কিভাবে বিবাহ বিচ্ছেদ এড়ানো সম্ভব?
চিত্রসূত্র- pixabay.com
বিবাহ বিচ্ছেদ এড়ানোর উপায়:
বিবাহ হল জীবনের সব থেকে সুন্দরতম মূহুর্ত।পৃথিবীর প্রায় প্রতিটি মানুষই জীবনের কোন না কোন সময় বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়। এবং এই সম্পর্ক কে কিভাবে দীর্ঘস্থায়ী করা যায় এবং একজন আদর্শ স্বামী স্ত্রীর ভালোবাসা কেমন হওয়া উচিত? সেই সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা আমি আগের পোস্টেই করেছি, যদি আপনি সেই সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চান তাহলে উপরের লিঙ্কে প্রবেশ করুন । কিন্তু বর্তমানে যে সমস্যা টা দেখা দিচ্ছে সেটা হল, যত মানুষ বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ না হচ্ছে তার থেকে বেশি মানুষ এই বন্ধন কে ছিন্ন করে বেড়িয়ে যাচ্ছে।এখন স্বামী স্ত্রীর মধ্যে বিচ্ছেদ টা একটা স্বাভাবিক রূপ ধারণ করছে।কিন্তু স্বামী স্ত্রীর মধ্যে ডিভোর্স কেন হয় ? বর্তমানে কেনো মানুষ এতো বেশি বিবাহ বিচ্ছেদ এর সম্মুখে পড়ছে?
আগেকার দিনে বিবাহ বিচ্ছেদের কথা শুনলেই মানুষ আঁতকে উঠত।বাড়িতে একটা শোকের ছায়া নেমে আসত।আত্মীয় স্বজন থেকে শুরু করে পাড়া প্রতিবেশী সকলেই চমকে উঠত।সবার কাপালেই থাকত চিন্তার ভাঁজ।
কিন্তু বর্তমানে বিবাহ বিচ্ছেদ শব্দ টি অতি সহজ হয়ে দাঁড়িছে।কোনও স্বামী স্ত্রীর মধ্যে বিচ্ছেদ হচ্ছে শুনলে এখন আর মানুষ একটু ও অবাক হয় না।শুধু জানতে চাই, কবে বিচ্ছেদ টা হচ্ছে? এবং বলে, খুব সমস্যা হলে এমন সম্পর্ক থেকে বেড়িয়ে আসায় ভালো।এতো স্বাভাবিক ভাবে বিষয় টা নেওয়ার জন্য বিবাহের মর্যাদা ক্ষুন্ন হচ্ছে।কিন্তু এভাবে চলতে থাকলে বিবাহের প্রতি মানুষ বিমুখ হয়ে পড়বে।
বর্তমানে দিন দিন মেয়েরা কর্মক্ষেত্রে এগিয়ে যাচ্ছে। এখন একটা মেয়ে স্বামীর পাশে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে দাঁড়িয়ে পড়ছে।মেয়েরা এখন অনেক স্বাধীন।যদিও সর্বত্র নয়,প্রচুর মেয়ে আছে যাঁরা স্বাধীনতার স্বাদ কি জিনিস সেটা জানেই না।
মেয়েদের নিজের পায়ে দাঁড়ানো টা এখন ভীষণ প্রয়োজন।একটা মেয়ে কর্মক্ষেত্রে প্রবেশ করা মানে, তাঁর কাছে এ এক অন্য পৃথিবী।তবে একটা বিষয় কিন্তু সকলেরই মনে রাখা উচিত যে,আমি স্বাধীন মানেই কিন্তু দায়িত্বজ্ঞান বিমুখ নই।আমি স্বাধীন তবে শৃঙ্খলাহীন নই।আমি যেমন আমার যত্ন নেব,ঠিক তেমনি আমার পরিবারের ও যত্ন নেব। এ বিষয়ে কোনও রকম গাফিলতি করলে তাঁর জীবন কখনোই সুখের হয় না।পরিবার পরিজন নিয়ে ই আমার আমি।একা আমি র কোনও মূল্য নেই।
স্বামী স্ত্রীর মধ্যে যে কখনোই কোনও সমস্যার সৃষ্টি হবে না, তা কিন্তু নয়। কিন্তু সমস্যার পরিধি যেন মাত্রাতিরিক্ত না হয়,সে দিকে সদা সজাগ থাকতে হবে।একটি সংসার শান্তির কেন্দ্রবিন্দুতে দাঁড়িয়ে থাকে স্বামী স্ত্রীর মধ্যে সুন্দর সম্পর্কের মাধ্যমে।দুজনের মধ্যে বিবাদের সৃষ্টি হলে তার প্রভাব শুধু তাঁদের উপরেই পড়ে না,সেই প্রভাব টা গোটা পরিবার তথা আশপাশের পরিবেশেও পড়ে।
এছাড়া এই সম্পর্কের মধ্যে সমস্যার সৃষ্টি হলে সব থেকে বেশি খারাপ প্রভাব পড়ে সন্তানদের উপর।তারা প্রচন্ড অসহায় বোধ করে।তাই জীবনে কোনও সমস্যা আসলে তার থেকে কি করে বার হতে পারব সেই রাস্তা খুঁজতে হবে।এটা মনে রাখতে হবে যে, প্রতিটা সমস্যার পিছনেই থাকে তার সমাধান।
চিত্রসূত্র- pixabay.com
কখন স্বামী স্ত্রীর সম্পর্ক টা বিচ্ছেদের মতো পর্যায়ে পৌঁছায় সে সম্পর্কে আমার যে অভিমত তা হল-
কোনো একটি বিষয় নিয়ে দিনের পর দিন ভুল বোঝাবুঝি।এবং সেই বিষয় টা নিয়ে একে অপরের সঙ্গে মন খুলে কথা বলতে না পারা।যে কোনও সম্পর্ক সুন্দর রাখার মুলে কিন্তু মিষ্টি ভাষা। আজও পর্যন্ত এমন কোনো মানুষ পাওয়া যায় নি যে তাঁর সঙ্গে নম্র ভাবে কথা বললে, সে তাঁর নম্র ব্যবহারে সারা দেবে না। কিন্তু বর্তমানে বেশির ভাগ স্বামী স্ত্রীর মধ্যে ভাষার আদানপ্রদান খুব নিন্মমানের হয়।এছাড়া স্বামী স্ত্রীর বিচ্ছেদের মুলে আর একটা কারণ হল অতিরিক্ত চাহিদা।
নিজের চাহিদা টা একটু নিয়ন্ত্রণ করতে পারলে দাম্পত্য জীবন সুন্দর হতে বাধ্য।চাহিদা মানে কিন্তু কেবল ই বিলাসিতা নয়। সবাই যে জীবনে বিলাসিতা চাই তা মোটেও নয়। এক একজনের চাহিদার ধরন এক একরকম।শুধু বিলাসিতা হলে,ধনী পরিবারে বিচ্ছেদ ঘটত না।
কোনো কোনো মানুষ চাই, তাঁর সঙ্গীনী কেবলমাত্র তাঁকেই বেশি প্রাধান্য দিক,আবার কেউ চাই, তাঁর সঙ্গী টি যেন তাঁর কথা প্রতিটা অক্ষরে অক্ষরে পালন করে চলুক।আবার কারো বা চাহিদা তাঁর সঙ্গিনী তাঁকে অর্থ সম্পদে ভরিয়ে রাখুক।তবে চাহিদা টা কোনও দোষের নয়, দোষের হল তাঁর সঙ্গিনীর পারো পারকতা বুঝতে না পারা।আমার চাহিদা টা যেন তাঁর কাছে বোঝা না হয়ে দাঁড়ায় সে দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।
চিত্রসূত্র- pixabay.com
স্বামী স্ত্রীর বিচ্ছেদের মূল কারণ এবং এই সম্পর্কের দুঃখ ময় করুন পরিণতির উদাহরণ হিসেবে আমি এখানে দুটি ঘটনার সূত্রপাত তুলে ধরব ।যে দুটি ঘটনা ইতিহাসের পাতায় স্বর্ণাক্ষরে মুদ্রিত আছে, কিন্তু আমরা তেমন ভাবে জানি না।
আজ স্বামী স্ত্রীর বিচ্ছেদের প্রসঙ্গে সেই দুটি বাস্তব কাহিনী জানব।এবং এই কাহিনী থেকে কিছু শিক্ষা গ্রহণ করব,যাতে এমন ভুল আমরা যেন নিজের জীবনে না করি।তাহলে চলুন কাহিনী তে প্রবেশ করি--------
একদা, ফ্রান্সের সম্রাট তৃতীয় নেপোলিয়ন মেরী ইউজিন ইগনেশ এর প্রেমে পড়েন।মেরী ছিলেন বিশ্বের একজন শ্রেষ্ঠ সুন্দরী।নেপোলিয়নের পরামর্শদাতারা তাঁকে বলেন যে, মেরী তো একজন সাধারণ নারী।কোনও রাজ পরিবারে তাঁর জন্ম নয়।
নেপোলিয়ন তাঁদের জবাব দেন,
তাতে কি হয়েছে? তাঁর সৌন্দর্য, রূপ, যৌবন সবই তিনি স্বর্গীয় মনে করেন।
রাজকীয় আসন থেকে তিনি জাতির উদ্দেশে বলেন---
' আমি এমন একজন রমণী কে বেছে নিয়েছি,যাকে আমি পছন্দ করি, যাকে আমি ভালোবাসি, শ্রদ্ধা করি।কোন অচেনা মেয়ের থেকে আমি এই রকম মেয়ে ই আমি চাই।'
পরবর্তীতে তাঁদের বিবাহ সুসম্পন্ন হল।
নেপোলিয়ন এবং তাঁর স্ত্রীর কি না ছিলো, স্বাস্থ্য, সম্পদ,ক্ষমতা, খ্যাতি, সৌন্দর্য, ভালোবাসা।মোট কথা প্রেম রোম্যান্স ভরা জীবনে যা যা দরকার সব ই ছিলো।কোন ভালোবাসা ভরা আলোকোজ্জ্বল জীবন এর থেকে মধুর হয় না।
কিন্তু সেই আলো যেন খুব শিগগিরই নিভে গেল।পড়ে রইলো কেবল এক মুঠো ছাই।ইউজিন মেরী সম্রাজ্ঞী হয়েছিলেন কিন্তু নেপোলিয়নের প্রেম বা সিংহাসন কোন কিছুই মেরীর ঘ্যানর ঘ্যানর করা বন্ধ করাতে পারি নি।
মেরী প্রায়ই নেপোলিয়নের শাসন কার্যালয়ের রাজসভায় ঢুকে অতি দরকারি কাজেকর্মে বাধা দিতেন।তিনি তাঁকে একেবারেই একা থাকতে দিতেন না।তিনি ভয় পেতেন যে তাঁর স্বামী যদি অন্য কোন রমণীর সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা করেন এই ভেবে।
তিনি স্বামীর নামে অভিযোগ করতেন, আর সঙ্গে থাকত কান্না কাটি এবং ঘ্যানর ঘ্যানর করা।তিনি পাঠাগারে ঢুকে স্বামী কে গালাগাল করতেন।ফ্রান্সের সম্রাটের এক ডজন প্রাসাদ থাকা সত্ত্বেও কোথায় তিনি শান্তি পেতেন না।
এসব করে ইউজিনের কি লাভ হল?
ই.এ. রাইনহাটের লেখা 'নেপোলিয়ন ইউজিন' নামে বই থেকে জানা যায়,
শেষ পর্যন্ত ব্যাপারটা এমনই দাঁড়ালো যে নেপোলিয়ন প্রায়ই রাত্রি বেলা নিজের চোখ টুপিতে ঢেকে পিছনের দরজা দিয়ে গোপনে প্রাসাদ ছেড়ে এক সুন্দরী মহিলার কাছে যেতেন।মহিলা টি তাঁকে ভালোবাসতেন।পাথরের রাস্তায় একলা হেঁটে বেড়াতেন সম্রাট।সম্রাট খালি ভাবতেন, আহা আমার জীবন যদি সত্যিই এমন হতো'
কেবলমাত্র ঘ্যানর ঘ্যানর করার ফলে ইউজিনের জীবনে এই রকম ই ঘটে।কিন্তু তিনি ছিলেন সেই সময়কার সব থেকে সুন্দরী।তা সত্ত্বেও কিন্তু তিনি ঘ্যানর ঘ্যানরের বিষাক্ত কামড় ত্যাগ করতে পারেননি।
পরে নাকি ইউজিন বিলাপ করতেন--
' যা ভয় করেছিলাম আমার জীবনেই তাই ঘটল'
কিন্তু সত্যিই কি তাঁর জীবনে এটা এসেছে?
মোটেই না, বেচারি মহিলা ঈর্ষা আর ঘ্যানর ঘ্যানর করে নিজেই তা ডেকে এনেছে।
নরকের শয়তান প্রেম ভালোবাসা ধ্বংস করার জন্য যত রকম উপায় উদ্ভাবন করেছে ঘ্যানর ঘ্যানর তার মধ্যে সব চেয়ে ধারালো।
এ কখনো ব্যর্থ হয় না।এ স্বামী স্ত্রীর বিচ্ছেদের মূল হাতিয়ার।
_______________
সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ ঔপন্যাসিক লিও টলস্টয় এর জীবনে এমনই আর এক দুঃখ জনক কাহিনী বর্ণিত আছে।
লিও টলস্টয় এর স্ত্রী তাঁর ভুল টা আবিষ্কার করতে পেরেছিলেন তবে সেটা বড্ড দেরিতে।
লিও টলস্টয় মারা যাওয়ার পরে তাঁর স্ত্রী মেয়েদের কাছে স্বীকার করেন যে,
'তোদের বাবার মৃত্যুর জন্য আমিই দায়ী'
তাঁর মেয়েরা মায়ের কথায় কোন জবাব দেয়নি।তারা তখন কাঁদছিল।এবং তারা জানতো যে তাদের মা একদম ঠিক কথাই বলেছে।ওরা জানতো যে তাদের মা সারা জীবন ধরে শুধু বাবার নামে অভিযোগ আর সমালোচনা এবং সঙ্গে ঘ্যানর ঘ্যানর করেই তাদের বাবা কে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিয়েছে।
অথচ লিও টলস্টয় এবং তাঁর স্ত্রী নানা অসুবিধা থাকার সত্ত্বেও সুখী হতে পারতেন।তিনি ছিলেন সর্বকালের একজন শ্রেষ্ঠ ঔপন্যাসিক।
তাঁর দুটি অমর সৃষ্টি 'ওয়ার অ্যান্ড পীস'
এবং 'আনা কারেনিনা' চিরকাল ধরেই পৃথিবীর সাহিত্যাকাশে উজ্জ্বল হয়ে আছে।তাঁর লেখার সংখ্যা দাঁড়াবে একশটা বই।
খ্যাতি ছাড়াও টলস্টয় ও তাঁর স্ত্রীর ছিলো প্রচুর সম্পদ, সামাজিক প্রতিষ্ঠা, ছেলে মেয়ে।কোন বিবাহিত জীবন ই এতো সুন্দর হয় না।প্রথম প্রথম মনে হত তাঁদের বিবাহিত জীবন খুবই আনন্দের।তাঁরা হাঁটু গেড়ে ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করত যে তাঁদের এমন সুখ যেন চিরকাল বজায় থাকে।
চিত্রসূত্র- pixabay.com
তার কিছু সময় পরেই একটা আশ্চর্য ঘটনা ঘটে গেল।টলস্টয় আস্তে আস্তে বদলে যেতে লাগলেন।তিনি হয়ে পড়লেন সম্পূর্ণ একা,আলাদা মানুষ।
যে মানুষ যৌবনে একবার স্বীকার করেন যে তিনি জীবনে সমস্ত অপরাধই করেছেন, এমন কি খুন ও। সেই তিনিই আবার যীশুর শিক্ষা অনুসরণ করতে আরম্ভ করলেন।
এবং তিনি নিজের সব জমি দান করে দিয়ে দারিদ্র্যের জীবন বেছে নিলেন।তিনি নিজের জুতো নিজেই বানাতেন,মাঠে কাজ করতেন, খড় কাটতেন।নিছেই নিজের ঘর ঝাঁট দিতেন।কাঠের পাত্রে খেতেন। আর শত্রু দের ভালো করার চেষ্টা করতেন।
কিন্তু তাঁর স্ত্রী বিলাসিতা পছন্দ করতেন।আর টলস্টয় সেটা ঘৃণা করতেন।তাঁর স্ত্রী চাইতেন খ্যাতি আর সামাজিক প্রতিষ্ঠা,কিন্তু টলস্টয় এই সব সামান্য জিনিস চাইতেন না।তাঁর কাছে এ সবের কোন দাম ছিলো না। তাঁর স্ত্রী চাইতেন টাকা পয়সা আর সম্পদ,আর টলস্টয় ভাবতেন ধনদৌলত আর ব্যক্তিগত সম্পত্তি রাখা পাপ।
বছরের পর বছর ধরে টলস্টয়ের স্ত্রী ঘ্যানর ঘ্যানর করে গালাগাল দিয়ে চিত্কার করতেন কারণ টলস্টয় কোন টাকা পয়সা না নিয়ে তাঁর বই স্বাধীন ভাবে ছাপতে দিয়ে দিতেন তাই। কিন্তু তাঁর স্ত্রী এর পরিবর্তে চাইতেন টাকা।
চিত্রসূত্র-pixabay.com
মাঝে মাঝে শ্রীমতী টলস্টয় পাগলের মতো চিত্কার করে গড়াগড়ি খেয়ে আফিম খেতে যেতেন।একবার তিনি আত্মহত্যা করার উদ্দেশ্যে কুয়োয় ঝাঁপিয়ে পড়েন।
ওদের বিবাহিত জীবন ছিলো ইতিহাসের সবচেয়ে দুঃখ জনক ঘটনা।বিবাহের আটচল্লিশ বছর পার করার পর টলস্টয় তাঁর স্ত্রীর মুখ টাও দেখতে রাজি ছিলেন না।
একদিন সন্ধ্যায় তাঁর স্ত্রী প্রেমের আর আদরের প্রয়াসী টলস্টয়ের সামনে হাঁটু মুড়ে বসে কাতর আবেদন জানালেন পঞ্চাশ বছর আগে তিনি স্ত্রী কে উদ্দেশ্য করে তাঁর ডায়েরি তে যে প্রেম নিবেদন লিখেছেন তা পাঠ করে শোনাতে।
লিও টলস্টয় যখন সে গুলো পড়তে আরম্ভ করলেন, তখন যেন সেই সুন্দর হারানো সুখের দিনগুলো আবার ফিরে এসেছিলো।
দুজনের চোখেই তখন জল।বহু কাল আগে যে রোমান্টিক দিন তাঁদের জীবন কে আনন্দের আবরণে ঘিরে রেখেছিলো সে স্বপ্ন আজ যেন কোথাও হারিয়ে গেছে!
শেষ পর্যন্ত টলস্টয় আশি বছরে পা দিয়ে তিনি গৃহকোণের আনন্দহীন জীবন আর সহ্য করতে পারলেন না।তাই 1910 সালের অক্টোবরের এক তুষারপাতে আচ্ছন্ন রাতে তিনি গৃহ ত্যাগ করে চলে গেলেন।তিনি ঠান্ডা আর অন্ধকার রাতে হারিয়ে যেতে চাইলেন।
তার এগারো দিন পরে একটা রেল স্টেশনে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে তিনি মারা গেলেন।আর তাঁর মৃত্যুকালীনে শেষ অনুরোধ ছিলো, তাঁর স্ত্রীকে যেন তাঁর সামনে না আসতে দেওয়া হয়।
শ্রীমতী টলস্টয় তাঁর ঘ্যানর ঘ্যানর, অনুযোগ আর হিস্টিরিয়ার জন্য এই দাম ই দিয়েছিলেন।
এখানে পাঠক হয়তো ভাবছেন যে, তাঁর স্ত্রীর ঘ্যানর ঘ্যানর করার যথেষ্ট কারণ ছিলো।
হ্যাঁ সেটা মানছি।তবে আসল কথা কিন্তু তা নয়।
প্রশ্ন হলো, ঘ্যানর ঘ্যানর করে তাঁর কি লাভ হলো?
তাঁর জীবনে খারাপ ছাড়া ভালো তো কিছুই হলো না! এখানে দুজনেরই পুরো জীবন টাই নষ্ট হল, সঙ্গে বাচ্চা গুলো পেল চরম দুঃখ।
তাই বিবাহ বিচ্ছেদ এড়াতে-----
স্বামী স্ত্রীর সম্পর্ক টা যেন বিচ্ছেদ পর্যন্ত না গড়ায় সে দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।অবশ্য এ ক্ষেত্রে দুজনেরই সহযোগিতা সমান কাম্য।
স্বামীরা সাধারণত এক কথা বার বার বলা পছন্দ করে না।কিন্তু বেশিরভাগ নারী এই ভুল টাই করে।তাই স্বামী স্ত্রীর সম্পর্কে বিচ্ছেদ না চাইলে দুজনেরই কিছু বদ অভ্যাস পরিবর্তন করা উচিত।
স্বামী স্ত্রীর সম্পর্ক কে সব সময় সরল রাখার চেষ্টা করতে হবে।এর ফলে কারোর মনেই সন্দেহের দানা বাঁধবে না। সন্দেহ সম্পর্ক কে ধ্বংস করে, দুজনের মধ্যে বিচ্ছেদের দেওয়াল তৈরি করে।
জীবনে আসা যে কোনও দুঃখ কষ্টের কথা দুজনেই শান্ত ভাবে আলোচনা করা প্রয়োজন তাহলে সেই সমস্যার একটা সমাধান বেড়িয়ে আসে। এখানে স্বামী স্ত্রীর মধ্যে বিশ্বাস ই হল মূল কথা।
এবং আপনি যদি দাম্পত্য জীবনে সুখী হওয়ার উপায় সম্পর্কে জানতে আগ্রহী হন তাহলে উপরের লিঙ্কে প্রবেশ করুন।
মনোবিজ্ঞানীদের মতে, স্বামী স্ত্রীর মধ্যে শত্রুতার মনোভাব মনে প্রবেশ করলে তখনই বিচ্ছেদের বাতাবরণ তৈরি হয়।তাই এমন মনোভাব এলে তাকে আগে দূর করতে হবে।মনের মধ্যে চাপা ক্ষোভ সম্পর্ক নষ্ট করে। যে সব স্বামী স্ত্রীর সম্পর্কের মধ্যে সরলতা আছে তাঁদের মধ্যে কখনোই বিচ্ছেদ ঘটে না।
আমার ব্যক্তিগত ভাবে মনে হয়, জীবন তো একটাই।আর এ জীবনে আমার প্রিয় মানুষ ও একটাই, কোনও সুস্থ মানুষ কখনো অধিক জীবন সঙ্গীনী কাম্য করে না ।তাই সেই মানুষ টাকে ভালো রাখাই জীবনের একমাত্র উদ্দেশ্য হওয়া উচিত।যদি ঝকড়া, ঝামেলার মধ্যে লিপ্ত থাকি তাহলে ভালোবাসার মতো সময় থাকবে কোথায়?
আমি মাদার টেরিজার বিখ্যাত উক্তি টি সব সময় মনে রাখি---
"মানুষের বিচার করে সময় নষ্ট করলে
ভালোবাসবো কি করে-----"
চিত্রসূত্র- pixabay.com
Tags, ডিভোর্স
তথ্যসূত্র সংগৃহীত
ধন্যবাদ 😊
কোন মন্তব্য নেই: