"প্রকৃতি আমার কতটা আপন" একটু শুনবে নাকি?আজ আমি জানাবো, প্রকৃতি আমার হৃদয় মাঝে কতটা দোলা দেয়।

বৃষ্টির দিনে প্রকৃতি যেন,সবে স্নান সেরে ওঠা
নববধূটির মতো লাবণ্যময় অপরূপ রঙে 
সেঁজে ওঠে।লতায় পাতায় ফোঁটা ফোঁটা 
জমে থাকা জলকণা যেন তার অলংকার।
সে এক অপরূপ সৌন্দর্য, দেখলেই মনটা 
শীতলতায় ভরে ওঠে-------------------------
পৃৃৃথিবীর মধ্যে এই একটা বন্ধুই তোমাকে আজীবন বন্ধুত্বের বাঁধনে বেঁধে রাখবে তুুমি যদি চাও তবে ।

প্রকৃতির সঙ্গে মানুষের নিবিড় সম্পর্ক।প্রকৃতির মাঝেই তো অনন্ত শান্তি।প্রকৃতি যেমন মন খারাপের  সঙ্গী হয় তেমনি আনন্দের সময় ও মনে 
হয় তাকে আলিঙ্গন করি।

প্রকৃতির সঙ্গে আমার সেই ছোট্ট বেলা থেকেই সখ্যতা।কিন্তু আগে কখনো এতো নিবিড় ভাবে
তাকে দেখিনি। এখন অনেক টা সময় তার দিকে তাকিয়ে আমার প্রাণ টা জোড়ায়।আমি লিখতে বসলে এক এক সময় আমার সত্যিই কিছু মনে আসে না, আমি যখন আমাদের ফ্ল্যাটের ব্যালকনিতে গিয়ে দাঁড়ায়, তখন সামনে দণ্ডায়মান একটি বেল গাছ তাঁর বাহারি পাতা গুলো দুলিয়ে আমাকে যেন স্বাগত জানাই।আরও অজস্র রঙিন ফুলের গাছ আছে তার আশেপাশে। ওখানে অনেক রঙ বেরঙের প্রজাপতি ডানা মেলে উড়ে বেড়ায় ।ছোট বড়ো কত পাখি আসে, সকালের ঘুম টা ভাঙ্গে পাখিদের কিচিরমিচির শব্দে। আমার মন টা তখন আনন্দে নেচে উঠে।তারা যেন আমার কলমে ভাষা জোগায়।কলকাতা তে এসে এমন সুন্দর একটি পরিবেশ পাবো, সেটা সত্যিই জানা ছিল না।তবে সব টাই দূর থেকে।কাছে যেতে পারি না।গাছ গুলো আছে একজনের বাড়িতে।তবে চক্ষু দর্শন এ মন ভরায়।

আমার ছোট বেলা কেটেছে গ্রামের অপরূপ সৌন্দর্যে। আমি ছিলাম ভীষণ ডান পিঠে।আম গাছ আমার খুব প্রিয়।কিন্তু আমাদের নিজস্ব আম গাছ ছিল না। আমি আম কুড়িয়ে আনতে খুব আনন্দ পেতাম। আমের সময় আমি আর আমার কাকার মেয়ে দু'দণ্ড ঘরে দাঁড়াতাম না।সারাক্ষণ টইটই করে ঘুরে বেড়াতাম লোকের আম বাগানে।আমার তখন খুব সখ করত একটা আম গাছের।কিন্তু সে সখ আর পূরণ হয় নি। একবার একটা মজার ঘটনা ঘটেছিল। এখন গল্প বলতে মজা লাগছে,কিন্তু সেদিন আমার যা হয়েছিল সে আমিই জানি।

তখন আম সবে পাকার মুখে, এই সময় ঝড় হলে আমি খুব আনন্দ পেতাম আম কুড়িয়ে আনব তাই। এমনই একদিন খুব ঝড় হচ্ছে, বাইরে প্রচুর গাছ পালা ভাঙ্গছে।কারও কারও ঘরের টালির দোচালা উড়ে যাচ্ছে, সবাই যে যার মতো ব্যস্ত । এদিকে আমার তো আম কুড়োনোর জন্য প্রাণ টা যেন যায় যায় অবস্থা।মা তো কড়া সুরে কোথাও না যাওয়ার জন্য নিষেধ করেছে। কিন্তু আমাকে তো যে করেই হোক, যেতেই হবে।অগত্যা সবাই কে লুকিয়ে আমি আর আমার কাকার মেয়ে দে ছুট।

সেদিন আমরা দুজন এতো আম কুড়িয়ে ছিলাম যে শেষ পর্যন্ত এতো আম বাড়ি আনা সম্ভব হয় নি ।তবুও দুজন দু 'বস্তা করে এনেছিলাম। তখন আমরা শুধু ভাবছি, গাছ তলায় আর কেউ কেনও আসছে না! কেউ ঘর থেকে আজ কেনোই বা বার হচ্ছে না! যাইহোক, অবশেষে বাড়ি ফিরলাম। আমি সবে আমাদের উঠানে এসে দাঁড়িয়েছি, ওমনি, মা পিছন থেকে এসেই দুমদাম পিঠে কিল ঘুষি দেওয়া শুরু করেছে। মায়ের হাতে আমি ঐ একদিন ই মার খেয়েছিলাম। কিন্তু পিঠ আমার ফুলে উঠেছিল।

পরে জানতে পারলাম, সেদিন কার ঝড় টা ছিলো ভয়ঙ্কর, আমরা সেদিন বেঁচে নাও ফিরে আসতে পারতাম।আর সেইজন্যই সেদিন কেউ ঘর থেকে বার হয় নি। সেই ঝড় টা ছিলো- 2009 এর ভয়ঙ্কর 'আয়লা' ঝড়। 

সেইদিন গুলোর কথা আজ ভাবতে খুব ভালো লাগে।এখনো যেন মনে হয় সব স্মৃতি গুলোই ভীষণ টাটকা, প্রাণবন্ত।

এছাড়া আমি পুকুরে মাছ ধরতে পারতাম। এখানেও সঙ্গী আমার সেই কাকার মেয়েই। একদিন আমি আর ও একটা পুকুরে মাছ ধরছি,সেদিন আমি একটা মাছ ও পায় নি।আমার তো খুব রাগ হচ্ছে, এমন সময় আমার পাশের একটা মেয়ে খুব বড়ো একটি মাছ পেয়েছে। আমি এতোটা শয়তান ছিলাম যে,ঐ মেয়েটির হাতের মুঠোয় আমি হাত ঢুকিয়ে মাছ টা কেড়ে নিয়েছিলাম। সেই মেয়ে টি তখন খুব কাঁদছিল, অবশ্য তার কান্না দেখে আমি মাছ টা পরে দিয়ে দিই।কিন্তু আমি এমন ভাব করছিলাম যে আমি যেন ওকে করুনা করে মাছ টা দিলাম।ঐ দিনটার কথা মনে পড়লে আমার খুব লজ্জা লাগে।

আমি ছোট বেলায় লুটেপুটে মজা করেছি,কিন্তু আমার দিদি আবার ঘর থেকে ই বার হত না ।বাবার সঙ্গে মাঠেও যেতাম, বাবা কাজ করত, আর আমি জমির আঁলে বসে থাকতাম। মাঠ ঘাট আমার তখন প্রাণ ছিলো। আর যেকোনো গাছের ফল চুরি করার আমি মাস্টার ছিলাম। 

আর একটা মজার ঘটনা বলি,  আমরা প্রতিদিন চার জন তখন জল আনতে যেতাম, আমাদের বাড়ির থেকে একটু দূরে। তখন গ্রামের মধ্যে সবে বাইশ পাইবের কল বসেছে। তা,আমরা যেখান দিয়ে যেতাম, সেই রাস্তার পাশে একটা কুল গাছ ছিলো,  আমরা প্রতিদিন সেই গাছে কলে যাওয়ার সময় কুল চুরি করতাম। সেদিন ও যথারীতি একজন গাছে একটা লাঠি দিয়ে কুল পারছে উপরের দিকে তাকিয়ে, আর আমরা তিন জন মাথা টা নীচু করে কুল কুড়াছি। এদিকে গাছের মালিক আমাদের পিছনেই চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে।আমরা কুল গুলো নিয়ে সবে উঁচু হয়ে উঠেছি, ওমনি সেই লোক একটা মোটা লাঠি নিয়ে করবি তাড়া। আমরা পড়ি কি মরি করে যে যার মতো দে ছুট। এবার সে লোক তো আমাদের আর ধরতে পারেনি, কিন্তু আমাদের জলের পাত্র গুলো রয়ে গেছে সেই লোকের কুল গাছের তলায়। সে লোক কিছুতেই আর সেই পাত্র দেয় না। অগত্যা গেলাম বাড়িতে।

সেদিন বাবা যদি বাড়িতে না থাকত, তাহলে আমার খবর ছিলো। আমি তো বাবার প্রশ্রয়ে বেশি বদমাইশি করতাম। বাবা আমার আর একটা জীবন। বাবার আদরেই আমি বাঁদর ছিলাম।

যাইহোক, সেই মেয়ে টি আজ কিন্তু বড্ড শান্ত।এখন প্রাণ টা ইট পাথরের মাঝে একটু একটু প্রকৃতির সান্নিধ্য পায়। সেই বিশাল প্রকৃতির ছোঁয়া আজ আর পাই না।তবুও ভাগ্য ভালো প্রকৃতি কে ছুঁতে না পারলেও দেখে চক্ষু ভরাছি। আজ তিন বছর হলো আমি মাটির স্পর্শ পায় নি। এখানে আশপাশে কোথাও এক টুকরো ফাঁকা মাঠ নেই। চারিদিকে ই শুধু ইমারত আর ইমারত। 

তবে আমরা মাঝে মাঝে একটু দূরে একটা ছোট্ট পার্কে যায়। একান্তে কিছু টা সময় অতিবাহিত করি। ওখানে গেলে প্রাণ টা যেন আনন্দে উচ্ছ্বসিত হয়ে উঠে।
মনে হয় যেন, ----ঘর হতে এক পা ফেলিয়া, দেখা হই নাই চক্ষু মেলিয়া।

এখন তবে যাই,সব বন্ধুদের জানিয়ে বিদায়।

ধন্যবাদ 😊😊

কোন মন্তব্য নেই:

Blogger দ্বারা পরিচালিত.