মানসিকভাবে শক্তিশালীদের বৈশিষ্ট্য গুলি কি কি? মানসিক শক্তি বাড়ানোর দশটি কৌশল
মানসিক শক্তিশালীদের বৈশিষ্ট্য:
মানসিক ভাবে শক্তিশালী ব্যক্তি নিজেকে সব সময় উন্নতির শিখরে পৌঁছাতে সক্ষম হন। তাঁদের চিন্তা ধারা, তাঁদের কথা, কাজ, চলাফেরা তাঁদের সাধারণের থেকে আলাদা করে অসাধারণ ব্যক্তি হতে সাহায্য করে।অসাধারণ ব্যক্তি বর্গের মানসিক স্বাস্থ্য ই তাঁদের এগিয়ে চলার মূল চাবিকাঠি।
আমরা যা চিন্তা করি, তারই প্রতিফলন ঘটে আমাদের কাজে,আমাদের ব্যক্তিত্বে। তুমি মানসিকভাবে শক্তিশালী হতে চাও কি চাও না সেটা নির্ভর করে তোমার নিজের ইচ্ছার উপর।তুমি যদি নিজেকে পালিশ করতে জানো, প্রকৃতি থেকে সেরাটা তুলে নিতে জানো তাহলে তুমি ও মানসিক ভাবে শক্তিশালী হয়ে উঠতে পারবে।
যাঁরা মানসিক দিক দিয়ে শক্তিশালী তাঁদের সঙ্গে দুর্বল ব্যক্তির মূল পার্থক্য চিন্তাধারায়। এর বাইরে আর কোন পার্থক্য নেই।
একজন বিখ্যাত মনস্তত্ববিদ Prof. Carl Seashorer. বলেছেন-------
" গড়পড়তা মানুষই তাদের স্মৃতি শক্তির দশ শতাংশ ঠিকমতো ব্যবহার করে না।মনে রাখার যে প্রাকৃতিক নিয়মগুলি আছে তার ৯০ ভাগই অপচয় করে।"
তাই মানসিক শক্তি অর্জন করতে হলে নিজেকে আগে বুঝতে হবে, নিজের চিন্তা ভাবনার মধ্যে পরিবর্তন আনতে হবে।
আমরা আজ এখন যা কাজ করে চলেছি তার চেয়ে অনেক বেশি কিছু করার ক্ষমতা আমাদের মধ্যেই আছে। কিন্তু আমরা সেই শক্তি সম্পর্কে অবগত নই।
অন্যান্যদের চেয়ে আলাদা হতে হলে, আরও জয় করার ইচ্ছা থাকলে, নিজের যোগ্যতা আরও বাড়াতে গেলে আপনাকে অবশ্যই মস্তিষ্কের শক্তিকে আরও বেশি করে করে কাজে লাাগাতে হবে।
আমরা শরীর কে সুন্দর, সতেজ, তরতাজা রাখার জন্য বিভিন্ন পদ্ধতি অবলম্বন করি।পুষ্টি কর খাদ্য খায়,ত্বক কে উজ্জ্বল রাখতে পার্লারে যায়,ঘরোয়া পদ্ধতিতে ত্বকের যত্ন নিই। কারণ শরীর ও মন সুস্থ না থাকলে কোনও কাজ ই সুষ্ঠ ভাবে সুসম্পন্ন করা সম্ভব হয় না।কিন্তু এই শরীর কে চালনা করার জন্য সর্বপ্রথম যেটাকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া উচিত সেটা হল -- 'মস্তিষ্ক'।
চিত্রসূত্র- pixabay.com
জীবনের অগ্রগতি চাইলে মস্তিষ্ক কে চালনা করা শিখতে হবে।দেহের থেকেও মস্তিষ্কের যত্ন নেওয়া বেশি প্রয়োজন। দেহের ভারসাম্যে নষ্ট হলে তবুও বেঁচে থাকা সম্ভব কিন্তু মস্তিষ্কের ভারসাম্য নষ্ট হলে সে মৃতপ্রায় ব্যক্তিতে পরিণত হবে।মস্তিষ্ক শক্তিশালী থাকলে,ইচ্ছা করলে যে পৃথিবীকেও জয় করা যায় তার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত-
স্টিফেন হকিং---
শারীরিক ভাবে একজন অচল ব্যক্তি,কেবল মস্তিষ্ক কে সচল রেখে পদার্থবিজ্ঞান এবং রসায়ন বিভাগ কে অমূল্য রত্ন দান করে গেছেন।তিনি মোটর নিউরন রোগে আক্রান্ত হয়েও অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো একটি প্রতিষ্ঠানে শিক্ষা লাভ করতে সক্ষম হয়েছিলেন কেবলমাত্র মস্তিষ্ক কে অবলম্বন করে।তিনি ছিলেন মানসিক ভাবে শক্তিশালী একজন ব্যক্তি।
উচ্চ শিখরে যেসব মানুষ আছেন,সবাই তাঁদের চিন্তা শক্তির উপর নির্ভর করেই বেঁচে থাকেন।তাঁরা তাঁদের মস্তিষ্কের ধূসর কোষের উপরেই নির্ভর করেন।যে ব্যক্তি মস্তিষ্ক কে নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন,তাঁর পক্ষে মানসিকভাবে সব সময় শক্তিশালী থাকা সম্ভব।
অন্যের চেয়ে আলাদা হতে গেলে, আরও জয় করতে গেলে, নিজের যোগ্যতা আরও বাড়াতে হলে আপনাকে অবশ্যই মস্তিষ্কের শক্তিকে আরও অনেক বেশি করে কাজে লাগাতে হবে।
কিন্তু বর্তমান প্রজন্ম মস্তিষ্ক কে সব থেকে বেশি অকাজে ব্যবহার করছে।বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়া র দৌলতে তাঁরা ঘন্টার পর ঘন্টা এমন একটা আকর্ষণীয়,অথচ অকেজো স্থানে আটকে রাখছে যে পরবর্তীতে মানসিক অবসাদ, দুশ্চিন্তা, হতাশা, রাগ ,ঈর্ষা, বিরক্তি তাঁদের মন কে গ্রাস করছে।
এখনো এর থেকে বার হতে না পারলে ঘোর বিপদ অনিবার্য।কিন্তু দুঃখের বিষয় মানুষ আরও বেশি করে সোশ্যাল মিডিয়া য় প্রবেশ করছে।কারণ হোয়াটস অ্যাপ, টুইটার, ফেসবুকে এখন নানা প্রলোভনে ভরপুর।
ছোট্ট এই যন্ত্রটি আবিষ্কারের উদ্দেশ্য ছিলো পৃথিবীকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া,অবশ্য কিছু মানুষ এই যন্ত্রটি সঠিক ব্যবহার করে বিশ্ব কে হাতের মুঠোয় আনতে সক্ষম হচ্ছে, আর কিছু মানুষ এই যন্ত্রটির দৌলতে অতলে তলিয়ে যাচ্ছে।
তাই পুরো বিষয়টি নির্ভর করে আমাদের মস্তিষ্কের উপর।আপনি তাকে যে কাজে ব্যবহার করবেন,আপনি আপনার কাজ অনুযায়ীই ফল পাবেন।
সব সময় মানসিক ভাবে শক্তিশালী থাকতে গেলে একটু সময় হাতে নিয়ে মনের জটিল চিন্তা গুলো দূর করতে হবে।ঘরের কোণে জমে থাকা ঝুলকে যেমন আমরা ঝাঁটা দিয়ে পরিষ্কার করি, ঠিক তেমনি মনের কোণের খারাপ চিন্তা, বদ অভ্যাস, কুবুদ্ধি কে আগে পরিষ্কার করতে হবে।
বর্তমানে মানুষ প্রচন্ড অস্থির।এই মানসিক অস্থিরতা হল জীবনের অধিকাংশ কষ্ট ও ভ্রান্তির শিকড়।আসলে নিজের মনের মধ্যেই সৃষ্টি হয় সুখ এবং অসুখ। আরও পরিষ্কার করে বলা যায় যে,আপনি নিজের মনের মধ্যে কোন ধরনের বীজ বুনেছেন তার উপর নির্ভর করবে আপনার মানসিক স্থিরতা।
আপনার মানসিক শক্তি কমছে কিনা, তা বোঝার উপায় হল, দিন দিন আপনার ধৈর্য্য শক্তি কমে যাবে, কাজের প্রতি বিরক্তি আসবে, সব সময় ঘুম ঘুম ভাব হবে,কারওর সঙ্গে কথা ইচ্ছা করবে না,রাতে ঘুম আসবে না, মনের মধ্যে একটা অস্থিরতা কাজ করবে।একটা সামান্য কথায় ও রাগ হবে, খিদে পাবে না। এর মধ্যে তিন টি লক্ষণ যদি দেখা যায় তাহলে সে মানসিক অবসাদ এর শিকার।
একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে, এর হাত থেকে বাঁচার একমাত্র উপায় হল, সৃজনশীল কাজের সঙ্গে যুক্ত হওয়া। আপনি যে কাজের সঙ্গেই যুক্ত থাকুন না কেন, আপনার সেই কাজের সঙ্গে ,আপনার পছন্দের কোনও একটি সৃজনশীল কাজ ও যুক্ত করুন। মানসিক ভাবে শক্তিশালী থাকতে গেলে, একি কাজের একঘেয়েমিতা কে দূর করতে হবে।নিত্য নতুন কাজের সঙ্গে নিজেকে যুক্ত করতে হবে।
এছাড়া সামাজিক বন্ধন কে আরও মজবুত করতে হবে।ঘরের কোণে নিজেকে আটকে না রেখে মানুষের সঙ্গে একটু মিশতে হবে। রাস্তায় চলাচল করা মানুষের দিকে তাকিয়ে দেখতে হবে, তাঁদের মনোভাব বোঝার চেষ্টা করতে হবে। এই পদ্ধতি কে বলা হয়- জীবন্ত সিনেমা । মানুষের মন বুঝতে পারলে আপনার মানসিক শক্তি দৃঢ় হবে।
নিয়ম করে প্রতিদিন কয়েক ঘন্টা প্রকৃতির সঙ্গে কাটাতে হবে।সম্ভব হলে বাড়িতে গাছ গাছালি লাগানো যেতে পারে এতে করে অনেক টা সময় প্রকৃতির ছোঁয়ায় নিজেকে রাখা যায়,যেটা মস্তিষ্কের জন্য খুবই উপকারী।
চিত্রসূত্র- pixabay.com
এছাড়া নিজের পোশাকের দিকেও নজর দেওয়া প্রয়োজন। পরিষ্কার, পরিচ্ছন্ন পোশাক পড়লে মন মানসিকতা সুন্দর থাকে।
মানসিক শক্তিশালীদের বৈশিষ্ট্য গুলি--
ফোর্বস এর তথ্য অনুযায়ী----
#1.এদের একটা নির্দিষ্ট লক্ষ্য থাকে:
যাঁরা মানসিক দিক দিয়ে শক্তিশালী তাঁদের প্রতিটা কাজের পিছনে একটা উদ্দেশ্য থাকে এবং সেই কাজের লক্ষ্য থাকে সুস্পষ্ট ।
এদের দেখে মনে হয় পাগল প্রকৃতির, সব কাজই কেবল এলোমেলো কিন্তু একটা নির্দিষ্ট সময়ের পর সেই পাগল ই অসাধারণ কিছু করে বসে। পরে বোঝা যায় তাঁদের এমন ভাবে থাকার মূল কারণ।
এরা চটজলদি কোন সিদ্ধান্ত নেয় না। কোন বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে হাজার বার ভাবে।আর সাধারণ মানুষ যাঁরা মানসিক দিক দিয়ে শক্তি শালী কম তাঁরা সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর সেটা নিয়ে ভাবতে বসে তাই তাঁরা সব কাজে পিছনে পড়ে। কারণ হঠাৎ সিদ্ধান্ত সব সময় ই ভুল হয়।
#2.সমালোচনা করে না:
মানসিক শক্তিশালী ব্যক্তিরা কখনোই অন্য কে নিয় সমালোচনা করে না। এরা সমালোচনা থেকে সব সময় দূরে থাকে। কিন্তু নিজেকে সমালোচনা করতে ছাড়ে না। নিজেকে সমালোচনা করে আরও উন্নতির শিখরে পৌঁছায়।
আর সাধারণ মানুষ অন্যের সমালোচনা করে নিজেকে নীচে নামায়।
#3.অতীতে আটকে থাকে না:
মানসিক ভাবে শক্তিশালী ব্যক্তির জীবনে যদি কোন বিশাল ঝড় আসে নিজের অনেক বড় ক্ষতি ও হয়ে যায় তবুও এরা সামনে এগিয়ে যায়।
এরা অতীত নিয়ে পড়ে থাকে না। কালকে ঘটে যাওয়া অঘটন নিয়ে যদি আজকেও ভাবতে থাকেন তাহলে আজকের দিন টাও নষ্ট হবে, ফলে আগামী কাল ও সেখান থেকে বেড়িয়ে আসতে পারবেন না।
এভাবেই মানুষ অতীত কে আঁকড়ে ধরে বর্তমান কে নষ্ট করে।কিন্তু যাঁরা মানসিক দিক দিয়ে শক্তিশালী তাঁরা অতীত থেকে বেড়িয়ে আসতে জানে। তাই তাঁরা সব কাজে সফলতা অর্জন করে।
#4. ক্ষমতার বাইরে কাজ করে না।
নিজের ক্ষমতা বুঝে কাজ করা বুুুদ্ধিমান ব্যক্তির লক্ষণ। যে যতটা বোঝা বহন করতে সক্ষম তাঁকে তাঁর ক্ষমতা বুঝে বোঝা বহন করতে হয়।
ক্ষমতার বাইরে গিয়ে কাজ করলে পিছিয়ে পড়তে হয়। সাধারণ মানুষ এই ভুল টাই করে। কিন্তু মানসিক ভাবে শক্তিশালী ব্যক্তিরা তাঁদের ক্ষমতার বহর সম্পর্কে অবগত থাকে তাই তাঁরা সেই বুঝে কাজ করে।
#5. এরা পরোপকারী হয়:
কিছু মানুষ আছে যাঁরা নিজের স্বার্থর বাইরে আর কিছু ভাবতেই পারে না। এই সব মানুষ সাময়িক ভালো থাকলেও দীর্ঘ মেয়াদি কখনোই ভালো থাকে না।
কিন্তু যাঁরা ব্যক্তিত্ব পূর্ণ ব্যক্তি তাঁরা অন্যের দুঃখ কষ্টে তাঁদের দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন। অন্যের উপকার করে শান্তি পান। এই সমস্ত ব্যক্তি কে সকলে মনে রাখে।
অন্যান্যদের উপকার করলে শুধু তাঁদের ভালো হয় না, সবথেকে বেশি ভালো হয় যে উপকার করে তাঁর। সে মানসিক দিক দিয়ে শক্তি শালী হয়। মন সুন্দর হয়, কাজের প্রতি ভালোবাসা বাড়ে। তাই অসহায় মানুষের পাশে থাকে শুধু ভালো নয়, ভীষণ ই ভালো।
#6.ঝুঁকি নেয় হিসাব করে:
কর্মস্থল থেকে শুরু করে পারিবারিক যে কোন বিষয়ে ঝুঁকি নেওয়ার একটা আলাদা ফরমুলা এদের মধ্যে দেখা যায়। গড়পড়তা সবার মতো এরা কাজ করে না।
যদি ব্যাবসা ক্ষেত্রে কোন সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রয়োজন পড়ে তাহলে সেখানে কতটা লাভ হবে, ক্ষতি হলে কতটা ক্ষতি হবে এই সব কিছু আগের থেকে হিসাব করে নেয়। এরা হিসাব না করে এক পা ও এগোয় না।
মানসিক শক্তি বাড়ানোর দশটি কৌশল:
#● বই পড়ুন:
মানসিকভাবে শক্তিশালী থাকতে গেলে, একটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হল প্রচুর বই পড়া। বই মানুষের চিন্তা ধারা পাল্টাতে সিদ্ধহস্ত।মস্তিষ্কে জমে থাকা সমস্ত নেতিবাচক চিন্তা দূর করা সম্ভব জ্ঞান মূলক বইয়ের মাধ্যমে।একমাত্র বই মানুষের ইতিবাচক চিন্তা ধারা তৈরি করে।
যত বই পড়া যায় মানুষ তত স্মৃতিধর হয়ে ওঠে।
এই প্রসঙ্গে স্বামী বিবেকানন্দ এর একটি স্মৃতি তুলে ধরলাম-----
একবার বেলুুড় মঠে নূতন Encyclopedia Britannica ( এনসাইক্লোপিডিয়া ব্রিটানিয়া) ক্রয় করা হইয়াছে।নূূূতন ঝকঝকে বইগুলি দেখিয়া স্বামীজির এক শিষ্য বলিলেন, ' এত বই এক জীবনে পড়া দুর্ঘট।'
শিষ্য তখন জানে না যে, স্বামীজি ঐ বইগুলির দশ খণ্ড ইতিমধ্যে স্বামীজি পড়িয়া শেষ করিয়া একাদশ খণ্ড গুলো পড়িতে আরম্ভ করিয়েছেন।
স্বামীজি শিষ্যর কথার পরিপেক্ষিতে বললেন, কি বলছিস? এই দশ খানি বই থেকে আমায় যা ইচ্ছা জিজ্ঞেস কর --- সব বলে দেব।
শিষ্য অবাক হয়ে বললেন, আপনি কি এই বই গুলি সব পড়িয়াছেন?
স্বামীজি বললেন, না পড়লে কি বলছি?
স্বামীজির আদেশে শিষ্য এক এক করে সকল পুস্তক হইতে বাছিয়া বাছিয়া কঠিন কঠিন বিষয় সকল জিজ্ঞাসা করিতে লাগিলেন। আশ্চর্যের বিষয়, স্বামীজি ঐ সকল বিষয়ের মর্ম তো বলিলেনই , তাহার উপর স্থানে স্থানে ঐ পুস্তকের ভাষা পর্যন্ত উদ্ধৃত করিয়া বলিতে লাগিলেন।
এটা কি করে সম্ভব?
স্বামীজি বলতেন এটা সকলের পক্ষেই সম্ভব যদি সে মানসিক শক্তি নিয়ে চর্চা করে তবেই। তাই মানসিক শক্তি কে কাজে লাগিয়ে অসম্ভব কেও সম্ভব করা সম্ভব।
# ● মেডিটেশন:
মানসিক শক্তি বাড়াতে গেলে সব থেকে বেশি জোর দিতে হবে মেডিটেশন এর উপরে।
মেডিটেশন না করলে মস্তিষ্ক তাঁর কার্যক্ষমতা হারাতে থাকে। বুদ্ধির বিকাশ ঘটে না। স্বামীজি প্রায় সমস্ত সময় ই ধ্যানে নিমগ্ন থাকতেন তাই তিনি মানসিক দিক দিয়ে আতো শক্তিশালী ছিলেন।
মেডিটেশনের শক্তি সম্পর্কে জানতে আরও পড়ুন--- সুস্বাস্থ্য রক্ষায় (মেডিটেশন) কি ভূমিকা রাখে? জীবন যাত্রায় মেডিটেশন এর উপকারিতা কি?
# ● মানিয়ে নেওয়ার প্রবণতা:
মানসিক শক্তি বাড়াতে গেলে সব পরিস্থিতি তে নিজেকে মানিয়ে নিতে জানতে হবে। পরিস্থিতির উপরে নজর রেখে সেই অনুযায়ী চলতে পারলে নিজেকে মানসিক দিক দিয়ে শক্তিশালী তৈরি করা সম্ভব হবে। কারণ সব সময় সব কিছু নিজের পছন্দমত, ইচ্ছা মতো জিনিস নাও ঘটতে পারে । সেই সময় নিজেকে সব কিছুর সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে পারলে সে জীবনে এগিয়ে যেতে পারে অনেক দূূূর।
#● আবেগ কে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে:
আবেক কে বশে রাখতে পারলে সে জীবনে অনেক দূর এগিয়ে যেতে পারে। আবেগ থাকা ভালো তবে বেশি আবেগ মানুষের জীবন দুর্বিষহ করে তোলে।
এমন প্রচুর মানুষ আছে যাঁরা আবেগ কে নিয়ন্ত্রণ করতে না পারার কারণে নিজের জীবন কে ধ্বংসের মুখে ঠেলে নিয়ে গেছে।
তাই আবেগ কে নিয়ন্ত্রণ করতে পারা মানে সে মানসিক দিক দিয়ে শক্তিশালী হয়ে উঠবে।
#● নিজের প্রতি বিশ্বাস রাখা:
অনেকেই আছে যাঁরা অন্যের উপরে অন্ধের মতো বিশ্বাস করে কিন্তু নিজের প্রতি বিন্দুমাত্র ভরসা নেই। এরা কখনোই জীবনে উন্নতি করতে পারে না।
নিজের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করতে না পারলে কখনোই মানসিক দিক দিয়ে শক্তিশালী হয়ে ওঠা সম্ভব হবে না। নিজেকে বিশ্বাস করে এগিয়ে গেলে চলার পথে যদি কোন ভুল হয় তাহলে সেই ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে পরবর্তীতে আরও ভালো কিছু করা সম্ভব হবে।
# ● নতুন মানুষের সঙ্গে মিশতে হবে:
নতুন নতুন মানুষের সঙ্গে মিশলে অনেক কিছু শেখা যায়, জানা যায়। অনেক জ্ঞান আহরণ করা যায়।
তাই প্রতিদিন নতুন মানুষের সঙ্গে আলাপ করা উচিত। আর সকলের সঙ্গে কথা বলা উচিত। আপনার বাড়িতে যে মানুষ টি কাজ করছে তাঁর কাছেও আপনি এমন অনেক কিছু শিখতে পারেন যা আপনি জানেন না। সবার মধ্যেই কিছু না কিছু ভালো গুন আছে, সেই গুন গুলো কে আত্মস্থ করতে পারলে মানসিক শক্তির বিকাশ ঘটে।
#● নিজেকে রুটিনের মধ্যে রাখতে হবে:
সাধারণ ভাবে চললে কখনোই মানসিক শক্তির বিকাশ ঘটবে না। সকালে ঘুম থেকে ওঠা থেকে শুরু করে দিনের প্রতিটা কাজ করতে হবে সময় কে ভাগ করে।
নিজের ইচ্ছা মতো চললে কোন সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা মাফিক কাজ করা সম্ভব হবে না। যাঁরা ব্যক্তিত্ব পূর্ণ মানুষ তাঁরা হিসাবে বাইরে সময় নষ্ট করে না।
তাই নিজের মস্তিষ্কের অগ্রগতির জন্য সব কাজ প্লান করে করতে হবে। এতে করে কাজের প্রতি আগ্রহ বাড়বে।
#● কথা বলতে হবে কম শুনতে হবে বেশি:
যাঁরা ব্যক্তিত্ব পূর্ণ মানুষ তাঁরা কখনোই বেশি কথা বলে না। তাঁরা সবার কাছ থেকে কথা শোনে। এবং নিজের বুদ্ধির শান দেয়।
কিন্তু সাধারণ মানুষ নিজের কথা নিজে বলতে ভালো বাসে। এবং আপর ব্যক্তি কে কথা বলার সুযোগ দেয় না।
কিন্তু মানসিক ভাবে শক্তিশালী হতে হলে প্রচুর মানুষের সঙ্গে কথা বলে জ্ঞান সঞ্চয় করতে হবে। তবেই বুদ্ধির বিকাশ ঘটবে।
#● ইতিবাচক চিন্তা:
নেতিবাচক চিন্তা মস্তিষ্ক কে ভুল পথে চালিত করে। ইতিবাচক চিন্তা মানুষ কে সঠিক রাস্তার সন্ধান দেয়। তাই সব সময় ইতিবাচক চিন্তা ভাবনা করতে হবে তাহলে মানসিক দিক দিয়ে শক্তিশালী হয়ে ওঠা সম্ভব হবে।
এছাড়া সাধ্য অনুযায়ী মানুষের পাশে দাঁড়াতে হবে, মানুষের প্রয়োজনে সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিতে হবে।এতে মানসিকতা উজ্জ্বল হয়।
#● লক্ষ্য স্থির করতে হবে:
লক্ষ্য ছাড়া কোন মানুষ ই তাঁর গন্তব্য স্থলে পৌঁছাতে পারে না। লক্ষ্য হীন মানুষ ভ্রান্ত পথিক মাত্র। যে সারাজীবন শুধু ঘুরেই মরে।
আপনার যদি জীবনে কোন লক্ষ্য না থাকে তাহলে আপনি কোথায় পৌঁছাতে চান আর সেই অনুযায়ী কি কাজ করতে হবে সে সম্পর্কে কিছু জানবেন না ফলে আপনার মস্তিষ্ক ভোঁতা হয়ে যাবে। কারণ সে কোন কাজ পাবে না।
তাই মানসিক শক্তির অগ্রগতি চাইলে জীবনের একটা লক্ষ্য স্থির করুন এবং সেই অনুসারে এগিয়ে চলুন।
উপসংহার
সর্বোপরি যে কোনও মূল্যে ভালো থাকতে জানতে হবে।প্রচন্ড কোলাহল, তর্ক, বাকবিতণ্ডা, অন্য কে সমালোচনা, অন্যের দোষ ত্রুটি খোঁজার প্রবণতা ত্যাগ করতে হবে।
ভালো থাকতে হলে নিজেকে গ্রহণ করতে হবে নিঃস্বার্থ ভাবে।আমি আর একজনের মতো দেখতে হলাম না কেনো, আমি অন্য আর একজনের মতো হতে পারলাম না কেনো, এই হা- হুতাশ করা বন্ধ করতে হবে। সব সময় মনে রাখা প্রয়োজন যে, আমি আমার মতো। আমি নিজেকে নিয়ে সুখী।আমার রাজত্বে আমি রাজা।মোট কথা সব সময় ইতিবাচক চিন্তা ধারা পোষণ করতে হবে।
এছাড়া কারোর কাছে একটু খানি উপকার পেলেও তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করতে হবে।এটি একটি মহৎ গুন ,এই গুন টি আয়ত্ত করতে জানলে খুব ভালো থাকা যায়।এছাড়া অন্যের ভালো কাজের মন খুলে প্রশংসা করতে হবে। অন্যের প্রতি সহমর্মিতা প্রকাশ করতে হবে, অন্যের আনন্দে আনন্দিত হতে শিখতে হবে।
এগুলিই হচ্ছে মানসিক দিক দিয়ে শক্তি শালী থাকার প্রধান পুষ্টি। সব সময় হাসি খুশি, আনন্দে উচ্ছ্বসিত থাকার জন্য একজন ভালো মানুষ হওয়া খুব প্রয়োজন।
চিত্রসূত্র- pixabay.com
মানসিকভাবে শক্তিশালী থাকতে হলে আনন্দের ভূমিকা সর্বাঙ্গে।আর ইতিবাচক চিন্তা হল সুস্থ মানসিকতা মূল চাবিকাঠি।তাই সুন্দর ভাবে বাঁচতে হলে ইতিবাচক চিন্তা ধারা কে সব সময় ধরে রাখুন এবং ভালো থাকুন।
লেখা টি যদি ভালো লেগে থাকে তাহলে শেয়ার করতে ভুলবেন না এবং একটা কমেন্টস করবেন।
চিত্রসূত্র- pixabay.com
Tags, মানসিক শক্তি
তথ্যসূত্র সংগৃহীত
ধন্যবাদ 😊
কোন মন্তব্য নেই: