মুক্ত সম্পর্ক বা ওপেন রিলেশনশিপ কি?
মুক্ত সম্পর্ক বা ওপেন রিলেশনশিপ কি?
আজকে সম্পূর্ণ নতুন একটি বিষয় জানব। আজকে জানব- মুক্ত সম্পর্ক বা ওপেন রিলেশনশিপ আসলে কি বা কাকে বলে? এ সম্পর্কে কিছু কথা কিছু তথ্য। ওপেন রিলেশনশিপ মানে উন্মুক্ত সম্পর্ক।যে সম্পর্ক খোলা মেলা। যেখানে কোন বিষয়ে লুকোচুরি নেই। তবে আজকের আর্টিকেল শুরু করার আগে অন্য আর একটি বিষয় একটু সবাই কে স্পষ্ট করে বলতে চাই। আমরা যাঁরা ফেসবুকে আছি তাঁরা একটা বিষয় প্রায়ই লক্ষ্য করে থাকি। এখন অনেকেই রিলেশনশিপে প্রবেশ করলে স্ট্যাটাস দেয়---
" In an open relationships " and " in a relationship"
বেশিরভাগ মানুষেরই কোন ধারণা নেই যে তাঁরা কি লিখছে! এরা না জেনে দিনের পর দিন ভুল কথা লিখে যাচ্ছে। আগে তো জানতে হবে ওপেন রিলেশনশিপের মানে টা আসলে কি? ওপেন রিলেশনশিপ কাকে বলে?
ওপেন রিলেশনশিপ মানে-- দুটি মানুষ একসঙ্গে থাকবে, শারীরিক সম্পর্কে লিপ্ত হবে কিন্তু কেউ কারো ব্যক্তিগত সম্পত্তি নয়। দুজনের মধ্যে একটা চুক্তি থাকবে যে, দুজনের মধ্যে যে কেউ যখন তখন অন্য সম্পর্কে লিপ্ত হতে পারবে তাঁর যদি ইচ্ছা হয় তবে। এখানে কেউ কাউকে বাঁধা দিতে পারবে না।
চিত্র সূত্র- pixabay.com
ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেওয়ার আগে আপনি এটা সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন তার পরে যদি আপনি এমন সম্পর্কে জড়িত থাকেন তাহলে স্ট্যাটাস দেন তাতে কোন সমস্যা নেই। তবে দয়া করে আগে বিষয়টি বুঝুন।
ওপেন রিলেশনশিপ কনসেপ্ট টায় উইকিপিডিয়াতে বলা হয়েছে---
এটা এমন একটা ধারণা যা ১৯৭০ সাল থেকেই পশ্চিমা বিশ্বে অনুমোদিত হয়ে আসছে। যেখানে একজন নারী বা পুরুষ তাঁদের মনের মানুষ হিসাবে দুই বা ততোধিক জনকে রাখতে পারবে এবং তাঁরা একে অপরকে শয্যায় আহ্বান করতে পারবে। দলবদ্ধ হয়ে বা যেমন খুশি তেমন ভাবে। এই সম্পর্ক দীর্ঘ মেয়াদি বা স্বল্প মেয়াদি যে কোন ধরনের হতে পারে।
এবার প্রশ্ন হল আমাদের এখানে ওপেন রিলেশনশিপের প্রভাব কতটা?
