দাম্পত্য সম্পর্কে টানাপোড়েন

 দাম্পত্যে টানাপোড়েন:

                                         দাম্পত্য সম্পর্কের মধ্যে টানাপোড়েন এখন প্রতিটা ঘরে বিদ্যমান।সুুুুখী দাম্পত্য জীবনের খোঁজ এখন দূূূূূরবীন  দিয়ে খুুুুঁজলেও প্রায় অমিল।দুটি   মানুষের মধ্যে মনের মিল ই  একটি সম্পর্কের মূল বাঁধন।কিন্তুু সেই মনের মিলেরই  এখন বড্ড অভাব ।


                মনের মিল থেকে শুরু হয় বন্ধুত্ব, পরে সেই বন্ধুত্ব প্রেম-ভালোবাসায় রূপান্তরিত হয় এবং যার শুভ পরিণতি ঘটে বিবাহের মধ্যে দিয়ে।

দাম্পত্য টানাপোড়েন
                       চিত্রসূত্র- pixabay.com 

                আবার যাঁদের সমন্ধ করে বিয়ে হয় তাঁদের ক্ষেত্রে বিয়ের পর তৈরি হয় বন্ধুত্ব এবং পরে সেটা ভালোবাসা রূপে প্রকাশ পায়।তবে সব ক্ষেত্রেই মনের মিল থাকাটা ভীষণ জরুরী।এই মনের মিলে কোন রকম অমিল দেখা দিলে সেই সম্পর্কে মধ্যে চিড় ধরে।তখন সব ভালোবাসার রং বেরঙিন হতে শুরু করে।এবং দাম্পত্য সম্পর্কের মধ্যে টানাপোড়েন তৈরি হয়।

                কোন সম্পর্কের মধ্যে যখন স্বাভাবিক ছন্দটা নষ্ট হতে শুরু করে তখন যদি ঐ দু'টি মানুষের মধ্যে কেউ একজন এগিয়ে এসে দু'জনের মধ্যে বাড়তে থাকা ফাঁক টাকে মেরামতির চেষ্টা না করে এবং দীর্ঘদিন ধরে একই নিয়ম চলতে থাকলে সে সম্পর্কের ভাঙন অনিবার্য।

          পরিসংখ্যান বলছে, উন্নত দেশ গুলির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে আমাদের দেশেও বিবাহ বিচ্ছেদের হার ভয়ঙ্কর ভাবে বেড়ে চলেছে এবং যার প্রভাব পড়ছে সন্তান, পরিবার,  এবং সমাজের উপর।বিবাহ বিচ্ছেদের পরিসংখ্যান দিন কে দিন ডবল হচ্ছে। বিবাহ বিচ্ছেদের হাত থেকে রেহাই পেতে চাইলে নীচের দেওয়া লিঙ্কে প্রবেশ করুন এবং বিস্তারিত জানুন-----



               একটি সম্পর্কের মধ্যে কেনো টানাপোড়েন শুরু হয় সেটা বুঝতে হলে সম্পর্কের শুরু টা কিভাবে সেটা জানতে হবে। যদি ভালোবাসার বিয়ে হয় তাহলেও তার মধ্যে অনেক রকমফের আছে। সব ভালোবাসা এক নয়,সব ভালোবাসার প্রকাশ ভঙ্গি, আচার আচরণ, মিষ্টতা কিন্তু এক নয়। 


         সম্পর্কের মধ্যে টানাপোড়েন কখন তৈরি হয়-------



             #ভালোবাসার প্রকার ভেদ:


                                 মনোবিদরা প্রেমিক প্রেমিকাদের নিয়ে যে সমস্ত সমীক্ষা  চালিয়েছেন সেই তথ্য অনুযায়ী ভালোবাসার ধরণ গুলি হল---

                  কিছু প্রেমিক প্রেমিকা আছে যাঁরা প্রথম দর্শনেই প্রেমে পড়ে যায়।এই ধরনের ভালোবাসা প্রথম থেকেই পরস্পরের প্রতি তীব্র আকর্ষণ লক্ষ করা যায়।

দাম্পত্য টানাপোড়েন

                       চিত্রসূত্র- pixabay.com 

         দ্বিতীয় ভালোবাসা বন্ধুত্ব থেকে কখন যেন মনের অজান্তেই প্রেমে পরিণত হয়।এরা নিজেরাই বুঝতে পারে না কখন এটা ঘটল।এবং এই ধরনের ভালোবাসা বেশি দেখা যায় ক্লাস ফ্রেন্ড এর মধ্যে, এই ভালোবাসা  শুরু হয় এক সঙ্গে থাকতে থাকতে।এবং এরা শেষে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ ও হয়।

             আর এক ধরনের প্রেম আছে যাঁরা প্রেম টাকে জীবনে খেলার মতো মনে করে। আজ এর সঙ্গে প্রেম করছে তো কাল আর একজনের সঙ্গে। এরা আবার বুক ফুলিয়ে জীবনে কটা প্রেম করল এটা উঁচু গলায় বলে। এবং শেষ মেশ যে কোন কাউকে বিয়ে করে। এরা দাম্পত্য জীবন কখনোই সুখী হয় না।কারণ এদের মন থাকে বাইরে।এরা সমাজের চাপে সংসার জীবনে প্রবেশ করে বটে তবে সেই সংসার কে ভালোবাসতে পারে না বা জানে না।

               তবে ভালোবাসা যত প্রকার ই হোক না কেন, এর মধ্যে মানসিক মিল না থাকলে সব ভালোবাসায় নষ্ট।আগের থেকে একটা মানুষ কে খুব বেশি বোঝা যায় না যতটা সংসার করতে গিয়ে বোঝা যায়।একসঙ্গে বসবাস করতে গিয়ে আগের চেনা মানুষটার সম্পর্কে অনেক অচেনা তথ্য বেড়িয়ে আসে।তখন যেন সব হিসাব পাল্টে যায়।

         সেই চেনা মানুষের কিছু অদ্ভুত আচরণ সহ্য করতে না পারলে সম্পর্কের মধ্যে চিড় ধরবে।যেমন যদি দু'জনের মধ্যে কেউ একজন আগের থেকে আরো বেশি তাঁকে নিয়ন্ত্রণ করতে যায় বা সব বিষয়ে কর্তৃত্ব ফলাতে চাই তখন অন্য জন সেটা মানতে চাই না বা তীব্র আপত্তি জানায়। 

           এই ছোট্ট ছোট্ট ভুলবোঝাবুঝির শুরু এখান থেকেই হয়।এবং সেই সম্পর্কের মধ্যে একটি দমবন্ধ করা পরিবেশ তৈরি হয়। একটি সম্পর্ক কে সুস্থ রাখতে গেলে এই সমস্ত বিবাদ কে এড়িয়ে চলতে হবে।তবেই দাম্পত্য সম্পর্কের মধ্যে টানাপোড়েন বন্ধ হবে।

                      # সমন্ধ করে বিয়ের ভালো মন্দ:


                    এখনো আমাদের ভারতীয় সমাজে সমন্ধ করে বিয়ে করার রীতি অনেকাংশেই  বিরাজমান।সমন্ধ করে বিয়ে হলে একে অপরের জানা শোনার কোন সুুুুযোগ থাকে না বললেই চলে।ফলে কেউ কারো মনের খবর আগের থেকে জানতে পারে না।একজন আরেকজনের পছন্দ অপছন্দ কিছুুুই বুুঝতে পারে না।  ধরা যাক কেউ হয়তো একটু বেশি কথা বলে, অপর জন হয়তো একটু কম কথা বলে এক্ষেত্রে দু'জন দু'জনকে মানিয়ে  নিতে অনেক সমস্যা হয়।

             এছাড়া একজনের মন খারাপ থাকলে অন্য জন সহজে বুঝতে পারে না, এতে করে সেই সম্পর্কের মধ্যে অভিমান জমতে থাকে।কারণ কেউ কাউকে মন খুলে তো কিছু বলতে পারে না।পাশের মানুষ টা তাঁর যে খোঁজ নেয়নি বলে তাঁর যে কষ্ট হয়েছে সেটা মুখ ফুটে বলে ওঠা হয় না। কিন্তু মনে মনে ভাবতে থাকে তাঁকে মনে হয় তাঁর পাশের মানুষ টা খুব একটা ভালোবাসে না। 

       যদি এক্ষেত্রে স্বামী স্ত্রী দুজনেই লাজুক হয় তাহলে তাঁদের ভালোবাসা প্রকাশ হওয়ার সম্ভাবনা খুব কম। হয়তো দুজন দুজনকে ভালোবাসে এক সঙ্গে সংসার ও করছে কিন্তু মুখে কেউ কাউকে সে কথা জানায় না।

          আমাদের মধ্যে একটা ভুল ধারণা আছে যে, স্বামী স্ত্রী মানেই তাঁদের মধ্যে ভালোবাসা অবশ্যই আছে।কারণ এক সঙ্গে তাঁরা আছে, সন্তান ধারণ করছে সারা জীবন টা এক সঙ্গে কাটিয়ে দিচ্ছে, অতঃপর তাঁদের মধ্যে ভালোবাসা বিরাজমান।

         কিন্তু দুটি মানুষের মধ্যে যদি মনের মিল না হয় তাহলে তাঁরা সারাজীবন একি ছাঁদের নীচে বসবাস করবে কিন্তু ভালোবাসা তো দূরে থাক সামান্য বন্ধুত্ব টুকু গড়ে ওঠে না। সেখানে থাকে কেবল একে অপরের প্রতি দায়িত্ব আর কিছু কর্তব্য।শুনতে অবাক লাগলেও এটাই সত্যি।

       আমার এক নিকটবর্তী আত্মীয় ছিল যিনি বিবাহের পরে চার চারটি সন্তান ধারণ করেছেন অথচ তাঁর স্বামীর সঙ্গে তাঁর  এক মাস,  দু মাস পর্যন্ত কথাই হয় না। এবং দু'জন দু'জনকে একটু ও পছন্দ করে না । এমন সম্পর্কের মধ্যে নিজের প্রয়োজনে শরীরের চাহিদা টা মিটিয়ে নেয় কিন্তু মনের টান টা কখনো সৃষ্টি হয় না।       

          তবে সমন্ধ করে বিয়ে করলে একটা মনের কষ্ট কখনো তৈরি হয় না সেটা হল একে অপরকে বুঝতে না পারলে ,মনোমালিন্য সৃষ্টি হলে এমন টা কেউ বলে না যে আমি জীবনে দেখে শুনে বড় ভুল করে ফেলেছি।যেটা যাঁরা প্রেম করে বিয়ে করে তাঁরা এই কথা টা খুব ব্যবহার করে।

        তবে অনেক এমন দম্পতি আছে যাঁরা সমন্ধ করে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছে কিন্তু পরবর্তীতে তাঁদের  মধ্যে অন্তরঙ্গতা দারুণ। তাঁরা প্রেমের বিয়ে কেউ হার মানায়।তবে এমন সংখ্যা খুব কমই দেখা যায়।


          সমন্ধ করে বিয়ে হোক আর ভালোবেসে, সব সম্পর্ক ই সুন্দর হতে পারে যদি তাঁদের মধ্যে একে অপরের প্রতি বিশ্বাস টা থাকে তবে।অমূলক সন্দেহ কত সম্পর্কের মৃত্যু ঘটায় তার কোন হিসাব নেই।সন্দেহ একটি সম্পর্কের মধ্যে বিষের সমান।

       দু'জন মানুষ দু'জনের প্রেমে পড়বে কি পড়বে না তা সবচেয়ে বেশি নির্ভর করে তাঁদের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য এর উপর। তাঁদের মধ্যে যদি মনের মিল না থাকে, সামাজিক, অর্থনৈতিক সব বিষয়ে যদি মতভেদ হতে থাকে ,একে অপরের পছন্দের মধ্যে যদি বিস্তর ফারাক দেখা যায় তাহলে সেই সম্পর্কের মধ্যে প্রেম তো দূর-অস্ত স্বাভাবিক বন্ধুত্ব টুকু গড়ে উঠবে না।

         আসলে প্রতিটি দাম্পত্য সম্পর্কের মধ্যে তিনটি বিষয় অবশ্যই থাকা প্রয়োজন---

      আসক্তি ও আবেগ, যাঁর প্রধান অঙ্গ  যৌন-আকর্ষণ, তারপর আসে পরস্পরের মধ্যে ঘনিষ্ঠতা এবং নৈকট্য আর সব শেষে আসে দায়বদ্ধতা । 

             ভালোবাসার প্রধান অর্থই হল একে অপরের দায়িত্ব গ্রহণ করা।কেউ একজন নয় দু'জন কেউ এই দায়িত্ব নিতে হয়।আর এই দায়িত্বর মধ্যে ভালোবাসা টা থাকা একান্ত প্রয়োজন।

         যে সম্পর্কের মধ্যে যদি আবেগ, অন্তরঙ্গতা এবং দায়বদ্ধতা এই তিনটি বিষয় থাকে তাহলেে সেই দাম্পত্য জীবনে কখনো বড় চিড় ধরে না।

দাম্পত্য টানাপোড়েন
                       চিত্রসূত্র- pixabay.com 


            #বিয়ে ভাঙ্গার কারণ:


                  প্রেমের বিয়েতেও অনেক সময় সম্পর্কের মধ্যে টানাপোড়েন শুরু হয়।দীর্ঘদিনের প্রণয় থেকে যেে পরিণয় তাতেও সুখের ভাঁটা পড়ে।বিয়ের আগে যে মানুষটিকে মনে হতো ভীষণ রোমান্টিক, যত্নশীল, বিয়ের পরে যদি হঠাৎ করে সেই সব কিছুু হারিয়ে যায় তখন সেই     সম্পর্কের মধ্যে চিড় ধরেে।

             পুরুষ আর নারীর মানসিকতার পার্থক্য অনেক সময় স্বামী স্ত্রীর মধ্যে দ্বন্দ্ব তৈরি করে।যেমন ধরুন,  বেশির ভাগ নারী চায় তাঁর পুরুষ সঙ্গী টি তাঁর কাছে আসুক রোমান্টিক ভাবে।অন্যদিকে পুরুষের কাছে নারীর শারীরিক আকর্ষণ টাই বেশি মাত্রায় প্রাধান্য পায়, এখানেই একটা মানসিক দ্বন্দ্ব সৃষ্টি হয়।

         বিয়ের পর স্বামীরা যখন বেশি করে পুরুষ হয় এবং  স্ত্রীরা যখন বেশি করে নারী হয়ে ওঠে তখন তাঁদের মধ্যে সংঘাত বাঁধাটাই স্বাভাবিক। সম্পর্ক  ভাঙ্গার ক্ষেত্রে পরস্পরের প্রতি ভাব বিনিময় ও মতামত  আদান প্রদানের   ব্যর্থতা একটা বড় কারণ।


         একজন অন্যজন কে বুঝতে না চাইলেই শুরু হয় তর্ক বিতর্ক এবং ঝকড়া।ঝকড়া থেকে হয় কথা বন্ধ।ফলে সেই সম্পর্কে আরো জটিলতা সৃষ্টি হয়।একজন অন্য জন কে যখন শরীরের প্রকাশ ভঙ্গিতে তাঁর রাগ প্রকাশ করে তখন সেই সম্পর্কে মধ্যে  আর প্রাণ থাকে না। পাশের জন তীব্র কষ্ট পেলেও বাইরে প্রকাশ করে না। মনের মধ্যে কষ্ট চেপে রাখে।

দাম্পত্য টানাপোড়েন
                       চিত্রসূত্র- pixabay.com 

             প্রসঙ্গত নারীর তুলনায় পুরুষের মনের ভাব প্রকাশ করার  ক্ষমতা কম থাকে। পুুুুুরুষ তাঁর বুকের কষ্ট কাউকে খুলে বলতে পারে না। সে নিজের মনে দগ্ধে যায় তবুও পাশের মানুষ টাকে বুঝতে দিতে চায় না।

          এক্ষেত্রে নারীকে এগিয়ে আসা উচিত। মনের মধ্যে ইগোর স্থান দিলে সম্পর্ক শেষ হয়ে যায়। পাশের মানুষ টা র কাছে ছোট বড়োর কোন ব্যাপার নেই, এখানে কিছু  ঐ মানুষ টিই কিন্তু পৃথিবীর মধ্যে সব থেকে আপন একজন মানুষ, তাই সম্পর্কের  মধ্যে টানাপোড়েন শুরু হওয়ার আগে সেটা সুন্দর করে নেওয়া উচিত।নিজেদের মধ্যে চলতে থাকা ভুলবোঝাবুঝির অবসান ঘটানো উচিত।তাহলেই সম্পর্কের মধ্যে ভাঙ্গন আটকানো সম্ভব।

               # মা ঘেঁষা ছেলে:


                একটি মেয়েকে বিয়ে পর নিজের পরিবার কে ছেড়ে স্বামীর হাত ধরে একটি নতুন পরিবারে যেতে হয়।আমাদের সমাজের এটাই নিয়ম, যেটা হাজার হাজার বছর ধরে চলে আসছে।

              এই নতুন একটি পরিবেশ তাঁকে মানিয়ে চলতে সকলের সাহায্য করা উচিত। তাঁর ভালো লাগা, খারাপ লাগার প্রাধান্য দেওয়া উচিত। কিন্তু বেশিরভাগ পরিবার ই এই ক্ষেত্রে চরম অসহযোগিতা করে। তাঁদের পরিবারের প্রতিটা নিয়ম মেনে না চললে মেয়ে টি যদি নিজের পরিবারের কোন নিয়ম নিজের মতো করে মানতে চাই তাহলে সে ক্ষেত্রে পরিবারে অশান্তি শুরু হয়।

      এক্ষেত্রে দেখা যায় বেশিরভাগ ছেলেই মা কে কষ্ট দিতে চায় না, কারণ ছেলেরা মা ভক্ত বেশি হয়।মা ভক্ত হওয়া খুব ভালো তবে মায়ের অন্যায় কে  ঠিক প্রতিপন্ন করে স্ত্রী কে শাসন করতে গেলে সেই সম্পর্কের মধ্যে টানাপোড়েন শুরু হবে।

       এখনো আমাদের সমাজে নারী কে বোঝা মনে করা হয়।কোন মেয়ে বিবাহের উপযুক্ত হলে তাঁকে সর্বপ্রথম বিয়ে দিয়ে দায়িত্ব থেকে নিস্তার পেতে চাই।ফলে বিয়ের পরে তাঁর ভালো মন্দ খোঁজ নেওয়ার প্রয়োজন মনে করে না। যদি কোন মেয়ে মুখ ফুটেও নিজের সমস্যার কথা বাড়িতে বলে তাহলেও তাঁকে বলা হয়----
        মেয়ে সন্তান কে একটু সহ্য করতে হয়,ধৈর্য্য ধরতে হয়।সংসারে বাস করতে গেলে সামান্য একটু এমন হয়।সব কথা বাপের বাড়িতে বলতে নেই ইত্যাদি ইত্যাদি ইত্যাদি।

         কিছু মেয়ে মুখ বুজে সারাজীবন সব অত্যাচার মানিয়ে নেয়, কারণ তাঁর যে আর কোন ঠিকানা থাকে না! কিছু মেয়ে এমন জীবন রাখতে চাই না, নিজেকে শেষ করে দেয়।আর কিছু মেয়ে প্রতিবাদ করে সমাজ বিচ্যুত হয়।

           শাশুড়ি ও যে একদিন বৌমা ছিল এ কথা সব শাশুড়ি ই ভুলে যায়।( তবে অবশ্যই অনেক ব্যতিক্রম আছে সবাই এক নয়)।

           আসলে ছেলের বিয়ের পর সব মা ই নিজের নিরাপত্তার অভাব বোধ করে।ভাবে এই অচেনা মেয়েটির জন্য তাঁর  ছেলের কাছে তাঁর  গুরুত্ব কমে যাচ্ছে।তখন সে কোন উপায়ান্তর না দেখে বৌমার সমালোচনায় লিপ্ত হয়, তাঁকে আঘাত দিয়ে কথা বলে শান্তি পাওয়ার চেষ্টা করে। 

          আর এই অশান্তির পুরো প্রভাব টা পড়ে দাম্পত্য সম্পর্কের উপরে। শুরু হয় স্বামী স্ত্রীর মধ্যে সম্পর্কের টানাপোড়েন।

              # শরীর ও মনের চাহিদার তারতম্য:


                 নারী ও পুরুষ কিছু চাহিদা পূরণ এর জন্যই বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়।প্রতিটা নারী বিয়ের পর তাঁর স্বামী কে অনেক টা সময় কাছে পেতে চায়, কিন্তু বেশিরভাগ পুুুুরুষ নারীর এই চাহিদা টিকে আদিখ্যেতা মনে করে, পুুুরুষ কাজের অজুহত বেশি দেয়, তাঁর সঙ্গীর যে একটু বিশেষ সময় দেওয়াা প্রয়োজন সেটাই  মানতে চাই না।ফলে এখানে একটি দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হয়।

           শারীরিক সম্পর্কে মেয়েরা একটু ভয় পায়, তাঁরা এই বিষয়টি এড়িয়ে চলতে পছন্দ করে, কিন্তু পুরুষ এটিকেই মূল প্রেম মনে করে।তখন দুজন বেড পার্টনার এর মধ্যে একটা গুরুগম্ভীরতা দেখা দেয়।এই সমস্যা টা পৃথিবীর প্রায় সব দেশের দম্পতির মধ্যে দেখা যায়।

দাম্পত্য টানাপোড়েন
                      চিত্রসূত্র- pixabay.com 

         স্বামী স্ত্রীর মধ্যে ডিভোর্স এর পয়লা নম্বর  কারণ হিসাবে স্বামী স্ত্রীর পরস্পরকে  ঘিরে শারীরিক অতৃপ্তি কেই ধরা হয়ে থাকে।

         একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে একজন স্ত্রী চাই যে, তাঁর স্বামী যেন তাঁকে প্রতিদিন ভালোবাসার কথা বলে।তাঁর ভুল গুলো ক্ষমা করে, সংসারে দায়িত্ব যেন কিছুটা বহন করে, তাঁর সঙ্গে একান্তে যেন একান্তে কিছুটা সময় কাটায়, তাঁর সব কথা মন দিয়ে শোনে,তাঁর প্রতি স্নেহ ভালোবাসা প্রকাশ করে,এবং তাঁর প্রতি যেন খেয়াল রাখে।

         আপরদিকে একটি পুরুষ চাই তাঁর স্ত্রী যেন তাঁকে সম্মান করে, তাঁর প্রতি আস্থা রাখে, তাঁর সুবিধা অসুবিধা বোঝে, সারাদিন কাজ করে বাড়ি ফেরার পর যেন অভিযোগের ডালি না নিয়ে বসে।তাঁকে যেন নিঃস্বার্থ ভাবে গ্রহণ করে।এবং তাঁকে যেন অবিশ্বাস না করে।

         এই দু'জনের চাহিদা পূরণ না হলেই সে সম্পর্কের মধ্যে টানাপোড়েন তৈরি হয়। এই সব চাহিদা কখনোই একসঙ্গে পূরণ হওয়া সম্ভব নয়। কিছু অপূর্ণতা থেকে যাবেই। যারা এই অপূর্ণতাকে মেনে নিতে পারে , আমাকে সে বুঝুক এই মনোভাব না রেখে আমি তাঁকে বুঝব এমন মনোভাব তৈরি করে সেই দাম্পত্য জীবন ই সুন্দরে ভরে ওঠে। এখানে আজীবন হাসি, আনন্দ, ভালোবাসা, মায়া, মমতা রয়ে যায়।


             # সন্দেহ থেকে সংসারে বিপর্যয়:


                দু'জন দু'জনকে বিশ্বাস করা, মনের মধ্যে কোন রকম দোটানা না রাখা একটি সুস্থ সম্পর্কের লক্ষণ।সন্দেহ প্রবণ মনোভাব হলে বিবাহিত   জীবন দুুুুর্বিসহ হয়ে ওঠে।দুু'জনের মধ্যে একজন যদি হীনমন্যতায় ভোগে, অন্যজন  তাাঁকে ছেড়ে চলে যেতে পারে এটা ভাবে তাহলে সে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগবে।  তখন অন্য জনের বাঁচাই দায় হয়ে দাাঁড়াবে।

          আর এই সন্দেহ থেকে শুরু হয় সংসারে অশান্তি।এবং সেই পাশের মানুষ টা নিজেকে বাঁচাতে অন্য সম্পর্কে লিপ্ত হয়ে যায়। এটা আজ বলে নয়, সেই প্রাচীন কাল থেকেই চলে আসছে।এবং এখনো একটু উচ্চ শ্রেণীর দিকে দৃষ্টিপাত করলে চোখে পড়বে।

         এছাড়া কোন মেয়ে যদি বিয়ের আগে অন্য একটি ছেলের সঙ্গে সম্পর্ক ছিল সেটা তাঁর স্বামীর সঙ্গে শেয়ার করে তাহলে সেই স্বামী যতই আধুনিক হোক না কেন এটা মানতে পারে না।তখন সে তাঁর স্ত্রীর চরিত্র নিয়ে সন্দেহ করতে শুরু করে এবং তীব্র অশান্তির সৃষ্টি হয়।তখন সেই স্বামী ঐ স্ত্রীর সব কিছুতেই সন্দেহ করা শুরু করে, এটা ভয় পায় যে তাঁর স্ত্রী যদি তাঁকে লুকিয়ে তাঁর পুরনো প্রেমিকের সঙ্গে যোগাযোগ করে। এরা তখন তীব্র মনোকষ্টে ভোগে।

দাম্পত্য টানাপোড়েন
                       চিত্রসূত্র- pixabay.com 


       এমন দো'টানার মধ্যে অনেক অঘটন ঘটে যায় দু'জনের মধ্যে। 

       # নেশার কোপ:


              একটি পুরুষের যদি নেশা করার দোষ থাকে তাহলে তাঁর জীবন তো শেষ হয় ই সঙ্গে একটি মেয়ের জীবন ও নষ্ট হয়ে যায়।

            অল্পস্বপ্ল সিগারেট খাওয়া টা তবুও মেয়েরা মেনে নেয় কিন্তু সেটা যদি মাত্রাতিরিক্ত মদ্যপান হয় তখনই বাঁধে চরম অশান্তি।

           এই নেশার কবলে কত সংসার শেষ হয়ে যায় তার কোন ঠিকানা থাকে না।কেউ কেউ মনের মতো সঙ্গী না পেলে নেশার জগতে প্রবেশ করে, আবার কারো জীবনে হঠাৎ করে অর্থিক বিপর্যয় নেমে এলে নেশা করে।

        কিন্তু যে কারণেই নেশা করুক না কেন এটা জীবন নষ্ট করে দেয়।সংসারে ঝকড়া অশান্তি শুরু হয়, যে নেশা করে তাঁর শরীরে বিভিন্ন রোগ বাসা বাঁধতে থাকে।একটা বাচ্চার ভবিষ্যত নষ্ট হয়। মোট কথা সব দিক দিয়েই খারাপ হয়। তাই এই রাস্তা চিরতরে বন্ধ করা উচিত।

                       উপসংহার 


              দাম্পত্য সম্পর্ক কে দীর্ঘস্থায়ী ও মজবুত রাখতে হলে একে অপরের প্রতি দায়বদ্ধতা যেমন জরুরী তেমনি এই সম্পর্কের মধ্যে ভালোবাসা, মায়া, মমতা, সম্মান, বিশ্বাস এবং আস্থা রাখা ভীষণ দরকার।

       দু'জনের মধ্যে একজন যদি রাগী হয়, সব সময় নিজেকে বেশি প্রাধান্য দেয়,  পাশের মানুষ টিকে তুচ্ছ মনে করে তাঁকে বার বার অসম্মান করে তাহলে সেই সম্পর্কের মধ্যে টানাপোড়েন বাড়তে থাকবে।কোন উপায়ান্তর না পেয়ে তাঁর সঙ্গে থাকতে বাধ্য হবে কিন্তু তাঁর মন টা কখনো পাবে না।

         বিয়ের পর সারাজীবন এক সঙ্গে হাতে হাত রেখে বাকি জীবন টা আনন্দ উল্লাসে কাটাতে পারাটাই জীবনের কাছে কিছু পাওয়া হয়। শেষ জীবনে যেন সঙ্গী কে পাশে পাওয়া যায় তেমনি সুসম্পর্ক তৈরি করাই হল আসল চ্যালেঞ্জ। তাই সব থেকে কাছের মানুষ টির সঙ্গে সর্বদা সুন্দর সম্পর্ক বজায় রাখা উচিত।

       আপনি যদি   কী কী নিয়ম মেনে চললে স্বামী স্ত্রীর মধ্যে সম্পর্ক ভালো থাকে?  সেটা জানতে চান তাহলে উপরের লিঙ্কে প্রবেশ করুন।


         এবং আপনার সম্পর্ক কে শেষ জীবন পর্যন্ত মধুর করে রাখুন। 

দাম্পত্য টানাপোড়েন

                        চিত্রসূত্র- pixabay.com 

              আমার লেখা যদি ভালো থাকে তাাহলে একটা কমেন্টস করতে ভুলবেন না।এবং আপনার সঙ্গীর সঙ্গে লেখটি অবশ্যই শেেেয়া করুন।


চিত্র সূত্র- pixabay.com 

তথ্যসূত্র সংগৃহীত 

Tags, দাম্পত্য টানাপোড়েন 

ধন্যবাদ 😊
            

কোন মন্তব্য নেই:

Blogger দ্বারা পরিচালিত.