একটি শিক্ষা মূলক ছোট গল্প - "ফাঁদ"

  একটি শিক্ষা মূলক ছোট গল্প- "ফাঁদ"


           আমি মাঝে মাঝে ছোট্ট ছোট্ট বিষয়ের উপর ছোট গল্প লিখি। আজকে আমার লেখা একটি ছোট গল্প আপনাদের উপহার দিলাম। চলুন তাহলে শুরু করা যাক----

                            "ফাঁদ"

                            

কই গো বিল্টুর মা, চটজলদি এদিকে আয় তো দেখি;
নে নে, তারাতারি একে জবাই কর।
ওহ্ অনেক দিন মাংস খায়নি; প্রাণটা যেন যাই যাই অবস্থা।

আজ একটু কবজি ডুবিয়ে দুটো ভাত খাবো--
দেখ, দেখ, বকের গাঁ টা সাদা ধব ধব করছে।          ওজন ও বেশ আছে, 

                                 অবলা বক

একটু ঝোল ঝোল করে রাধতো দেখি।

কিন্তু ঘরে তো একটু ও চাল নেই! 
তোমার যে কাল রাতে কতবার করে বললাম চালের কথা।

তাছাড়া তুমি আবার আজকেও বক ধরেছো?
বিল্টু তো----------

চুপ কর নুসরত, আমার আর মাথা খারাপ করিস না। সারা দিনই তো ঘরে বসে থাকিস।
যত দায়,সব আমার কাঁধে!

কত করে বললাম যে, ঐ পুটিদের সাথে চিংড়ির পোনা ধরতে যা।
                             গঙ্গায় মাছ ধরা

তা তো গেলি না, এবার থাক সবাই না খেয়ে;
যত সব কুঁড়ে মেয়ে মানুষের দল--------।

সুন্দরবনের জঙ্গল- নদী সংলগ্ন বদ্বীপ ঘেঁসে ফরিদ মিঞার বাস।জীবন তাঁদের বড় অসহায়।এখানে খাদ্য সঙ্কট প্রবল।

ফরিদ মিঞা আর নুসরতের ছোট্ট সংসারে বিল্টু ই তাঁদের একমাত্র সন্তান।
ফরিদ মিঞার একার উপার্জনে, সংসার প্রায় অচল। এ সংসারে চাল আনতে নুন ফুরায়, আবার নুন আনতে গিয়ে তেল ফুরিয়ে যাওয়ার মতোই অবস্থা।

ফরিদ মিঞা, জীবন প্রায় হাতে নিয়ে জঙ্গলের মধ্যে প্রবেশ করে প্রতিনিয়ত।
ওখান কার সবার জীবন যাত্রা প্রায় একি রকম।

জঙ্গলের মধ্যে গোলপাতা কাঁটা, ঘর ছাওয়ার পাতা কাঁটা, মধু সংগ্রহ, মৌচাকের মোম সংগ্রহ করে কোন রকম দিন চলে।
তবুও বছরের বেশিরভাগ সময়ই বসে থাকতে হয়।
কোনও কাজ ই থাকে না।

এছাড়া নদীর ধারে কাঁকড়া ধরে, কুঁইচ্ছা মাছ,ফ্যাসা, কই ভোলা, চ্যালা ইত্যাদি  মাছ ধরেও কিছু দিন কেটে যায়।
কিন্তু উত্পাদন এতো যত্সামান্য যে দিন দিন চলাই দায় হয়ে পড়েছে।

                  কই রে, কই গেলি রে নুসরত, 
এই দেখ চাল এনেছি।
এগুলো তারাতারি একটু ফুটাতো দেখি,
আমি ততক্ষণে পুকুর থেকে একটা ডুব দিয়ে আসি, এসে গরম গরম মাংস ঝোলের ভাত -- ওহ্ আজ জমে যাবে।

শোনো না,ঐ ছেলে কি কাণ্ড টা ঘটিয়েছে, 
আমি যেই না একটু রান্নাঘরে গেছি, ওমনি বিল্টু বক টা আজ আবার ছেড়ে দিয়েছে------ এখন কি করি বলতো!

সে কই? 

আজকে ওর একদিন কি আমার একদিন---
এই শয়তান ছেলে,  
তোর বকের উপরে এতো কিসের দরদ শুনি?

এতো পাকামি তোর আসে কোত্থেকে!

আব্বা,  তুমি আমার যত খুশি মারবা মারো,
তবুও আমি, তুমি পাখি ধরে বাড়িতে আনলে, 
আমি আবার ছেড়ে দেব।
 
তুমি কি জানো না?
যে ঐ পাখিটার বাড়ি, তার ছোট্ট ছোট্ট বাচ্চা আছে,

তারা তো ওদের মা কে, বাবা কে ,না পেলে
খুব কাঁদবে।

তোমরা সব খুব নিষ্ঠুর, খুব বাজে, একদম পচা----
একটু ও মায়া নেই!
 
                  একরত্তি, ছোট্ট বিল্টুর কথা শুনে ফরিদ মিঞার চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়ল।

সত্যিই তো ,এতোটা কখনো ভাবিনি আমরা!
আসলে নিজেদের জীবনে একটার পর একটা ফাঁদ কেটে কেটে দিন চালাতে গিয়ে, অন্য প্রাণীর কষ্টের কথা আর মাথায় ই আসে না।

তবে আজ বিল্টুর কথায়, বুকের মধ্যে মোচড় দিয়ে উঠলো, 

অবলা প্রাণী গুলো সত্যিই বড় অসহায়।
আমরা নিজেদের মুখে তৃপ্তি, গাঁয়ে শক্তি আনতে গিয়ে কত অবলা প্রাণীকে আকালে শেষ করে দিই।

তবে ফরিদ মিঞা অবলা অসহায় প্রাণীর প্রাণের মূল্য আরও গভীরভাবে উপলব্ধি করতে পারল এই ঘটনার দিন দশেক পরেই।

সেদিন, 
বিল্টু ওর আব্বুর সাথে মাছ ধরা দেখতে গেছে নদীর পাড়ে।

ফরিদ মিঞা তখন মাঝ নদীতে।
বিল্টু বসে আছে নদীর পাড়ে এক কোণে।

এদিক টাই সাধারণত কোনও জীব যন্ত সহজে আসে না।

বেশি কিছু টা সময় কেটে যাওয়ার পর, 

হঠাত্ ফরিদ মিঞা চিত্কার করে উঠলো, 
ছোট্ট বিল্টু ,তার আব্বুর চিত্কারের হেতু বুঝতে পারছে না।

ফরিদ মিঞা অসহায়ের মতো চিত্কার করছে---
এদিকে আশেপাশে কেউ নেই,

নদীর পানি কেটে তারাতারি পাড়ে ফিরাটাও ওতো সহজ নয়।
জঙ্গলের ভিতর থেকে প্রাণপণে ছুট আসছে 
একটি চিতা বাঘ।

বিল্টুর পাশেই কাঁটাতারের বেড়া দিয়ে জঙ্গল ঘেরা,
তবে ওটা টপকাতে চিতা বাঘের খুব বেশি সময় লাগে না।

ফরিদ মিঞার পা দুটো যেন পানি তে আটকে যাচ্ছে, 
কথা ক্ষীণ হয়ে আসছে, এক অসহায় দৃষ্টিতে ছেলের দিকে তাকিয়ে আছে---

তাঁর ছেলের যে এই মূহুর্তে প্রাণ সংশয়!
কি করে ছেলেকে বাঘের হাত থেকে রেহাই করবে কিছু বুঝে পাচ্ছেনা।

কিন্তু আল্লাহ্ র অসীম কৃপা যে,
সেই সময় জঙ্গল পরিদর্শনে এসেছে ফরেস্ট গার্ডরা।
তাঁরা সেই মূহুর্তে ঐ স্থানে এসেই হাজির হয়েছে।

এবং তাঁদের কাছে আছে পশুদের ঘুম পাড়ানি  গান।
ফলে উপরওয়ালার ইচ্ছায়, সে যাত্রায় প্রাণে রক্ষা পেল বিল্টু।

ফরিদ মিঞা দৌড়ে এসে,
 ছেলেকে বুকের মধ্যে জাপটে ধরল।

আর সেদিন বুঝল, প্রাণের মূল্য কতটা।
ফরিদ মিঞা ,সেই দিন ছেলে কে ছুঁয়ে কথা দিল---

আমি আর কোনও দিন, কোনও অসহায় প্রাণীকে 
শিকার বানাব না। আজ এই তোর দিব্যি করে বলছি, খোকা।

ফাঁদ পেতে শিকার ধরে ,
আমি তৃপ্তি পায়, 

কিন্তু সেই অসহায় প্রাণীর ঘর অন্ধকার হয়।

হে আল্লা ,
আজ তুমি আমার চোখ খুলে দিলে,
তোমাকে অশেষ ধন্যবাদ।


কলমে- রোজিনা ব্যানার্জি 😊

চিত্র সূত্র- pixabay.com 

Tags- একটি শিক্ষা মূলক ছোট গল্প - "ফাঁদ"

ধন্যবাদ 😊


1 টি মন্তব্য:

Blogger দ্বারা পরিচালিত.