এ প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে হলে অনেক গভীরে প্রবেশ করতে হবে। এখন বর্তমান প্রজন্ম জীবন নির্বাহ করে উদাসীন ভাবে। স্বীকার না করলেও প্রচুর ছেলেমেয়ে এমন সম্পর্কে বেশ বিশ্বাসী। কারণ এখানে কোন দায় নেই, দায়িত্ব নেই।
এই আর্টিকেল লেখার আগে আমি কিছু আর্টিকেল পড়ছিলাম, এই বিষয়ে কে কেমন কি লিখেছে দেখছিলাম। তো একটা আর্টিকেল আমার খুব ভালো লাগল। সেখানে যে যুক্তি দেওয়া হয়েছে সেটা এই রূপ---
কোন প্রেমিক বা প্রেমিকা দুজন দুজনকে ভালোবাসে বা যদি বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয় তাহলে এটা কখনোই হতে পারে না যে, তারা একে অপরের সেক্সুয়ালিটির মালিক।
ওপেন রিলেশনশিপ মানে যে সব সময় অধিক নারী পুরুষের সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক থাকবে তা কিন্তু নয়। দুজন হয়তো ভালোবেসে বা পছন্দ করে বিয়ে করেছে, কিন্তু শারীরিক সম্পর্কে লিপ্ত হওয়ার জন্য কেউ কাউকে জোর করতে পারবে না। যখন দুজনেরই ইচ্ছা হবে তখন তাঁরা সম্পর্কে লিপ্ত হবেন। এটাকেও ওপেন রিলেশনশিপ বলে।
তবে এই পদ্ধতি কজন জীবনে প্রয়োগ করে এটাই হল আসল কথা। আমাদের সমাজ ব্যবস্থায় সব সময় পুরুষ তাঁর অধিকার জাহির করে আসে। এখানে নারী নিতান্তই বেশিরভাগ সময়ই তাঁর পাশের মানুষ টার চাহিদা পূরণের যন্ত্র ছাড়া আর কিছুই নয়। যদিও শিক্ষিত ছেলে মেয়ের মধ্যে এই বিষয়ে বোঝাপড়াটা অনেক ভালো, অনেক উন্নত। কিন্তু যাঁদের মধ্যে শিক্ষার আলো বিন্দু মাত্র নেই তাঁরা এটাকে অত্যাচারে পরিণত করে।
ফিরে যায় আগের প্রসঙ্গে--- বর্তমান প্রজন্ম " কমিটমেন্ট ফোবিক" এরা কোন দায়বদ্ধতর মধ্যে যেতে চাইছে না। যেটা আমার মনে হয় বিকৃত মানসিকতার লক্ষণ।
বেশ কিছু বছর আগে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের একটি লেখা পড়ছিলাম। তিনি পশ্চিমা বিশ্বের কথা লিখেছিলেন। ওখানে নাকি আমাদের এখানে যেমন ATM এ টাকা তোলা যায় ওখানে নাকি ওমন করে রাস্তার পাশে পাশে মেশিনের মধ্যে কন্ডম রাখা থাকে। যখন যাঁর যেখানে প্রয়োজন তখন সে কন্ডম নিয়ে তাঁর চাহিদা পূরণ করে নিতে পারে। বেশ কিছু বছরের আগে পড়া ফলে আমার চক্ষু ছানাবড়া হয়ে গিয়েছিল। বিশ্বাস করতে মন চাইছিল না কিন্তু এমন একজন ব্যক্তির লেখা যে অবিশ্বাসের কোন জায়গা নেই।
তবে এখন যখন আমি রিলেশনশিপ নিয়ে বিভিন্ন বই পত্র পড়ছি, অনেক বিষয় জানছি, দেখছি তাতে আমার মনে একটাই প্রশ্ন উঁকি দিচ্ছে---
এমন সম্পর্কে সুখ কতটা? আদেও কি এতে মানসিক শান্তি থাকে?
তথ্য বলছে-- পশ্চিমাবিশ্বের মানুষ সব থেকে বেশি রোগ গ্রস্ত এবং মানসিক বিপর্যয়ের মধ্যে প্রবেশ করে ওখান কার তরুণ প্রজন্ম। এর কারণ আর নতুন করে বলার কিছু নেই। সম্পর্কের মধ্যে যৌন ঈর্ষা খুবই স্বাভাবিক। পৃথিবীর কোন মানুষ ই এর ব্যতিক্রম নয়। কিন্তু যাঁরা ওপেন রিলেশনশিপে থাকে তাঁরা সবার দেখানো পথে চলে কিন্তু মনের মধ্যে থাকে দ্বন্দ্ব, ফলে একটা মানসিক সমস্যা দেখা দেয়। কিন্তু ওপেন রিলেশনশিপে যৌন ঈর্ষার কোন জায়গা নেই। আপনার সঙ্গী আপনাকে যতটা গুরুত্বপূর্ণ মনে করছে বা গুরুত্ব দিচ্ছে সেই একি গুরুত্ব অন্য কাউকে দিলে ঈর্ষাকাতর হলে চলবে না।তবে এর ব্যতিক্রমী মানুষ ও আছে। যাঁরা ওপেন রিলেশনশিপে দীর্ঘদিন কাটিয়েছেন কোন দ্বন্দ্ব, ঝামেলা ছাড়াই। সব টাই নির্ভর করে যার যার মানসিকতার উপরে।
পশ্চিমা বিশ্বের একটি উদাহরণ দিই--
ডেব্বি ডাউসেট এবং টনি উইলিয়ামস দীর্ঘ সতেরো বছর ওপেন রিলেশনশিপে ছিলেন। তাঁদের মধ্যে শর্ত ছিল- দুজনেই আলাদা সম্পর্কে লিপ্ত হতে পারবেন।তবে কেউ কোন দিন কারো কাছে কৈফিয়ত চাইতে পারবে না।তাঁরা সেই শর্ত মেনে চার বছরের মধ্যেই প্রায় ত্রিশ টি সম্পর্কে লিপ্ত হয়েছিলেন। এবং
তাঁরা একসঙ্গে সেই শর্ত মেনে সতেরোটি বছর কাটিয়ে দিয়েছিলেন।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে-- এমন মানসিকতা তৈরি করা কি সম্ভব? বা এটা সমাজের পক্ষে কতটা স্বাস্থ্যকর!
আমাদের দেশ বা সাংস্কৃতিক পরিবেশ অন্য দেশের থেকে ভিন্ন। আমরা মিষ্টি সম্পর্কে বিশ্বাসী। পরিবার পরিকল্পনায় বিশ্বাসী। যেটা ছোট থেকে দেখে আসছি বা দেখছি সেটাকেই আঁকড়ে ধরে আমরা বাঁচি।কিন্তু মুশকিল হয়ে দাঁড়িয়েছে অন্যত্র। আমাদের এখানকার জেনারেশন ওপেন রিলেশনশিপে না প্রবেশ করলেও-- পরকীয়া সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ছে ব্যাপকহারে। কোন বাবা বা মা যদি পরকীয়া সম্পর্কে লিপ্ত থাকেন তাহলে তাঁর বাচ্চার মনে সম্পর্কের প্রতি ঘৃণা আসতে বাধ্য হবে। এবং সে বড় হয়ে ওপেন রিলেশনশিপে জড়াতেই পছন্দ করবে। তাই সমাজ যদি সাবধানতা অবলম্বন না করে তাহলে ভবিষ্যতে ওপেন রিলেশনশিপের প্রভাব বাড়বে।
একটা বিষয় আমরা যদি লক্ষ্য করি তাহলে দেখতে পাব-- এখন সম্পর্কের মধ্যে শারীরিক সম্পর্ক টা যেন ডাল ভাত হয়ে গেছে। প্রেমের প্রথম শর্ত যেন, শারীরিক সম্পর্কে লিপ্ত হওয়া। কোন সম্পর্কে লিপ্ত হওয়ার আগে অনেক প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয় কিন্তু ঠুনকো কথায় সম্পর্ক থেকে বেড়িয়ে যাচ্ছে তাঁদের মধ্যে কোন অনুশোচনা পর্যন্ত নেই। আবার তাঁরা লিপ্ত হচ্ছে নতুন আর একটি সম্পর্কে! এছাড়া বিবাহিত পুরুষ এবং নারী ও একাধিক সম্পর্কে জড়াচ্ছে কোন অনুশোচনা ছাড়াই।
আমার কথা হচ্ছে, যদি একটা সম্পর্ক ভালো না লাগে বা কোন কারণে ভুল সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছি বলে মনে হয় তাহলে সেখান থেকে বেড়িয়ে গিয়ে আবার নতুন জীবন শুরু করা যেতেই পারে কিন্তু এক সঙ্গে একাধিক সম্পর্কে লিপ্ত থাকাটাই হল নোংরামো।
ওপেন রিলেশনশিপ মানে, দুজন দুজনের অনুমতি নিয়ে অন্য সম্পর্কে লিপ্ত হওয়া। আমি মনে করি এ পরকীয়ার থেকে অনেক ভালো । এখানে কোউ কারো বিশ্বাস নষ্ট করে না। যা করে জেনে বুঝে করে।
কিন্তু আমাদের সমাজে যেটা শুরু হয়েছে, সেটা পরবর্তীতে খারাপ দিকে যাবে এটা কিন্তু আর বলার অপেক্ষা রাখে না।
আর এটা সমাজের থেকেও নিজের স্বাস্থ্যর প্রতি যদি কারো বিন্দুমাত্র মায়া থাকে তাহলে সে এই সব কর্ম থেকে বিরত থাকবে। কারণ-- বহু গামী সম্পর্ক যৌন রোগের বাহক। যৌবনের একটা ভুল সিদ্ধান্ত জীবন নষ্ট করে দিতে পারে।
গত সপ্তাহের প্রতিদিন রোববার এ পড়ছিলাম--
উইলিয়াম শেক্সপিয়র ছিলেন বহু সম্পর্কে লিপ্ত। তাঁর Anthony Burgess রচিত উপন্যাস-- "Nothing like the sun" এ অ্যান্টনি বার্জেস শেক্সপিয়রের উন্মুক্ত সম্পর্কে দিক তুলে ধরেছেন। সে বিষয়ে অন্য একদিন আলোচনাা করব। তবে আজকে যেটা উল্লেখ করব সেটা হল -- উইলিয়াম শেকসপিয়র শেষ জীবনে যৌন রোগের কবলে পড়ে মারা যান।
এই কারণেই একাধিক সম্পর্কে লিপ্ত হওয়া নিজের জন্য বোকামি ছাড়া আর কিছুই নয়। একটি সম্পর্কের মধ্যে ইচ্ছা করলে প্রতি নিয়ত নতুনত্ব আনা যায়। তার জন্য চাই সুস্থ মানসিকতা।
ভবিষ্যতে যাঁরা ওপেন রিলেশনশিপে যেতে চান তাঁদের জন্য কিছু পরামর্শ------
#1. নিজের মন কে প্রশ্ন করুন:
আবেগে গা না ভাসিয়ে নিজের মন কে প্রশ্ন করুন। একবার ভুুুল সিদ্ধান্ত নিয়ে নিলে সেখান থেকে বেড়িয়ে আসা মুুুুশকিল। আপনার মন কি চাই তা বোঝার চেষ্টা করুন। এই সম্পর্কে অন্যের দায় হয়তো নেই কিন্তুু আপনার মানে নিজেকে ভালো রাখার দায় কিন্তু আপনারই।তাই সিদ্ধান্ত নিতে হবে ভেবে।
আপনার সঙ্গী অন্য কাউকে বিছানায় তুলবে এটা কতটা সহ্য করতে পারবেন সেটা ভালো করে ভেবে দেখুন। আধুনিক ভালো অত্যাধুনিক অত্যন্ত খারাপ।
#2. সময় নিন:
সময় নিয়ে সিদ্ধান্ত নিন। মন কে বারবার প্রশ্ন করুন। জীবন টা খেলনা নয়, জীবন অনেক দামি। তাই যে কোন কাজ করার আগে অবশ্যই সময় নিয়ে করুন।
#3.ওপেন রিলেশনশিপ মানে কি শুধু যৌনতা:
না ওপেন রিলেশনশিপ মানে শুধু যৌনতা নয়, সম্পর্কের মধ্যে অনেক রকমভেদ আছে। যৌনতা বাদ দিয়েও সম্পর্ক হয়, তবে একটি নারী এবং পুরুষের সম্পর্ক মানে সেখানে যৌনতা থাকবেই, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ।
#4. খোলা মেলা কথা বলুন:
যাঁর সঙ্গে ওপেন রিলেশনশিপে যেতে চান তাঁর সঙ্গে এ বিষয়ে খোলামেলা কথা বলুুুন। তার মনোভাব বুঝুুন।
সম্পর্কে লিপ্ত হওয়ার পরে যেন কোন সমস্যায় না পড়তে হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখুন।
উপসংহার
সম্পর্ক মানে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে একটা মিষ্টি সম্পর্ক শুরু করাই জীবনের প্রধান কর্তব্য বা সৌন্দর্য। এর বাইরে গেলে জীবন উপভোগের চেয়ে অপভোগ হয়ে যাবে।
যাঁরা ওপেন রিলেশনশিপে থাকে তাঁরা কখনোই সন্তান ধারণ করতে পারে না। আর উচিত ও নয়। কারণ একটি শিশুকে এই সমাজের সামনে বিপদের মুখে ফেলে দেওয়া কারো অধিকার নেই। বাবা মায়ের ফুর্তির কারণে সন্তানের জীবন নষ্ট হবে।
আমাদের সামাজিক ভাবে জীবন যাপন করাটাই আমাদের জন্য যেমন মঙ্গল তেমনি সমাজ এবং পরিবারের জন্যও মঙ্গল। কারণ প্রকৃতির বিরুদ্ধে যে যায় সেই বিলুপ্ত হয়ে যায়। তাই সিদ্ধান্ত নিন ভেবে চিন্তে।
ধন্যবাদ।
চিত্র সূত্র- pixabay.com
তথ্যসূত্র- এবেলা পত্রিকা, প্রতিদিন রোববার, আনন্দবাজার পত্রিকা, টাইমস অব ইন্ডিয়া এবং নিজস্ব মতামত।
TAGS, উইমেন চ্যাপ্টার,ওপেন রিলেশনশিপ,মানসিক সম্পর্ক,,মুক্ত সম্পর্ক ।
কোন মন্তব্য নেই: