সুস্বাস্থ্য রক্ষায় ধ্যান (মেডিটেশন)কী ভূমিকা রাখে?জীবন যাত্রায় মেডিটেশন এর উপকারিতা কি?
সুস্বাস্থ্য রক্ষায় ধ্যান এর ভূমিকা:
অপরিসীম।ধ্যানের শক্তি আমাদের মন ও শরীরকে শক্তিশালী করে তোলে।ধ্যান অনুশীলনের মাধ্যমে জীবনের সব চাহিদা পূরণ করা সম্ভব।সে প্রকৃতির আধিপত্য হোক,আর বাস্তব জীবন, সবেতেই ধ্যানের কার্যকারিতা অতুলনীয়। ধ্যানের শক্তি ব্যতীত সঠিক জ্ঞান লাভ অসম্ভব।
আমি আমার জীবনে ধ্যানের শক্তি প্রতিনিয়ত অনুভব করছি।ধ্যানের শক্তি সম্পর্কে আমি যতই বলি না কেনও, সবটা বলা সম্ভব হবে না। আমি ধ্যানের মধ্যে একাগ্রনিষ্ট ভাবে নিমগ্ন দু'বছর হতে চলল।
প্রথম প্রথম সকালে ওঠার পর ধ্যানে বসতে একটু অসুবিধা হতো।একটা আলসেমি আমাকে পিছু টানত। কিন্তু বর্তমানে এমন একটা দিন ও অতিবাহিত হয় না, ধ্যান ছাড়া।
আমার মতো এক আলসে মেয়ে, যে একটা সময় বই দেখলেই ভয় পেতো, কথায় কথায় রেগে যেত, সব কাজেতেই বিরক্তি প্রকাশ করত,কখনো সকাল আটটা না বাজলে উঠত না।
সেই আমি এখন একটা কথা বলি দশবার ভেবে, সব সময় লক্ষ্য রাখি আমার কথায় যেন কেউ আঘাত প্রাপ্ত না হয়। বই এখন আমার সব সময়ের সঙ্গী। এই ধ্যানের টানেই আমি সূর্য ওঠার আগে উঠি। এই ধ্যানের শক্তিতেই সমস্ত বদ অভ্যাস আমি পরিত্যাগ করতে সক্ষম হয়েছি।
কোন বিষয়ে মনের কেন্দ্রীয়করণের নাম ই হল ধ্যান ।যে কোনও একটি বিষয়ে মন কে একাগ্র করা কেই ধ্যান বলে।
একমাত্র ধ্যানের শক্তি ই পারে মন কে আয়ত্তে আনতে।মন একটি জলাশয়, যেখানে হাজার ও তরঙ্গ প্রতিক্ষণে ঢেউ খেলে যায়। এই তরঙ্গ কে শান্ত করার জন্য ধ্যান করা অপরিহার্যধ্যানের ভূমিকা ও উপকারিতা ।
মন বড়ই চঞ্চল, সে এখন এখানে তো পরক্ষণেই ছুটল দিল্লিতে।তাই এই মন কে বশীভূত করতে হলে ধ্যানের সঙ্গে যুক্ত হতেই হবে। ধ্যানের দ্বারাই অবচেতন স্তরের গভীরে প্রবেশ করে তাকে সংযত করতে হবে, যাতে চেতন- মনও বশীভূত হয়। এই চেতনই তো অবচেতনের কারণ।আমাদের অতীতে ঘটে যাওয়া লক্ষ লক্ষ ঘটনা আমাদের মনের মধ্যে জমা আছে। এখানে ভালো, খারাপ সমস্ত ঘটনায় একটি থলির মধ্যে সঞ্চিত আছে।
মাঝে মাঝে কিছু কিছু ঘটনার পরিপেক্ষিতে এগুলি বাইরে বেরিয়ে এসে কখনো সুখকর স্মৃতি হয়ে শুভ্রতা ছড়ায়, আবার কখনো মানব সমাজ কে ধ্বংস করতে তেড়িয়া হয়ে ওঠে।তাই ধ্যানের মাধ্যমে নিজের সর্বময় কর্তা কে জাগিয়ে তুলতে হবে।শরীরের ভিতরের সমস্ত যন্ত্র কে নিজের ইচ্ছাধীন করে তুলতে হবে।এবং অবচেতন মন কে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।
ধ্যানের মাধ্যমে চেতনার উর্দ্ধে উঠে অতিচেতন স্তরে পৌঁছাতে হবে ।তার পরেই মন শান্ত, শীতল, স্নিগ্ধ, নির্মলতায় পরিপূর্ণ হবে।তখন দেহ মন থেকে অন্যের প্রতি রাগ, ঘৃণা, বিদ্বেষ, হিংসা, অহংকার, এক কথায় সমস্ত কিছু নির্মূল হয়ে যাবে।
মন একাগ্র করার ক্ষমতা র তারতম্যই মানুষ এবং পশুর মধ্যে প্রধান পার্থক্য সৃষ্টি করে।যে কোন কাজে সাফল্যের মূলে থাকে এই একাগ্রতা।একাগ্রতার সঙ্গে অল্প বিস্তর পরিচয় আমাদের সকলের ই আছে।এর ফল প্রতিদিন আমাদের চোখে পড়ে।
সঙ্গীত শিল্প,কলাবিদ্যা প্রভৃতিতে আমাদের যে উচ্চাঙ্গের কৃতিত্ব অর্জিত হয় তা এই একাগ্রতার শক্তির জন্যই।
চিত্রসূত্র-pixabay.com
তাই সুস্বাস্থ্যের জন্য প্রতিটা দিন সকালে উঠে প্রাথমিক কার্য সুসম্পন্ন করে কমপক্ষে আধঘন্টা গভীর ধ্যানে নিমগ্ন হতে হবে।প্রথম প্রথম বিভিন্ন ধরনের চিন্তা এসে ভিড় করবে।কিন্তু পরবর্তীতে সকল চিন্তা দূর হয়ে মন শান্ত হয়ে যাবে।তখনই ধ্যানের অপরিসীম যাদু উপলব্ধি করা সম্ভব হবে।
ধ্যানের সঙ্গে যোগাসন অঙ্গাঙ্গীভাবে যুক্ত।নিয়মিত যোগচর্চাই সুস্থ শরীর ও সুস্থ মনের আসল চাবিকাঠি । স্বাস্থ্য চর্চার মধ্যে যত প্রকার পদ্ধতি আছে যোগাসন সবার থেকে পৃথক।
যোগাসন শুধু মন নয়,শরীরের সমস্ত জীবনীশক্তি কে উজ্জীবিত করে। বর্তমানে মানুষ কাজের চাপে চিন্তামগ্ন জীবন যাপনে অভ্যস্ত হয়ে পড়ছে।এর ফলে মানসিক ও শারীরিক সমস্যা দিন দিন বাড়ছে।এখন মানুষ অল্পবিস্তর কারো সঙ্গে মনোমালিন্য হলেই ভীষণ রেগে যায়, ধৈর্য্য হারিয়ে ফেলে।এবং এর কারণে শরীরের মধ্যে বিভিন্ন রোগ বাসা বাঁধে।
তাই সব কিছুর হাত থেকে রেহাই পেতে, একটা সুস্থ, সুন্দর জীবন পেতে, নিজের ব্যস্ততম সময় থেকে সকালে কিছুটা সময় ধ্যান এবং যোগাসন এ লিপ্ত হতেই হবে।কারণ শরীর, মন সুস্থ না থাকলে কোনও কাজ ই সুষ্ঠ ভাবে সুসম্পন্ন করা সম্ভব নয়।আমাদের মনকে আনন্দ প্রদান করাই যোগাসনের কাজ।
আর আপনি যদি আপনার ওজন বেড়ে যাওয়া নিয়ে চিন্তিত হয়ে থাকেন তাহলে কিন্তু আপনার ওজন করো বেড়ে যাবে। আমাদের শরীর কে সতেজ ও সুস্থ রাখায় প্রধান কাম্য হওয়া উচিত। কিন্তু ইদানিং আমাদের খাদ্যাভ্যাসের তারতম্যের জন্য মানুষ নিজের ওজন কে নিয়ন্ত্রণ রাখতে হিমশিম খেয়ে যাচ্ছে।
তবে কিছু নিয়ম এবং খাদ্যাভ্যাসে আপনি যদি পরিবর্তন আনতে সক্ষম হন তাহলে আপনি খুব সহজে এবং দ্রুত ওজন কে নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন।আপনি যদি কোন কোন খাদ্য ওজন কমায় সে সম্পর্কে জানতে আগ্রহী হন তাহলে নীচের দেওয়া লিঙ্কে প্রবেশ করুন----
যোগাসন ই আমাদের সব বিষয়ে ইতিবাচক ভাবে ভাবতে সাহায্য করে।আমাদের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি করে। তাই সুস্থ শরীরে দীর্ঘ দিন বাঁচার জন্য নিয়মিত যোগাসন করতেই হবে।
চিত্রসূত্র- pixabay.com
আমি প্রতিদিন যে সমস্ত যোগাসনের দ্বারা,আমার শরীর ও মন কে সুস্থ রাখি সেই যোগাসন গুলি হল------
#.পদ্মাসন:
পদ্মাসন এর উপকারিতা হল-- ফুসফুস অধিক পরিমাণ অক্সিজেন গ্রহণ ও ধারনের সুযোগ পায়।ফলে নিদ্রা, আলস্য, জড়তা দূর হয়।মনের দৃঢ়তা, স্থিরতা ও স্মৃতি শক্তি বৃদ্ধি পায়।
#.উঙ্খিত শবাসন:
পেটের মেদ কমাতে অত্যন্ত কার্যকরী।মেয়েদের তলপেট ঝুলে পড়া, জরায়ুর সমস্যা এবং কটিবাত সেরে যায়।অজীর্ণ, কোষ্ঠবদ্ধতার হাত থেকে রেহাই পাওয়া যায়।
#.নাভি আসন:
সমগ্র দেহের স্নায়ু পেশী সবল হয়।পেটের মেদ কমায়।লিভার ও প্লীহা সুস্থ সবল থাকে।
#.অর্ধ- কূমাসন:
লম্বা হতে সাহায্য করে, হাঁপানি ও হাত পায়ের বাত ভালো হয়।শরীরের মেদ কমায়।
#.ত্রিকোণাসন:
পিঠ ও ঘাড়ের পেশী সবল হয়।ক্ষুধা বৃদ্ধি পায়,কোমরের মেদ ও ব্যাথা বেদনা কমে যায় ।লম্বা হতে সাহায্য করে।
#.কপালভাতি প্রাণায়াম:
মস্তিষ্ক এবং মুখমণ্ডলের ক্লান্তি দূর হয়ে মুখে তেজ এবং সৌন্দর্য বৃদ্ধি পায়।সমস্ত প্রকারের কফ রোগ হাঁপানি, শ্বাসকষ্ট, অ্যালাার্জী, সাইনাস ইত্যাদি রোগ দূর হয়।
মন স্থির শান্ত এবং প্রসন্ন থাকে।মন থেকে সমস্ত হতাশা দূর হয়।
#.শবাসন:
দেহের সমস্ত ক্লান্তি ও অবসাদ দূর হয়।প্রধান আহারের পর কেউ যদি মাত্র কুঁড়ি মিনিট শবাসনে বিশ্রাম নেয়, তাহলে সে অকাল বার্ধক্যের হাত থেকে রেহাই পাবে।মানসিক দুশ্চিন্তা, হতাশা, অনিদ্রা,মাথা ঝিমঝিম করা,স্নায়বিক দুর্বলতা প্রভৃতি রোগ সারাতে এই আসন টি বিশেষ ভাবে সাহায্য করে।
বিশেষ সতর্কতা
দীর্ঘ সময় একই আসনে বসার পর হঠাত্ উঠে যাওয়া উচিত নয়। শারীরিক অসুস্থতার সময়ে যোগাসন করা উচিত নয়। ভরা পেটে কোনও আসন করতে নেই। প্রতিটি আসনের শেষে ও শবাসন করা উচিত।
আসুন এবার আলোকপাত করি আমাদের প্রাত্যহিক জীবন যাত্রায় মেডিটেশন এর উপকারিতা সম্পর্কে------
#1.মস্তিষ্কের ক্রিয়েটিভ ক্ষমতা বাড়ায়:
বর্তমান জীবন যাত্রায় মানুষ এখন বড্ড ব্যস্ত। আর এই ব্যস্ততম জীবনে মানুষের যেন এখন দু'দন্ড দাঁড়াবার সময় নেই।ফলে মানুষের মনে নিজের ই অজান্তেই বাসা বাঁধছে নানা রোগ।এবং কমে যাচ্ছে মস্তিষ্কের ক্রিয়েটিভ ক্ষমতা।
তাই এই মস্তিষ্ক কে চাঙ্গা করতে হলে প্রতিদিন সকালে মেডিটেশন মাস্ট।মেডিটেশন এর উপকারিতা অপরিসীম।
স্বামী বিবেকানন্দ এই মেডিটেশন এর মাধ্যমে ই একটি পুস্তক কয়েক ঘণ্টার মধ্যে পড়তে পারতেন।
কি করে এমনটি সম্ভব তা জানতে চাওয়া য় স্বামীজী বলেছিলেন--
" আমি কখনো কোন বই প্রতিটা শব্দ ধরে পড়ি না, আমি গোটা একটা বাক্য ধরে পড়ি, এমনকি একটা প্যারা ধরেও পড়ে যাই- যেমন নাকি ছবির কলের সামনে একসঙ্গে একখানি বহু বর্ণের চিত্র ভেসে ওঠে ।"
একটিবার ভাবুন তো কি করে এমনটি সম্ভব?
হ্যাঁ সত্যিই সম্ভব যদি আপনি স্বামীজীর মতো ধ্যান করতে পারেন তবেই।
তিনি ছোটবেলা থেকেই মেডিটেশন করতেন।তাঁর কাছে মেডিটেশন ছিল খেলা কারার সমান।
না, আমাদের পক্ষে এতোটা সময় ধরে মেডিটেশন করা সম্ভব নয়।তবে আমরাও যদি দিনের কিছুটা সময় মেডিটেশন করি তাহলে আমরাও আমাদের ক্রিয়েটিভ ক্ষমতা বাড়াতে সক্ষম হব।
#2.বদ অভ্যাস পরিবর্তন হয়:
অনেক মানুষের মনে অনেক সময় বিভিন্ন বদ অভ্যাস কাজ করে। যেমন পরনিন্দা করা, অন্যের সমালোচনা করা, কোন দুর্বল মানুষকে নিয়ে ব্যঙ্গ করে মজা পাওয়া ইত্যাদি বদ অভ্যাস আমাদের মনের মধ্যে অনেক সময় উঁকি দেয়।
এই ধরনের বদ অভ্যাস অনেক সময় আমাদের জীবনে বিপদ ডেকে আনে।এবং এগুলো কোন সুস্থ মানুষেরও লক্ষণ নয়।
তাই এর হাত থেকে রেহাই পেতে পারেন আপনি যদি প্রতিদিন সকালে নিয়ম করে মেডিটেশন করেন তাহলে। মেডিটেশন করলে মন শান্ত হয়, সুন্দর হয়, মন পরিপূর্ণতা পায়।তখন সব কাজ আমরা অনেক ভেবে চিন্তা করে করতে সক্ষম হই।তাই মেডিটেশন এর উপর বর্তমানে মানুষ এতোটা নির্ভরশীল হয়ে উঠছে।
#3.রাগ নিয়ন্ত্রণ করা যায়:
এখন কার বেশিরভাগ মানুষই প্রকান্ড ধৈর্য্য হারা। এখন বিশেষ করে তরুণ তরুণীদের মধ্যে রাগ করার প্রবণতা বেশি লক্ষ্য করা যায়।
রাগ মানুষের জীবনে বিপর্যয় ডেকে আনে।মানুষ যখন রেগে থাকে তখন সে সুস্থ চিন্তা ভাবনার বাইরে চলে যায়। তখন তাঁর রক্তের মধ্যে একধরনের বিষক্রিয়া তৈরি হয়।যেটা পরবর্তীতে তাঁর শরীরে বিভিন্ন রোগ বয়ে আনে।
কিন্তু আপনি সেটা ঘুণাক্ষরেও জানতে পারেন না। কোন মানুষ যদি দেখতে পেত যে, মাত্র পাঁচ মিনিট রাগ করলে বা উত্তেজিত হলে কতটা শরীরের মধ্যে ক্ষতি হয় তাহলে সে কখনোই আর কোন দিন রাগ করত না। তাই রাগ করা থেকে সব সময় বিরত থাকতে-
প্রতিদিন মেডিটেশন করুন।
#4.স্মরণ শক্তি বৃদ্ধি করে:
এখন কার বেশিরভাগ মানুষই বড্ড ভুলো মনা।এখন একটা কথা খুব শোনা যায়, আমার আর আগের মতো সব কিছু মনে থাকে না। এ সমস্যায় এখন প্রচুর মানুষ ভুগছে।
তার মূল কারণ হল আমরা এখন আমাদের মনে রাখার দায় টা প্রযুক্তির হাতে ছেড়ে দিয়েছি।এখন আমরা সাধারণ একটা যোগ বিয়োগ করতে গেলেও যন্ত্রের সাহায্য নিই।ফলে আমাদের মস্তিষ্ক আস্তে আস্তে ভোঁতা হয়ে যাচ্ছে।
আপনি যদি নিয়মিত মেডিটেশন করেন তাহলে এ সমস্যা প্রায় দূর হয়ে যাবে। এক্ষেত্রে মেডিটেশন দারুণ কার্যকরী।
#5.অনিদ্রা থেকে মুক্তি:
এখন বর্তমানে প্রায় সবার মুখে এই একটা কথা শোনা যায় যে, আমার ভাল করে রাতে ঘুম হয় না।
অনিদ্রার অনেক গুলো কারণ আছে তবে সব থেকে যে সমস্যা টা বর্তমানে দেখা যায় সেটা হল সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার। অনেকেই দিনের পর দিন রাত জেগে সোশ্যাল মিডিয়া য় লিপ্ত থাকে, যার ফলে ওটা একটা অভ্যাস এ পরিণত হয়ে যায় এবং তার কারণে ঘুমের ব্যাঘাত ঘটে।
চিত্রসূত্র-pixabay.com
এছাড়া আছে মাত্রাতিরিক্ত দুশ্চিন্তা।দুশ্চিন্তা আমাদের শরীর কে কুঁড়ে কুঁড়ে খেয়ে নেয়।এখন কার মানুষ কথায় কথায় গভীর চিন্তায় মগ্ন হয়ে পড়ে, যার অনেক সময় কোন কারণ ই থাকে না।
আপনি যদি মন শান্ত করে প্রতিটা দিন সকালে কিছু টা সময় মেডিটেশন করেন তাহলে আপনি এই সমস্যার হাত থেকে রেহাই পাবেন।
#6.মানসিক চাপ:
মানসিক চাপ মস্তিষ্কে ভীষণ ক্ষতি করে।ছোট থেকে বড় এখন প্রত্যেকেই মানসিক চাপের কবলে পড়ছে।
বর্তমানে অতিরিক্ত চাহিদা এবং লাগামহীন জীবন যাপন মানুষের মনের স্থিতি নষ্ট করে দিচ্ছে।এখন মানুষ নিজেকে নিয়ে খুশি থাকতে জানে না, এখন সব খুশি যেন তাঁদের মনের বাইরে।
যেমন ভাল ড্রেস না হলে মন ভাল থাকে না, দামী পোশাক না থাকলে, দামী জুতো না থাকলে নিজেকে ঠিক গুরুত্বপূর্ণ মনে হয় না। মোট কথা যত সব উদ্ভট চিন্তা মাথায় প্রবেশ করিয়ে নিজেকে দুঃখ কষ্টের মধ্যে প্রবেশ করাতে ওস্তাদ।
কিন্তু আমাদের সমস্ত ভাল লাগা, সমস্ত সৌন্দর্য লুকিয়ে আছে আমাদের মনের মধ্যে। তাই আগে মনের যত্ন নেওয়া প্রয়োজন। আর এই মনের খোরাক হল মেডিটেশন।
#7.শরীর ও মন সুস্থ থাকে:
কথায় বলে সুস্থ মন সুস্থ জীবন ।মনের শান্তি কিন্তু সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।তবে মনের শান্তির দিক দিয়ে আমরা কোথায় দাঁড়িয়ে?
163 টি দেশ নিয়ে বিশ্বজোড়া সমীক্ষা চালিয়েছে ইনস্টিটিউট ফর ইকনোমিক্স অ্যান্ড পিস। আন্তর্জাতিক মাপকাঠিতে 141 নম্বরে স্থান পেয়েছে ভারত।
তাহলে এবার ভাবুন আমাদের মনের শান্তি কোথায় হারিয়ে গেছে!
তাই জীবন টাকে হিসাব নিকাশের খাতা না বানিয়ে অল্প তে খুশি হওয়ার চেষ্টা করুন।জীবন কে ভাল বাসুন। এবং নিয়মিত মেডিটেশন করুন।তাহলেই জীবন টা খুব সুন্দর হয়ে উঠবে।
#8.অবসাদ থেকে মুক্তি মেলে:
বর্তমানে অবসাদ এর দিক দিয়ে ভারতবর্ষ প্রথম স্থান রয়েছে। অবসাদ থেকে মুক্তি পেতে আমরা সকলেই চাই কিন্তু তার জন্য সামান্য একটু ধ্যান করতে আলস্য বোধ করি।
আপনি কখন বুঝবেন যে আপনি অবসাদের স্বীকার কি না?
যদি কোন মানুষের মন সব সময় উদাসীন থাকে, কিংবা অতিরিক্ত ঘুম পায় বিছানা ছেড়ে উঠতে মন চায় না, বা ঘুম আসে না।এছাড়া খেতে যদি ভাল না লাগে কিংবা সব সময় অতিরিক্ত খিদে পায়, যখন তখন মনের মধ্যে রাগ আসে, সব মানুষ কে অসহ্য লাগে, কারো সঙ্গে কথা বলতে ভালো লাগে না।
চিত্রসূত্র-pixabay.com
এর থেকে মুক্তি পেতে আপনাকে কম পক্ষে প্রতিদিন একঘণ্টা করে মেডিটেশন এবং সঙ্গে যোগাসন করতে হবে।
#9.মনের জড়তা কাটে:
অনেক মানুষ আছে যাঁরা খুব অল্প কথা বলে, সব বিষয়ে মনের মধ্যে ভয় সৃষ্টি করে। কোন সমস্যার সম্মুখীন হলে ভয় পায়। সবার কাছ থেকে নিজেকে লুকিয়ে রাখতে চাই।কোন রকম সমস্যার সম্মুখীন হতে চায় না।
এমন মানুষ পরের জন্য ভাল কিন্তু নিজের জন্য ক্ষতিকর। কারণ এই সমস্ত মানুষের মধ্যে অনেক সৃজনশীল প্রতিভা থাকার সত্ত্বেও শুধু মাত্র ভয় আর লজ্জার কারণে নিজেকে প্রকাশ করতে সক্ষম হন না।
তাই এই সমস্ত মানুষের জন্য মেডিটেশন দারুণ ভূমিকা পালন করে। মেডিটেশন এর মাধ্যমে মনের সব জড়তা দূর করা সম্ভব হয়।
#10.মনঃসংযোগ বৃদ্ধি পায়:
এখন একটা ছোট বাচ্চার মধ্যেও মনঃসংযোগে বড্ড অভাব দেখা দিচ্ছে।বাচ্চাদের মধ্যে এমন হওয়ার কারণ কিন্তু তার বাবা মা র আচরণ।
কারণ বাবা মা যদি উদাসীন হয়, জীবন নিয়ে সব সময় দুশ্চিন্তায় ভোগে তাহলে তার প্রভাব অনেকাংশেই বাচ্চাদের উপর পড়ে।
এর থেকে মুক্তি পেতে বাচ্চাদের খোলা মাঠে ছুটোছুটি করে প্রতিদিন কিছু টা সময় খেলতে দিতে হবে। এবং বাচ্চা থেকে বড় প্রত্যেকেই দিনের কিছু টা সময় অতিবাহিত করতে হবে প্রকৃতির সঙ্গে। তাকিয়ে থাকতে হবে সবুজ গাছ পালার দিকে।
এতে মনঃসংযোগ ফিরে আসে।এছাড়া মেডিটেশন তো মাস্ট ।
তাই সুস্বাস্থ্যের জন্য আমাদের প্রাত্যহিক জীবনে ধ্যানের ভূমিকা অপরিসীম এবং মেডিটেশনর উপকারিতাও সুস্থ জীবনের জন্য অপরিহার্য । কেউ যদি একবার এই মেডিটেশন এর উপকারিতা উপলব্ধি করতে পারে তাহলে সে পরবর্তীতে একব বেলা কম খাবে কিন্তু কম ধ্যান করবে না। কারণ মেডিটেশন এর ফলে মনে অপরিসীম শান্তি মেলে।
যেটার এখন বাজার মূল্য দারুণ জড়া।
তথ্যসূত্র সংগৃহীত।
চিত্রসূত্র- Pixabay. Com.
Tags,মেডিটেশন
ধন্যবাদ 😊
কোন মন্তব্য নেই: