দাম্পত্য জীবনে সুখী হওয়ার উপায়

                        চিত্রসূত্র-pixabay.com

দাম্পত্য জীবনে সুখী হওয়ার উপায়:

   
     ছোটবেলা একটা প্রবাদ আমরা কমবেশি সকলেই শুনেছি। এই প্রবাদের প্রথম লাইন টা আমরা সকলেই বলি,কিন্তু দ্বিতীয় লাইন টা বলতে চাই না,বা বলি না--
                       
        "সংসার সুখের হয় রমণীর গুনে
        উপযুক্ত পতি যদি থাকে তাঁর সনে"
                    

দাম্পত্য জীবনকে সুখে স্বাচ্ছন্দ্যে ভরিয়ে তুলতে,স্বামী স্ত্রী দুজনেরই ভূমিকা অপরিসীম ।পৃথিবীর সমস্ত সুখ শান্তি, ভালো মন্দ,আনন্দ, উত্সব, হাসি খুশি, মজা,অর্থ, সামাজিক জীবন, দাম্পত্য জীবন , পারিবারিক জীবন, দেশ,রাজনীতি এক কথায় সমস্ত পৃথিবীটাই চলছে এই একটি সম্পর্কের উপর ভিত্তি করে।

                যে আজ সন্ন্যাস জীবন গ্রহণ করেছেন, কিংবা যে সারা জীবন অবিবাহিত থেকে জীবন কাটিয়ে দিয়েছেন, সেঁও কিন্তু কোনও না কোনও সম্পর্ক থেকেই এই পৃথিবীতে উত্পত্তি হয়েছেন।তাই প্রতিটা মানুষেরই সৃষ্টির মূলে দাম্পত্য সম্পর্ক।

               অতএব বোঝাই যাচ্ছে এই সম্পর্কের কতটা মূল্য।পৃথিবীর কোনও প্রাণীকুল ই এই সম্পর্কের বাইরে নয় । কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে এই সম্পর্ক নিয়ে আমরা কতটা সচেতন? এই সম্পর্ক কে সুখী করার জন্য আমরা কতটা মানসিক ভাবে প্রস্তুত থাকি? কি কি পদ্ধতি অবলম্বন করলে দাম্পত্য জীবন কে সুখে রাখা সম্ভব? কখনো কি এই বিষয় গুলো জানার বা বোঝার আমরা আগ্রহ প্রকাশ করি? এই সম্পর্ক কে সুস্থ রাখতে গেলে কতটাই বা বোঝাপড়ার প্রয়োজন? 

        না, আমরা এতো কিছু ভাবার বা বোঝার প্রয়োজন বোধ করি না। একশো জনের মধ্যে পাঁচ জন ও উপরিক্ত বিষয় গুলো নিয়ে কখনোই ভাবিত নন। অথচ একটা সময়ের পর প্রায় প্রতিটা মানুষই দাম্পত্য সম্পর্কে লিপ্ত হওয়ার জন্য প্রস্তুত হন। কিন্তু কিভাবে বিবাহিত জীবন কে সুখে, শান্তিতে ভরিয়ে তোলা সম্ভব এই বিষয় টা নিয়ে জ্ঞান আহরণের কোনও চেষ্টাই করে না।

      একটা চাকরি করতে গেলে, আগে সেই সম্পর্কে প্রচুর পড়াশোনা করতে হয়। এখন আমরা কোনও প্রসাধনী সামগ্রী কিনতে গেলেও আগে তার সম্পর্কে বিস্তারিত খুঁটি নাটি জেনে নিই।আর জীবনের সব থেকে বড় সিদ্ধান্ত টা নিই অন্ধের মতো! ফলে হোঁচট খেয়ে হয়, প্রতি পদে পদে।

          বর্তমানে বেশির ভাগ দাম্পত্য জীবন অসুখী হওয়ার মূল কারণ হল, দাম্পত্য জীবন সম্পর্কে ভুল ধারণা।প্রচুর বিবাহিত নর নারী আছেন, যাঁরা নিজেরাই জানে না , তাঁদের মূল চাহিদা টা কি? বা তাঁদের চাওয়া টা কতটা বাস্তবসম্মত! 

                      অবস্থা টা এমন দাঁড়ায় যে, দাম্পত্য জীবনে প্রবেশ করতে হয় তাই আমি ও করছি।সবাই যেটা করে আমিও তাইই করছি।এবং তাঁর সঙ্গী সম্পর্কে ধারণা থাকে, তাঁর প্রিয় কোনও সিনেমার নায়ক, নায়িকার মতো।

                   এমন প্রচুর মানুষ আছেন যাঁরা ভাবেন যে, ইস্ আমার জীবন সঙ্গীনি এটা না হয়ে অন্য কেউ হলে ভাল হত।বা আমি যদি অমুককে বিবাহ করতে পারতাম তাহলে  জীবনে বেশি সুখী  হতাম।

                     একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে প্রায় পঞ্চাশ শতাংশ বিবাহিত পুরুষ ভাবে আমার স্ত্রী যদি অন্য কেউ হত,অথবা আমি যদি  অন্য কাউকে স্বামী হিসাবে পেতাম  তাহলে আমি জীবনে  বেশি সুখী হতাম,বা আমার জীবন  টা সম্পন্ন আলাদা হতো।

                মানুষের মনে বহুযুগ ধরে এই চিন্তা বয়ে চলেছে।আর এই চিন্তার ফলে মনে জন্ম নেয় অসন্তোষ। বৈবাহিক জীবনে কোন সমস্যা এলে মানুুষ তখন নিজের ভাগ্য কে দোষারোপ করে ফলে সম্পর্কের মধ্যে শ্রদ্ধা টা কমতে থাকে।

                  এই পরিস্থিতিতে যেটা দরকারি সেটা হল দৃষ্টিভঙ্গির বদল ঘটানোর প্রয়োজন।এটা পুরো মানসিকতার ব্যাপার। আমাদের ভাবনাই আমাদের জীবন। আমি আমার সাংসারিক অভিজ্ঞতা থেকে এটুুকু বলতে পারি, আপনি যদি ভাবেন আমি বিবাহিত জীবনে সুখী নই তাহলে আপনি কোন সুখ কে অনুভব করতে পারবেন না।

                আমাদের মস্তিষ্ক এমন ভাবে কাজ করে যে আমরা সচেতন মনে যেটা ভাবি অবচেতন মন সেটাকেই সত্যি করে।আপনি যদি ভাবেন যে আপনি বিবাহিত জীবনে ভীষণ সুখী তাহলে আপনার যেটুকু আছে বা যেমন সঙ্গী ই আপনি পান না কেনো তাঁকে নিয়েই অনন্ত কাল সুখে শান্তিতে বসবাস করতে পারবেন।সব কিছু আমাদের ভাবনার উপরে নির্ভর করে।


সবাই ই চাই তাঁর সঙ্গী টি যেন তাঁর, একশো শতাংশ মনের মতো হয়।কিন্তু বাস্তবে এটা কখনোই সম্ভব নয়। কোনও মানুষ ই হুবুহু অন্যের মতো হতে পারে না। আমাদের মুখের আকৃতিতে যেমন কেউ কারো সঙ্গে মিল নেই, ঠিক তেমনি মানসিক দিক দিয়েও একজন আর একজনের মতো হওয়া সম্ভব নয়।ভুল টুঁটি, ভালো, মন্দ, হাসি, কান্না,সুখ দুঃখ, আনন্দ, মন খারাপ নিয়েই তো জীবন। এই পৃথিবীতে পারফেক্ট বলে কিছু হয় না।যে ভালো, খারাপ সব কিছু তেই পারফেক্ট বলে মনে করে, সেই দাম্পত্য জীবন ই সুখের হয়। 
                         চিত্রসূত্র-pixabay.com

        দাম্পত্য জীবনে সুখ পেতে গেলে, আগে দুজন দুজনকে বুঝতে হবে।নিজের চাহিদা টা কম রেখে, পাশের মানুষ টা র কি প্রয়োজন সেটা বোঝার চেষ্টা করতে হবে।অভিযোগ, অসন্তোষ করা বন্ধ করতে হবে।স্বামী স্ত্রী কম, বন্ধু বেশি হতে হবে।

             সব পরিস্থিতিতে মানিয়ে চলার মানসিকতা তৈরি করতে হবে। কেউ একজন বলে দিয়েছে যে,দাম্পত্য জীবন এমন এমন হয়,আর আপনি আপনার সঙ্গীর মধ্যে সেই গুন গুলো খুঁজতে লাগলেন, এবং না পেলে ভাবতে বসলেন আমার দাম্পত্য জীবন বুঝি সুখের নয়! কারণ আমার বন্ধুর স্ত্রী বা স্বামীর মধ্যে এই এই গুন গুলো আছে কিন্তু আমার স্ত্রী বা স্বামীর মধ্যে নেই কেনো?

                  সম্পর্কের মধ্যে সংশয় বা হিসাব কিতাব চলে এলে সে সম্পর্ক কখনোই সুখের হয় না।কিংবা আপনাদের সম্পর্ক টা, কেনোই বা অন্য জনের মতোই হতে হবে? মূল চাহিদা টা থাক ,সুখী হব।স্বামী স্ত্রী র সম্পর্কের মধ্যে একটা মাধুর্য রাখব।ব্যাস একটু করলেই সারা জীবন সুখে শান্তিতে সংসার করা সম্ভব।

                  কিন্তু দুঃখের বিষয় ,আমাদের সমাজ ব্যবস্থায় বিবাহ শুধু দুটি মানুষের মধ্যে হয় না।বিবাহ যেন দুটি পরিবারের সঙ্গে হয়! তাই তো এখনো বেশির ভাগ বিবাহ সুসম্পন্ন হয়, পাত্র পাত্রীর মতামত ছাড়াই! বা লৌকিকতার খাতিরে একটি বার জিজ্ঞাসা করে কিন্তু সিদ্ধান্ত নেওয়ার কোনও অধিকার থাকে না পাত্র বা পাত্রীর।

                জীবনের সব থেকে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, জানা বোঝার আগেই সুসম্পন্ন হয়ে যায়।কিংবা নিজে পছন্দ করে বিবাহ করলেও বিবাহ কে, যতটা গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন, ততটা আমরা দিই না। ফলে জীবন এক জটিল আকার ধারণ করে।যার ফল ভোগ করতে হয় আজীবন। এই সম্পর্ক কে দায় ভাবলে সমস্যা, ভালোবেসে দায়িত্ব গ্রহণ করলে সম্পর্ক টা সুস্থ থাকে।

             স্বামী স্ত্রীর সম্পর্ক কে ধ্বংসের মুখে নিয়ে যায়,  অভিযোগ  আর অসন্তুষ্টি। কোনও মানুষ ই তাঁর নিজের সম্পর্কে খারাপ কিছু শুনতে চায় না। সেটা স্বামী, স্ত্রী যে কেও হতে পারে। একটু খানি প্রশংসা একটা সম্পর্ক কে নতুন প্রাণ দেয়।

কি কি পদ্ধতি অবলম্বন করলে দাম্পত্য জীবন কে সুখে রাখা সম্ভব, সে সম্পর্কে ---গ্যারি চ্যাপম্যান  তাঁর  

             "ফাইভ লাভ ল্যাংগুয়েজেস"---গ্রন্থ  এ বলেছেন ----

#1.প্রশংসা সূচক আলাপ:

                                       দাম্পত্য জীবন কে সুখী করতে একটু খানি প্রশংসা জাদু অকল্পনীয়।আপনার স্ত্রীর রান্নার একটু খানি প্রশংসা করে দেখুন না, সে সেদিন আনন্দে উচ্ছ্বসিত হয়ে থাকবে।তাঁর সারাদিন টা আনন্দে ভরে উঠবে।তাঁর কাছে সংসারে কোন কাজ ই আর সেদিন বোঝা মনে হবে না

              আমরা একে অপরের প্রশংসা করতে লজ্জা পায় বা এই বিষয়টি কে গুরুত্বপূর্ণ মনে করি না।কিন্তু পৃথিবীর প্রতিটা মানুষই নিজের সম্পর্কে একটু প্রশংসা শুনতে উদগ্রীব হয়ে ওঠে।আর সেটা যদি স্ত্রী কিংবা স্বামী একটু খানি ভাল বলে বা সুখেত করে তাহলে তার মতো বড় পাওয়া আর কিছুই নেই।

            

            তাই আপনিও একটু আপনার স্বামী কে বলে দেখুন না যে, তোমার কাছে এসে, আমি খুব সুখী।তুমি আমার জীবন টা সুন্দরে ভরিয়ে তুলেছ।বা তোমাকে দেখতে আজ খুব মিষ্টি লাগছে।
                     শুধু এইটুকু করলেই সম্পর্কের মাধুর্য হাজার গুন বেড়ে যাবে।
                       চিত্রসূত্র-pixabay.com

#2.কোয়ালিটি টাইম:

                                শত কাজ থাকলেও কিছু কিছু সময় সব কাজ বন্ধ রেখে একান্তে কিছু টা সময় অতিবাহিত করা উচিত।প্রতিদিন কিছু টা সময় দুজনে এক সঙ্গে বসে কথা বলা উচিত।একে অপরের ভাল লাগা খারাপ লাগা গুলো ভাগ করে নেওয়া প্রয়োজন।

           এছাড়া স্বামী বা স্ত্রীর জন্মদিন বা বিবাহ বার্ষিকী উপলক্ষে বাইরে একটু খাওয়া দাওয়া কিংবা কিছুটা সময় কাটানো যেতেই পারে।এর মাধ্যমেও ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ করা সম্ভব।
                      চিত্রসূত্র-pixabay.com

#3.উপহার পাওয়া:

                             মাঝে মাঝে হঠাত্ কোনও উপলক্ষ ছাড়াই উপহার পেতে মন্দ লাগে না। এতেও গভীর ভালোবাসার প্রকাশ ঘটে। 

           তার মানে কিন্তু এই নয় যে কোনও দামি উপহার দিতে হবে।হঠাত্ করে সঙ্গীর কাছ থেকে এক গোছা ফুল পাওয়া ও ভীষণ দামি। 
                      চিত্রসূত্র-pixabay.com

#4.ভালোবাসা কাজে প্রমাণ করে দেখানো:

                                                                   বাড়ির কাজে স্বামী ও কিছু কিছু সময় সাহায্য করলে স্ত্রী ভীষণ খুশি হয়। 

             সখ করে স্বামী মাঝে মাঝে রান্না করলে মন্দ কি। কিংবা বাইরের কিছু কাজ যেমন ইলেকট্রিক বিল টা, বা একটু বাজার স্ত্রী ও করতেই পারে। এটাও হতে পারে আপনার সঙ্গীর ভালোবাসা অনুভব করানোর একটি পন্থা।
দাম্পত্য সুখ
                    চিত্রসূত্র-pixabay.com
           সম্পর্ক সুখের তখনই হয় যখন একজন অর একজনের পরিপূরক হয়ে ওঠা যায়।এখানে কোন দায় চাপিয়ে দেওয়া নয়, ভালোবেসে দায়িত্ব নিতে হয়।
 

#5.শারীরিক স্পর্শ:

                            রাস্তায় চলতে চলতে মাঝে সাঁঝে একটু হাতের ছোঁয়া ভীষণ আনন্দের। বা আলতো করে একটু মাথায় হাত বুলিয়ে দেওয়া।
        ভালোবাসা বোঝানোর এই ভাষা টিও খুব মিষ্টি।
                      চিত্রসূত্র-pixabay.com
 দাম্পত্য জীবনে সুখ শান্তি আনতে বিশাল কিছু করার প্রয়োজন হয় না।প্রয়োজন শুধু একটু দুজন দুজনকে বোঝার। এই জীবনে সুখী না হতে পারলে তাঁদের পুরো জীবন টাই বৃথা।

               ছোট্ট এই জীবনে হাসি, মজা, আনন্দ করে কাটানোই হোক সকলের প্রধান চাহিদা। দুঃখ করে, অনুতাপ করে সময় নষ্ট করা যাবে না, দুঃখ কে অতিক্রম করে কিভাবে সুখ আনা যায় সেই রাস্তা খুঁজতে হবে। 

                আমাদের ভাবনার মধ্যেই সুখ দুঃখ লুকিয়ে। আপনি যদি রোমান্টিক গান শুনতে চান, তাহলে কি করেন? নিশ্চয়ই দুঃখের গানের চ্যানেল টা পরিবর্তন করে দেন।এবং রোমান্টিক গানের চ্যানেল খোঁজেন এবং সেই চ্যানেলে স্থির হন।

         ঠিক এই ভাবে আমরা আমাদের ভাবনাকেও পরিবর্তন করতে পারি। যদি ইচ্ছা করি তবেই। ভাবনাই সব, ভালো ভাবুন, সব কিছু ভালো হবে।আর এই ভালো ভাবনা আনার জন্য প্রচুর বই পড়ুন। বই পড়লে শুধু দাম্পত্য সম্পর্ক ই নয় সব সম্পর্ক সুন্দর হতে বাধ্য।


         আর আপনি যদি সবে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার জন্য সংকল্প নিয়ে থাকেন তাহলে তার আগে অবশ্যই পড়ুন---
         
       যদি আমার লেখা ভাল লেগে থাকে তাহলে শেয়ার করতে ভুলবেন না।আর অবশ্য অবশ্যই সাবস্কাইব করবেন এবং ছোট্ট একটা কমেন্টস করবেন তাহলে আমি অনুপ্রাণিত হব আপনার কমেন্টসর মাধ্যমে।

Tags,দাম্পত্য সুখ

তথ্যসূত্র সংগৃহীত।

চিত্র সূত্র-pixabay.com

ধন্যবাদ 😊

       
         

কোন মন্তব্য নেই:

Blogger দ্বারা পরিচালিত.