ডিপ্রেশন কি?ডিপ্রেশন এর কারণ, এর লক্ষণ ও মুক্তির উপায় কি?
ডিপ্রেশন কি?
দিনের পর দিন কোন বিষয় নিয়ে এক ভাবে কষ্ট পেলে বা চিন্তা করতে থাকলে সেই চিন্তা দেহের স্বাভাবিক কার্যকারিতা নষ্ট করে দেয় এবং দেহে হর্মোনের ভারসাম্য ব্যাঘাত ঘটে।আমাদের জীবনের চাহিদা ও তার প্রাপ্তির মাঝখানে যে দূরত তৈরি হয় তার থেকেই মানুষের জীবনে ডিপ্রশন নেমে আসে।
আমরা নিজেরাই আমাদের জীবনের চাহিদা কে সবক্ষেত্রে এতটাই বেশি করে ফেলি যে তার তুলনায় প্রাপ্তি কম হলেই সেটাই আমাদের মানসিক অবসাদ এ পরিণত হয় আর দিনের পর দিন এটা চলতে থাকলে সেটা ডিপ্রেশন এ রূপান্তরিত হয়।
অতিরিক্ত মানসিক চাপের ফলে আমাদের সিমপ্যাথিটিক নার্ভাস সিস্টেম (এস এন এস) এ উত্তেজনা সৃষ্টি হয়।যার ফলে কিছু হরমোন যেমন কোর্টিসোল নরিপাইন ফরাইন - এর প্রভাব দেহে বৃদ্ধি পায়।
এবং যার ফলে আমাদের প্যারাসিমপ্যাথেটিক নার্ভাস সিস্টেম এর প্রভাব দেহে কমে যায়। সিএনএন আমাদের দেহের এবং মনের আরাম আর শান্তির জন্য দায়ী। আর এটা কমে গেলে আমাদের দেহে ও মনে মানসিক চাপের প্রভাব বৃদ্ধি পায় যাকে আমরা স্ট্রেস বলি। এই স্ট্রেস ই ডিপ্রেশন এর সৃষ্টি করে।
ডিপ্রেশন এর কারণ:
একজন মানুষ বিভিন্ন কারণে ডিপ্রেশনের কবলে পড়তে পারে।সবার ডিপ্রিশনের কারণ এক নয়।মানুষের জীবন যাত্রা যেমন আলাদা ঠিক তেমনই ডিপ্রেশন ও আলাদা।একজন ব্যক্তি অট্টালিকার উপরে বসে থাকলেও তাঁর জীবনে ডিপ্রেশন উঁকি দিতে পারে।আবার একজন নুন ভাত খেয়েও শাান্তি তে দিন যাপন করতে পারে। তাই ডিপ্রেশন এর সঙ্গে অর্থের কোন সম্বন্ধ নেই।
কি কি কারণে ডিপ্রেশন জীবনে প্রবেশ করে?
#1. অপমান বোধ:
যদি কোন ব্যক্তি অন্য একজনের কাছ থেকে প্রতিনিয়ত অপমানিত হয় তাহলে যখন তাঁর মনের মধ্যে চরম আঘাত লাগবে তখন সে ডিপ্রেশন এ ভুগবে।
এটা দেখা দেয় যাঁরা একটু লাজুক ধরনের মানুষ, যাঁদের আত্মমর্যাদা টা অন্যের কথার উপরে নির্ভর করে, নিজেকে সব সময় অন্য সবার থেকে কমা ভাবে, যাঁরা নিজেকে নিয়ে হীনমন্যতায় ভোগে তাঁদের ডিপ্রেশন এ ভোগার প্রবণতা বেশি লক্ষ্য করা যায়।
ডিপ্রেশন থেকে বেড়িয়ে মানসিকভাবে শক্তিশালী হওয়ার জন্য আরও পড়ুন----- মানসিক ভাবে শক্তিশালীদের বৈশিষ্ট্য গুলি কি কি? মানসিক শক্তি বাড়ানোর দশটি কৌশল
#2.মৃত্যু শোক:
খুব প্রিয় কাছের কোন মানুষ যদি কাউক ছেড়ে চলে যায় তখন সেই শোক অনেকেই সামলে উঠতে পারে না। এই জন্যই আগেকার মানুষ বলত কোন নিকটতম কেউ মারা গেলে তাঁকে একা থাকতে নেই।
এর কারণ হলো তাঁর চোখের সামনে তখন সেই ব্যক্তির স্মৃতি সব সময় ভেসে বেড়াবে, তাঁর মন তখন তাঁকে চাইবে কিন্তু যখন সে তাঁকে পাবে না আর তখনই চরম ডিপ্রেশন আসার সম্ভাবনা দেখা দেবে।
এই কারণেই কেউ মারা গেলে সেই বাড়ির যেই মানুষ টা চুপচাপ হয়ে যায় তখন তাঁকে কথা বলানোর চেষ্টা করতে হয়। তাঁকে ঐ পরিবেশ থেকে অন্য পরিবেশ নিয়ে যেতে হয়।এবং যতটা সম্ভব সেই মৃত ব্যক্তির কথা আলোচনা বন্ধ করতে হয়।
#3.একাকিত্ব:
কোন মানুষ যদি অনেক লোকজন পছন্দ করে, কোলাহল পছন্দ করে,কিন্তু কোন কারণে সে যদি পরে একাকী জীবন যাপন করতে বাধ্য হয় কিংবা অন্য কারো কথায় আঘাত পেয়ে নিজেকে গুটিয়ে নেয় সে তখন নিজেকে অসহায় বোধ করে এবং একাকিত্বের যন্ত্রণা তাঁর মনে অসহ্য হয়ে কাটার মতো বিধতে থাকে আর পরবর্তীতে সেটাই ডিপ্রেশন এ পরিণত হয়।
কিংবা যাঁরা দিনের পর দিন একা থাকে বিশেষ কারো সঙ্গে মেশে না তাঁরা ও অনেক সময় নিজেকে পৃথিবীর মধ্যে অসহায় ব্যক্তি মনে করে ডিপ্রেশন এ ভোগে।
#4.বংশগত কারণ :
কিছু কিছু পরিবারে এমন অনেক ব্যক্তি থাকেন যাঁরা তাঁদের বংশের বোঝা বয়ে ডিপ্রেশন এর শিকার হন। এদের সব বিষয়ে উত্তেজিত হয়ে পড়ার প্রবণতা দেখা দেয়। একটা সহজ সরল কথাও সহজ ভাবে না ভেবে জটিল আকার তৈরি করে, ফলে নার্ভে সব সময় চাপ সৃৃষ্টি হয় এবং এভাবে চলতে চলতে একটা সময়ের পরে মনে ডিপ্রেশন বাসা বাঁধে।
আমার ই এক পরিচিত পরিবার আছেন যাঁদের বংশে একজন না একজন ডিপ্রেশন এর শিকার। আর এটা নাকি ওদের পরিবারে অনেক দিন থেকে চলে আসছে। এবং বর্তমানে ঐ জেনারেশন এর একটি ছেলে পাগলে পরিণত হয়েছে। এবং তাঁর মা (এটা আমাদের নিজের চোখে দেখা) নিজের গলায় নিজে ধারালো বটি দিয়ে কোপ বসিয়ে দিয়েছিলেন।
যদিও তাঁর কপাল ভালো সেই যাত্রায় বেঁচে গিয়েছিলেন কিন্তু তবুও তাঁর ডিপ্রেশন কোন দিন কমেনি। পরবর্তীতে তিনি এই ডিপ্রেশন কে সঙ্গে নিয়েই মারা যান। কোন চিকিৎসায় তিনি সাড়া দেননি।
তাই বংশগত কারণে ডিপ্রেশন খুবই খারাপ।
#5.বর্তমান জীবনে কোন বড় পরিবর্তন এলে:
মানুষের জীবন সব সময় এক নিয়মে চলে না।চলতি পথে এমন অনেক সময় এমন আসে, যেই সময় টা পুরো জীবনেরই মোড় ঘুুরিয়ে দেয়।
এই সময়ে যাঁরা নিজেকে সামলাতে জানে তাঁরা অনেক দৃর এগিয়ে যায় কিন্তু যারা এই ধাক্কা সামলাতে না পারে তাঁরা ডিপ্রেশন এ চলে যায়।
ধরুন কেউ একজন কোন বড় অফিসে চাকরি করে কোন একটি কারণে তাঁর চাকরি টা চলে গেল। এই সময় তাঁর আগের জীবন যাত্রায় পরিবর্তন আসবে,তাঁর পরিবারের বিলাসিতা বন্ধ হবে, তাঁর চলার ধরন পাল্টে যাবে, ফলে এই সময় সে যদি নিজেকে শক্ত করে না ধরে থাকতে পারে তাহলে তাঁর মনে ডিপ্রেশন আসাটা কেবল সময়ের অপেক্ষা।
তাই জীবনে হঠাৎ যদি কোন বড় পরিবর্তন আসে তাহলে তাকে মেনে নিয়ে এগিয়ে যাওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ।
#6.অপ্রত্যাশিত কোন রোগ দেখা দিলে:
কোন কারণে যদি কোন সুুুুস্থ ব্যক্তি হঠাৎ জানতে পারে যে তাঁর শরীরে তাঁরই অজান্তে কঠিন কোন রোগ বাসা বেঁধেছে তাহলে সেই ধাক্কা অনেকেই সহ্য করতে পারে না।
বিশেষ করে এখন মানুষ কে সব থেকে বেশি আতঙ্কিত করে তুলছে ক্যানসার। এর নাম শুনলেই মানুষ অর্ধেক মারা যায়।
কিন্তু বর্তমানে এই রোগ টি কেবলমাত্র মনের জোরে সারিয়ে তোলা সম্ভব। সঙ্গে রাখতে হবে ডাক্তারি পরামর্শ এবং ওষুধ। ডাক্তারি পরিভাষায় বলে ওষধে রোগ সারে কুঁড়ি শতাংশ এবং মনের জোরে শরীর থেকে রোগ মুক্ত হয় আঁশি শতাংশ।
ডিপ্রেশন এর লক্ষণ গুলি------
■ হতাশা:
হঠাৎ করে যদি সব বিষয়ে মনের মধ্যে হতাশা প্রবেশ করে।এবং এটা দীর্ঘ সময় ধরে চলতে থাকে তাহলে সাবধানতা অবলম্বন করা প্রয়োজন।
■ রাগ,দুঃখ:
যদি নিত্য কথায় রাগ হয় এবং সামান্য কোন কারণে মনে খুুুব দুঃখ আসে তাহলে সাবধান। যাঁরা ডিপ্রেশনে ভোগে তাঁদের রাগের পরিমাণ হঠাৎ করে বেড়ে যায়।
এবং সবার কথা অসহ্য লাগে, নিজেকে পৃথিবীর মধ্যে সব থেকে দুঃখি মানুষ মনে হয়। অনেক দিন ধরে এমন চলতে থাকলে ডাক্তার দেখানো উচিত।
■ সব সময় মন খারাপ ভাব:
মাঝেমধ্যে মন খারাপ সবার
হয়। কিন্তু সেই মন খারাপ টা যদি এক ভাবে রয়ে যায় তাহলে তখন সেটা নিয়ে সিরিয়াসলি ভাবা উচিত।
কারণ অল্পতে যে কোন সমস্যায় খুব সহজেই মুক্তি পাওয়া যায় কিন্তু বেশি সময় নষ্ট হলে সমস্যা জটিল আকার ধারণ করে।
■ মনে সংশয়, দোদুল্যমানতা:
ডিপ্রেশন এ যাঁরা ভোগে তাঁরা সহজ বিষয় কেও জটিল বানায়। কাউকে সহজে বিশ্বাস করতে পারে না। মনের মধ্যে দোদুল্যমানতা কাজ করে।
■ বিরক্তি:
ডিপ্রেশন এর আর একটি মূল লক্ষণ হলো সব বিষয়ে সব কাজে বিরক্তির ভাব আসা। কোন কাজ মন দিয়ে করতে ভালো লাগে না।
■ খিদে ও ঘুম ভীষণ কমে যাওয়ায় অথবা বেড়ে যাওয়া:
হঠাৎ করে যদি খুব ঘুমাতে ইচ্ছা করে, বিছানা ত্যাগ করতে মন না চাই, সারাদিন ঘুুমানোর পরেও যদি মনে শান্তি না আসে। কিংবা হঠাৎ করে যদি ঘুম চলে যায় এবং এটা যদি বেশ কিছু দিন ধরে চলতে থাকে তাহলে ডাক্তার দেখানো উচিত।
এবং যদি খুব খিদে পায়, বা খুব খিদে কমে যায় তাহলে ও ডিপ্রেশন এর সম্ভাবনা দেখা দেয়।
■ কারো সঙ্গে কথা বলতে ইচ্ছে না করা:
ডিপ্রেশন এর আর একটি মূল লক্ষণ হলো কারো সঙ্গে মিশতে ইচ্ছা করে না। সবাইকে যেন হঠাৎ করে শত্রু মনে হয়।
■ শব্দ ও আলোতে বিরক্তি:
মনের মধ্যে ডিপ্রেশন বাসা বাাঁধলে কোন শব্দ এবং আলো দুটোই অসহ্য মনে হবে। তাই এদিকে ও নজর রাখা দরকার। যদি দিনের পর দিন এমন সমস্যা চলতে থাকে তাহলে ডাক্তার দেখানো উচিত।
■ হঠাৎ করে দেহের ওজন বৃদ্ধি পাওয়া বা কমে যাওয়া:
মন ভালো না থাকলে তার ছাপ মুখে ও চেহারায় পড়ে। মুখ হলো মনের আয়না আর সেই আয়নায় শরীরের সমস্ত কিছু ফুটে ওঠে।
তাই আপনার সেই শরীরে যদি হঠাৎ করে ওজন বৃদ্ধি পায় বা কমে যায় তাহলে ভাবতে হবে মনের মধ্যে কোন একটা গুরুগম্ভীর ব্যাপার চলছে। যেটা দীর্ঘস্থায়ী হলে মন গভীর ডিপ্রেশন এ চলে যাবে।
■ মাথা ব্যথা:
মাথা ব্যথা কম বেশি সকালেরই হয়। কিন্তুু সেটা যদি খুব বেশি হয় এবং বাড়াবাড়ির পর্যায়ে পৌঁছায় তাহলে সেটা ডিপ্রেশন এর এটাও আর একটা লক্ষণ।
■ সব কেমন ফাঁকা ফাঁকা লাগা:
বুকের মধ্যে যেন কেমন সব কিছু খালি মনে হবে। কাছের মানুষ কেউ পর মনে হবে। এটাও ডিপ্রেশন এর একটি লক্ষণ।
■ কোন কিছুতেই আনন্দ না পাওয়া:
ডিপ্রেশন এর এটা একটা মূল লক্ষণ বলা যেতে পারে।হঠাৎ করে জীবনে যদি আনন্দ করতে ভালো না লাগে, সব আনন্দ আনুষ্ঠান কে ফিকে মনে হয় তাহলে এটাও ডিপ্রেশন এর একটি লক্ষণ।
■ সারা গায়ে, পায়ে, পেটে, ব্যথা অনুভব করা:
যদি অনেক দিন ধরে এমন হয় তাহলে দেরি না করে ডাক্তারের কাছে যাওয়া উচিত।
■ ক্লান্তি:
কোন ভারী কাজ না করেও যদি শরীর ক্লান্ত হয়ে পড়ে এবং এমন যদি অনেক দিন ধরে চলতে থাকে তাহলে এটাও ডিপ্রেশন এর একটি লক্ষণ।
এই সময় কোন কিছু ভালো লাগবে না, এমন কি নিজেকে পর্যন্ত অসহ্য লাগবে।
এর মধ্যে যে কোন পাঁচ টি বা ততোধিক লক্ষণ যদি আপনার মধ্যে দু'সপ্তাহের ও বেশি সময় ধরে থাকে তাহলে সে ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া আপনার জন্য প্রয়োজনীয় হয়ে পড়বে।
কারণ এই সব সমস্যা বেশি দিন ধরে পুষে রাখা মানে রোগ কে আরো জটিল করা। অর্থাৎ মাইনর ডিপ্রেশন টার্ন করতে পারে মেজর ডিপ্রেশনে ।
অবশ্য ডিপ্রেশন কে কোনও অর্থেই কিন্তু জটিল রোগ বলা উচিত হবে না।বরং এটাকে বলা যেতে পারে অসুবিধা।এটা মন খারাপ থেকে তৈরি হওয়া শারীরিক ও মানসিক সমস্যার কারণে স্বাভাবিক জীবন যাত্রা থমকে যেতে পারে, কমতে পারে জীবনের মান।
■ মেজর ডিপ্রেশন:
যখন ডিপ্রেশন এর লক্ষণ গুলো অত্যন্ত প্রকটভাবে দীর্ঘদিন ধরে বহাল তবিয়তে থাকে অথবা কিছু দিন পর পরই দেখা দেয় তখন তাকে মেজর ডিপ্রেশন বলে। মেজর ডিপ্রেশন থেকেই আত্মহত্যার প্রবণতা দেখা দেয়।
মাইনার ডিপ্রেশন জীবনের কোন একটা সময়ে কোনও দুঃখজনক ঘটনা বা পরিবেশের কারণে দেখা দেয়। এই সময় কাছের মানুষের সান্নিধ্য ভীষণ প্রয়োজন হয়।
■ অ্যাটিপিকাল ডিপ্রেশন:
এটা মেজর ডিপ্রেশনেরই একটা ধরণ।যদিও এক্ষেত্রে ওষুধ এবং সাইকোলজিকাল কাউন্সেলিং এর প্রয়োজনীয়তা দেখা দিতে পারে।
এই সময় মানুষের সঙ্গে কথা বলা উচিত। মনোরম পরিবেশে যাওয়া দরকার তাহলে কিছুটা হলেও মন থেকে ডিপ্রেশন চলে যাবে।
■ ডিপ্রেশন:
অবসাদগ্রস্ত মানুষ জনের রক্তে ভিটামিন-ডি এর অভাব থাকলেও ডিপ্রেশন আসে। তবে ভিটামিন - ডি এর সঙ্গে ডেফিশিয়েস এর মধ্যে অবসাদ বা ডিপ্রেশন সম্পর্ক নিয়ে আরো ভাবে গবেষণার প্রয়োজন।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছে সারা পৃথিবীতে মোট জনসংখ্যার প্রায় ৬.৯ শতাংশ মানুষ ই ডিপ্রেশন এর শিকার।বর্তমানে এই রোগের বোঝার তালিকায় অর্থাৎ 2020 তে দাঁড়িয়ে অবসাদ দ্বিতীয় স্থান অধিকার করেছে।
চিত্রসূত্র- pixabay.com
অরেগন ষ্টেট ইউনিভার্সিটি (Oregon State university) -র বিজ্ঞানীরা একটি গবেষণার ফলাফলে প্রকাশ করেছেন যে সাদা চামড়ার মহিলাদের তুলনায় কালো চামড়ার অধিকারিণীদের মধ্যে ভিটামিন ডি এর অভাব তুলনামূলক ভাবে অনেকটাই বেশি থাকে।কারণ কালো চামড়ার মেলানিনের ঘনত্ব বেশি থাকায় চামড়ায় ভিটামিন ডি সিন্হেসিসের ক্ষমতা কমে যায়।
আবার হু (WHO) এর মতে সারা পৃথিবীর মোট জনসংখ্যার প্রায় ৫০-৭০% বিভিন্ন বয়সি মানুষ জনই ভিটামিন ডি এর অভাবে ভুগছে।মহিলা, পুরুষ থেকে বাচ্চা এবং বৃদ্ধ সবাই ই এই সমস্যায় ভুগছে অথচ অনেক ই সেটা জানেই না।
ডিপ্রেশন থেকে মুক্তির উপায়:
ডিপ্রেশন থেকে মুক্তি পেতে হলে সর্বপ্রথম এর চিকিৎসার প্রয়োজন। এবং সঙ্গে আরো বেশি করেে প্রয়োজন কাছের কোন মানুুুষের সান্নিধ্য। যে তাঁকে ভালো করে বোঝে, জানে, এবং মনের যত্ন নিতে পারবে এমন কোন প্রিয় মানুষ তাঁকে একটু সঙ্গ দিলে তাঁর ডিপ্রেশন থেকে মুক্তি পাওয়া খুুুব সহজ হয়ে উঠবে।
এছাড়া--------
● মেডিসিন:
ডিপ্রেশন কে অবহেলা না করে যত দ্রুত সম্ভব ডাক্তারের কাছে যেতে হবে এবং ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ সেবন করতে হবে।
ডিপ্রেশন কেও শরীরের আর পাঁচটা রোগের মতো ধরা উচিত। যেমন আমরা আমাদের যদি সর্দি কাশি হলে, জ্বর হলে যেমন ডাক্তার দেখাই এটাও কিন্তু ঠিক তেমনই। কেউ ডিপ্রেশন এর শিকার হলে এটা ভাবার কোনো কারণ নেই যে সে পাগল কিংবা খারাপ কিছু। বরং সেই মূহুর্তে তাঁর পাশে দাঁড়িয়ে তাঁকে মানসিক শক্তি জোগানো উচিত এবং ওষুধ খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া উচিত।
সকলে মিলে আমরা পারি এমন মানুষের পাশে দাঁড়াতে তাঁকে মনের জোর দিতে।তাহলে পরে অন্য কেউ ডিপ্রেশন এ ভুগলে লজ্জা পাবে না।সবার সঙ্গে সে মন খুলে তাঁর সমস্যার কথা বলতে পারবে।
● দেহের ওজন বাড়তে দেবেন না:
দেহের ওজন বেড়ে যাওয়া মানেই বাড়তি ঝুঁকি মেনে নেওয়া। লো ক্যালরি ব্যালেন্সড ডায়েট মেনে চলতে হবে।যাতে করে বাড়তি ওজন যেন কম থাকে বা না হয় এদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। ওজন নিয়ন্ত্রণ করতে পারলে ডিপ্রেশন কে নিয়ন্ত্রণ করা যায়।
● অবসাদ দমনে চাই অন্যান্য পুষ্টিকর খাদ্য:
অবসাদগ্রস্ত থেকে মুক্তি পেতে ভিটামিন ডি এর সঙ্গে চাই আরও অনেক পুষ্টিকর খাদ্য।
যেমন বিটাক্যারোটিন - গাজর, কুমড়ো, পাকা কলা,,পাকা আম,পেঁপে, টমেটো, পালংশাক, বিনস,তরমুজ ইত্যাদি খাাদ্য। এছাড়া ভিটামন- সি ও ভিটামিন- ই যুক্ত খাদ্য।
ভিটামিন -সি- গাঢ় সবুজ পাতাওলা শাক, আমলকি, পাতিলেবু,কমলালেবু, কাঁচামরিচ, পেয়ারা।
ভিটামিন- ই-- সয়াবিন তেল, আমন্ড, ওয়ালনাট, ইত্যাদি।
এছাড়া, প্রোটিন, আয়রন, সেলেনিয়াম,ওমেগা-থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড ইত্যাদি ও শরীরের জন্য ভীষণ প্রয়োজন।
● জল ও সোডিয়াম:
তীব্র গরমে দেহে জল ও সোডিয়াম লবণের পরিমাণ কমে যাচ্ছে না তো?
তাহলে কিন্তু চোখে ঝাপসা দেখা, ক্লান্তি, অস্বাভাবিক দুর্বলতা, পরিবেশের সঙ্গে বিচ্ছিন্নতা, অসার লাগা, কিছু ভালো না লাগা এমন ধরনের সাময়িক অবসাদ জনিত লক্ষণ দেখা দেয়।
প্রচুর জল,তরল খাবার, ও তাজা রসালো ফলের মাধ্যমে দেহকে রিহাইড্রেটেড করা গেলে এই ধরনের সমস্যা এড়ানো সম্ভব হয়।
● নিয়মিত ব্যায়াম করা:
মানসিক অবসাদ তাড়াতে ব্যায়াম একটা জাদু কাঠি বলা যায়। যোগাসন ও প্রাণায়াম মন ও শরীর কে শান্ত করে। এবং মন থেকে সমস্ত ডিপ্রেশন দূূূর করে। প্রাণায়াম এর উপকারিতা কি তা জানতে হলে
● ইতিবাচক চিন্তা করা:
মনের মধ্যে যখন নেতিবাচক চিন্তা ভাবনা প্রবেশ করে তখন সেই মূহুর্তে ইতিবাচক ভাবনা ভাবতে হবে।
আর প্রতিটা মানুষের ই উচিত সব সময় ইতিবাচক চিন্তা ভাবনা করা। নেতিবাচক চিন্তা মন কে ক্লান্ত করে তোলে।সব কাজ পণ্ড করে। আজও পর্যন্ত নেতিবাচক চিন্তা কোন শুভ কিছু করতে পারিনি তাহলে বৃথা নেতিবাচক চিন্তা করে সময় নষ্ট করে কি লাভ।
ইতিবাচক চিন্তা জীবন কে, পরিবেশকে সুন্দর করে তোলে তাই সব সময় ইতিবাচক চিন্তা ভাবনা করা উচিত।
● খুশি তে থাকুন:
নিজে খুশি মনে থাকলে অপরকে ও খুশিতে রাখা যায় । পরিবার, পরিবেশ সুস্থ থাকে সমাজে ইতিবাচক ভাবনা প্রেরিত হয় এবং খুুুব সহজে অবসাদের হাত থেকে রেহাই পাওয়া যায়।
●অনিদ্রা দূর করা:
এখন কম বেশি অনেকেই এই সমস্যায় ভোগেন। ঠিক মতো ঘুম না হলে মনে অবসাদের জন্ম নেয় তাই প্রতিদিন যাতে সুুুন্দর ঘুম হয় সে দিকে খেয়াল রাখতে হবে।
তাই ঘুমানোর এক ঘন্টা আগের থেকে ইলেকট্রিক যন্ত্রর কাছ থেকে দূরে সরে থাকতে হবে। ঘুমানোর স্থান যেন পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন হয় সেটা দেখতে হবে এবং গরমে অবশ্যই ঘুমাতে যাওয়ার আগে স্নান সেরে নিতে হবে।
এতে করে শরীর ও মন ফুরফুরে ও তরতাজা থাকবে।
●সাইকোথেরাপি:
মানসিক অবসাদ তাড়াতে অবশ্যই সাইকোথেরাপি নেওয়া উচিত। এতে করে তাড়াতাড়ি সুুস্থ হয়ে ওঠা যায়।
তবে সবটাই করতে হবে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী।
● ভালো কাজের সঙ্গে যুক্ত থাকা:
ভালো কাজ বলতে এখানেে সমাজ সেবা মূলক কাজের কথা বলা হচ্ছে। যদি আপনার সামর্থ থাকে তাহলে আপনি আপনার সাধ্যমত অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারেন।
এতে করে তাঁদের মুখের এক টুকরো হাসি আপনার জীবনের সেরা উপহার হবে। তাদের থেকে আপনি বেশি উপকৃত হবেন।
●অবসাদে বাদ:
প্রসেসড খাবার, রিফাইন্ড কার্ববোহাইড্রেট, ময়দার তৈরি খাবার , চিনি, ও চিনির তৈরি খাবার,কৃত্রিম সুুগার,অ্যালকোহল,কফি , আচার, ধূমপান ইত্যাদি পুরোপুরি বহিষ্কার করতে হবে।
উপসংহার
মানসিক অবসাদ থেকে মুক্তি পাওয়াা টা কোন সমস্যা নয়, সমস্যা হল মানসিক অবসাদের কবলে পড়া।যখন মানুষ নিজেকে নিয়ে নিজে খুুশি না হয়, নিজের খুশির ভার তুুুলে দেয় অন্যের হাতে,নিজের ভালো থাকাটা নির্ভর করে অন্যের উপরে তখনই মানুষ ডিপ্রেশন এ ভোগে। কারণ আপনি তো নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করত পারেন না। নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করত
পারলে ডিপ্রেশন সহজে প্রবেশ করতে পারে না।
আপনাকে কেউ কম ভালো বাসলে আপনি কষ্ট পান, আপনাকে কেউ দেখতে খারাপ বললে আপনি দুঃখ পান, কেউ আপনার থেকে কর্মক্ষেত্রে এগিয়ে গেলে আপনার নিজেকে অপরাধী মনে হয়, তার মানে আপনার হাতে কিছু নেই আপনি অন্য মানুষের ইচ্ছা অনুসারে চলেন।আপনার জীবন যদি অন্যের ইচ্ছা অনুসারে চলে তাহলে আপনাকে একবার নয় বারবার ডিপ্রেশন এ ভুগতে হবে।
তাই ডিপ্রেশন এর হাত থেকে রেহাই পেতে চাইলে নিজের মনকে নিয়ন্ত্রণ করুন। মনের গোলাম না হয়ে মন কে আপনার গোলাম বানান।
চিত্রসূত্র- pixabay.com
তথ্যসূত্র সংগৃহীত
Tags, ডিপ্রেশন
ধন্যবাদ 😊
কোন মন্তব্য নেই: