাদের জীবনে ঘটা কোন ঘটনায় ফালতু নয়। তাই অতীত নিয়ে ভেবে বর্তমান সময় কে নষ্ট করবেন না। আজকে ভালো চিন্তা করুন, আগামী কাল অবশ্যই ভালো হবে। কিন্তু আজ যদি গত কালকের কথা ভাবতে থাকি তাহলে আগামী কাল ও খারাপ ই হবে।


        #5. দুশ্চিন্তা ও উৎকণ্ঠা করা বন্ধ করুন:


        দুশ্চিন্তা মানুষের জীবনের একটি অভিশাপ ও বলা যায়। যার কোন ভিত্তি নেই  কিন্তু তবুও মানুষ দুশ্চিন্তা করে  নিজের দুর্ভোগ ডেকে আনে। দুশ্চিন্তা   একটা মানসিক ব্যাধি।এটা মনের ক্ষতি করে।

   পল বলেছেন-- ঈশ্বর আমাদের শক্তি, ভালোবাসা,   সুস্থ মন দিয়েছেন। আমাদের মানসিকতা কে ধ্বংসাত্মক করার জন্য আমরাই দায়ী । দুশ্চিন্তা আমাদের শরীরের সঙ্গে সামাজিক ও সাংসারিক ক্ষতি ও করে।


        আমরা, যে জিনিস ঘটার সম্ভাবনা নেই শতকরা চল্লিশ জন মানুষ তাই নিয়ে উৎকণ্ঠিত হই। যে জিনিসের কখনও পরিবর্তন ঘটা সম্ভব নয় সেই নিয়ে ত্রিশ শতাংশ মানুষ উদ্বেগে ভোগেন।

    বাকি নানা ব্যাপারে উদ্বেগ ভোগ করে দশ শতাংশ মানুষ। আর সত্যি সত্যি উৎকণ্ঠা হবার মতো সমস্যা য় পড়ে উৎকণ্ঠিত হয় মাত্র আট শতাংশ মানুষ। 

     এবার ভাবুন, আমরা আমাদের সহজ জীবন কে নিজেরাই কিভাবে দিনের পর দিন জটিল বানিয়ে তুলি। তাই ভালো থাকতে চাইলে জীবন কে উপভোগ করতে চাইলে আজই এগুলো বন্ধ করতে হবে।


       #6. মনের মধ্যে কারো উপরে  ঘৃণা তৈরি করবেন না:


           যদি কেউ আপনাকে দুঃখ দেয়, কষ্ট দেয়, তাহলে তাঁর উপরে বৃৃথা রাগ, ঘৃণা না রেখে তাঁকে ক্ষমা  করে দিন। যে ক্ষমা করতে জানে শান্তি তাঁর নতজানু  হয়। পাঁচ মিনিট ঘৃণা তে যে পরিমাণ এনার্জি নষ্ট হয় , আধঘণ্টা কঠিন পরিশ্রমে ও ততটা এনার্জি নষ্ট হয় না।

        কারো উপরে রাগ, ঘৃণা পুষে রাখলে মন ভালো থাকে না। এতে তাঁর কোন ক্ষতি হবে না। কিন্তু আমার প্রচুর ক্ষতি হবে।  তাঁর খারাপ দিক গুলো আমার চোখের সামনে ভেসে উঠবে তাতে আমার মন বিক্ষিপ্ত হবে। আমি রোগের কবলে পড়ব। তাই নিজের ভালোর জন্য তাঁকে ক্ষমা করুন। এবং নিরেট আনন্দ উপভোগ করুন।


     #7. নেতিবাচক চিন্তা দূর করুন:


       মানুষ নেতিবাচক চিন্তা করতে খুব ভালো বাসে। কোন কাজ করার আগে সেই কাজের বিষয়ে কি কি খারাপ হতে পারে, কে কে সেই কাজে ব্যর্থ হয়েছে তার তালিকা তৈরি করে মনের মধ্যে ভয় সৃষ্টি করে। এর ফলে কোন কাজ করতে মন উৎসাহ পায় না, তখন মনে কুঁড়েমি  প্রবেশ করে। 

       এছাড়া নেতিবাচক চিন্তা করলে আত্মবিশ্বাস নষ্ট হয়ে যায়। তাই সব সময় ইতিবাচক চিন্তা ভাবনা করা উচিত। ভালো ভালো কথা ভাবলে আমরা ভালো কাজ করতে পারব। আমাদের সামনে নিত্য নতুন রাস্তা খুলে যাবে। 


         #8. কখনো কারো সঙ্গে তর্ক করবেন না:


        তর্ক করে বোকা মানুষ রা। কোন জ্ঞানী ব্যক্তি কখনো কারো সঙ্গে তর্ক  করে  না।   

  আমরা যে বিষয় নিয়ে তর্ক করি  সেই বিষয়টি একজন মানুষ সঠিক বলছে আর একজন ভুল বলছে। কিন্তু মজার বিষয় হল দু'জনেই নিজের নিজের জায়গায় অবিচল থাকে।  যে বিষয় নিয়ে তর্ক হচ্ছে সেটা একজন ই তো ঠিক বলছে, দুজনেই তো ঠিক বলছে না। তাহলে যে ব্যক্তি জানে যে সে ঠিক বলছে, তার উচিত ঐ মূর্খ মানুষের সঙ্গে তর্ক না করা। হ্যাঁ যে সঠিক টা না জেনে তর্ক করে সে মূর্খই। 

আর তর্ক করলে বন্ধুত্ব নষ্ট হয়,  মন চঞ্চল হয়। 

এ বিষয়ে জ্ঞানী বেঞ্জামিন ফ্রাঙ্কলিন  বলেছেন- 

  " প্রতিবাদ, তর্ক ইত্যাদি করলে মাঝে মাঝে জয় হয় বটে -- তবে সে জয়ে থাকে বিরাট শূন্যতা,তাতে অপরের হৃদয় কখনোই পাওয়া যায় না।" 

     আমরা সকলকে ভালোবাসব,  কারো সঙ্গে মনোমালিন্য করে দিন যাপন করব না। তাতে আমরা জীবনকে উপভোগ করার সময় পাব।


        #9. কোন কিছু কে জটিল করে দেখবেন না:


           আমাদের দেখার দৃৃষ্টিভঙ্গী ই  আমাদের জীবন।  আমরা যখন কোন বিষয় কে জটিল করে ভাবি, বা জটিল করে দেখি সেটা আমাদের সাামনে জটিল  হয়েই উপস্থিত হয়। 

          যেমন,  আমি হয়তো সারাদিন কষ্ট করে আমার স্বামীর জন্য সুন্দর সুন্দর পদ রান্না করেছি। এবং সঙ্গে আমি আশা করেছি সে আমার রান্নার প্রশংসা করবে। কিন্তু সে হয়তো খুব ব্যস্ত আছে কিংবা আতো টা গুরুত্ব দেয় নি, তাই কোন কিছু না বলেই খেয়ে উঠে পড়ল।

       এটাকে নিয়ে আমি তুমুল অশান্তি করতে পারি, অভিমান করতে পারি আবার ছেড়েও দিতে পারি। এটা সম্পূর্ণ আমার উপরে নির্ভর করছে। আমি যেমন ভাবে বিষয়টি নিয়ে ভাবব তেমনি হবে। এটা ছোট্ট উদাহরণ দিলাম, কিন্তু আমরা অন্য বিষয় গুলো কেই এভাবেই সহজ ভাবে ভাবতে পারি। আমাদের ভাবনা যত সহজ হবে আমাদের জীবন ও তত সহজ সরল হবে। 


     #10. অভিযোগ করবেন না:


        আমরা জীবন নিয়ে অভিযোগ করি আমাদের প্রিয় মানুষ গুলির উপরে।  আমরা আমাদের চাহিদা অনুযায়ী সব কিছু হাতের  কাছে না পেলে বা আমাদের সব সখ আল্লাদ পূরণ না হলে আমরা খুব অভিযোগ করি। 


          কিন্তু সত্যি কথা বলতে, সবাই চাই তাঁর সন্তান তাঁর  বাবা মা তাঁর স্ত্রী কে সুন্দর করে রাখতে না চাইতেই সব জিনিস এনে দিতে কিন্তু পরিস্থিতি অনেক সময় বাঁধা হয়ে দাঁড়ায়।

       এই সময় আমরা যদি তাঁদের উপরে অভিযোগ করি তাহলে তাঁরা আমাদের কাছ থেকে দূরে সরে যাবে। কষ্ট পাবে। এতে করে আমাদের জীবন সহজ সরল হয়ে উঠবে না। তাই যেটুকু পাচ্ছি সেটাকেই যদি হাসি মুখে গ্রহণ করি তাহলে আমরাও ভালো থাকব এবং আমাদের পরিবার ও ভালো থাকবে। আমরা সকলে মিলে আনন্দ করে উল্লাস করে জীবন কে উপভোগ করব। তাহলেই আমাদের জীবন সুন্দর হয়ে উঠবে। আমাদের সকল সম্পর্ক গুলো হোক বন্ধুত্ব পূর্ণ এবং আনন্দময়।

 
সহজ জীবন
  আনন্দময় জীবন    
                     চিত্র সূত্র- pixabay.com 


                                     উপসংহার 


              পরিশেষে এটাই বলার, আমরা ইচ্ছাা করলে সব সময় আনন্দে, শান্তি তে  খুশিতে  জীবন টা খুব সহজ করে উপভোগ করতে পাবর, যদি আমরা একটু নিজের কিছু অভ্যাস বাদ দিই, এবং  নিজেকে বুঝতে সক্ষম হই তবেই। এটা মনে রাখতে হবে, যাঁরা পেঁচিয়ে কথা বলে, জীবন নিয়ে পয়েন্ট টু পয়েন্ট হিসাব কষে তাঁরা ভালো থাকতে পারে না।


        ভালো থাকতে গেলে মন সুন্দর করতে হবে, নেতিবাচক সমস্ত কিছু মন থেকে দূর করতে হবে।নিজেকে খুব ভালোবাসতে হবে এবং পরিবারের সবাই কেউ খুব ভালোবাসতে হবে। তবে সব কিছুতেই যেন নিজস্বতা থাকে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।


ধন্যবাদ।

চিত্র সূত্র- pixabay.com 

তথ্যসূত্র- সংগৃহীত।

TAGS, সহজ জীবন, জীবন কে উপভোগ করার উপায়, আত্মসচেতন, আত্ম উন্নয়ন।

কোন মন্তব্য নেই:

Blogger দ্বারা পরিচালিত.