দীর্ঘ ও নীরোগ জীবন কিভাবে লাভ করা যায়?

                          "প্রাণ খুলে হাসুন"
                             চিত্রসূত্র-pixbay.com 

দীর্ঘ ও নীরোগ জীবন:

                       একটি গবেষণায় দেখা গেছে আমাদের আগের প্রজন্মের মানুষেরা আমাদের থেকে দীর্ঘজীবী হতেন।এর কারণ হিসেবে বিজ্ঞানীরা বলেছেন তখন কার দিনে ছিল দূষণমুক্ত আবহাওয়া, ভেজালহীন খাবার এবং একে অপরের সঙ্গে সহানুভূতিশীল মনোভাব তাঁদের নীরোগ দীর্ঘ জীবন লাভের মূল চাবিকাঠি


                 বর্তমানে আমরা একা থাকতে ভালোবাসি।বেশি কথা বলতেও পছন্দ করি না।প্রকৃতি থেকে থাকি অনেক দূরে।যার ফল স্বরূপ জীবনের আয়ু যাচ্ছে কমে।সেই বিষহীন পৃথিবী আর আমরাা ফিরে পাব না। তবে আমরা আমাদের দৈনন্দিন জীবনে সামান্য রদবদল এনে বাড়াতে পারি আমাদের গড় আয়ু।নীরোগ শরীর  এবং সুুস্থ মন যদি পেতে চান তাহলে আজ ই জীবনের কিছু বদল আনুন।

#1.প্রাণ খুলে হাসুন:

                          হাসি কিন্তু দীর্ঘ নিরোগ জীবনের একমাত্র ওষধ।প্রাণ খুলে হাসলে হার্ট ভালো থাকে।আর শুধু হার্ট ই নয় একটু খানি হাসিতে সারা শরীর উপকৃত হয়।একঘণ্টা ব্যায়াম করলে যে উপকার পাওয়া যায় মাঝে মাঝে একটু খানি হাসলে ঠিক ততটাই উপকার মেলে। 

          বর্তমানে মানুষ যেন হাসতেই ভুলে গেছে।হাজার কাজের ব্যস্ততায় আমরা নিজে কেমন আছি এটাই লক্ষ্য করি না। কিন্তু ভালো থাকার জন্যই তো জীবন, আর সেই জীবনে যদি মুখে হাসি টুকুই না থাকে তাহলে আমরা যে ভালো আছি এটা কি করে বলা যায়? 


                        তাই বেশি করে শুধু হাসুন, অপরকে হাসান, অন্যদের সঙ্গে একটু হাসিঠাট্টা ও আনন্দ করুন। আপনি কতটা ভালো আছেন সেটা আপনি নিজে সব থেকে ভালো জানেন,তাই আপনি আপনার মুখের ভঙ্গি সম্পর্কে সচেতন হোন।যদি চেহারায় ও মনে বিষণ্ণতা আসে তাহলে চোখে মুখে হাসির আভা আনুন। 

                     দিনের কিছু টা সময় অতিবাহিত করুন সোশ্যাল মিডিয়া য় কমেডি মুভি কিংবা যে কোন কমেডি টিউটোরিয়াল এ। এতে মন থেকে সমস্ত বিষণ্ণতা কেটে যাবে মন হালকা লাগবে। জীবনে গুরুগম্ভীর ভাব আনার কোন কারণ নেই, জীবন টাকে মজা করে কাটান যার ফল স্বরূপ উপভোগ করবেন দীর্ঘ ও নীরোগ জীবন
নীরোগ জীবন
               চিত্রসূত্র- pixabay.com 

#2.পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুমান:

                                  সুস্বাস্থ্যের জন্য ঘুম শরীর এবং মনের ট্যাবলেট।ঠিক মতো না ঘুম হলে পরের দিন সব কাজই পণ্ড হয়।ব্যক্তি বিশেষে ঘুমের সময়ের তারতম্য হলেও সাধারণ ভাবে সাত- আট ঘণ্টা ঘুম আমাদের দরকার।তবে লক্ষ্য রাখতে হবে ঘুম টা যেন বেশ গাঢ় ঘুম হয়।আর এই গাঢ় ঘুমের জন্য কয়েকটি বিষয়ে নজর দেওয়া প্রয়োজন ।যেমন, ঘুমানোর বেশ কয়েক ঘন্টা আগে থেকে চা,কফি,সিগারেট খাওয়া বন্ধ করতে হবে।

                  রাতে বেশি মশলা যুক্ত খাবার খাওয়া চলবে না।ঘুমানোর আগে উত্তেজনা পূর্ণ কোনও কথা আলোচনা করা ঠিক নয়।ঘুমাতে যাওয়ার এক ঘণ্টা আগ পর্যন্ত মোবাইল কিংবা ল্যাপটপ পরিহার করা উচিত।ঘুমের ওষুধ নিয়মিত খাওয়া খুব ক্ষতিকর। 


             দরকার হলে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ক্যালসিয়াম- ম্যাগনেশিয়াম সাপ্লিমেন্ট নিতে পারেন। হ্যাঁ আর একটা কথা ঘুমের সময় ছাড়া বিছানা ব্যবহার করবেন না। এতে করে যখন আপনি ঘুমাতে যাবেন তখন একটা পরিপূর্ণ ঘুম হবে।মনে রাখবেন দীর্ঘ ও নীরোগ জীবনের জন্য ঘুম কিন্তু ভীষণ প্রয়োজন।

#3.ফাইবার যুক্ত খাবার খান:


                                        নিয়মিত পেট পরিষ্কার না হলে শরীরে নানা রোগ বাসা বাঁধে।কোষ্ঠবদ্ধতা থেকে সৃষ্টি হয় হেমারেড,উচ্চ রক্তচাপ, প্রেস্ট এবং প্রস্টেটের ক্যানসার ও।তাই রোজ যাতে পেট পরিষ্কার হয়,সেদিকে লক্ষ্য রাখার জন্য ফাইবার যুক্ত খাবার খেতে হবে।শাকসবজি, ফলের যে অংশ টা হজম হয় না সেটাই হল ফাইবার।এটা হজম না হয়ে শরীর থেকে বেরিয়ে যায় অন্য বর্জ্য পদার্থ সঙ্গে নিয়ে।


                   তাই পেট পরিষ্কার রাখার জন্য ফাইবারের ভূমিকা অনেক।এছাড়া পেট পরিষ্কার থাকলে অনেক অসুখের হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।
      কলে ছাঁটা চাল,মিহি আটা না খেয়ে ঢেঁকিছাঁটা চাল কিংবা ভুসিযুক্ত আটা খাওয়া খুব ভালো।এছাড়া খোসাসুদ্ধ ফল,প্রচুর পরিমাণে টাটকা শাকসবজি খেতে হবে।
নীরোগ জীবন
                                    চিত্রসূত্র-pixabay.com

 #4.মিষ্টি খাওয়া কমান:

                               ভালো ভাবে বাঁচতে হলে মিষ্টি খাওয়া কমাতে হবে।মিষ্টি আমাদের হজম শক্তির ব্যাঘাত ঘটায়।শরীরের অনেক খনিজ পদার্থের কার্যকারিতা নষ্ট করে।মন ভালো রাখার জন্য মাঝে মাঝে খাবারের তালিকায় রাখা যেতে পারে কিন্তু নিয়মিত নয়।তবে মিষ্টি খেলে তার সঙ্গে অন্য পুষ্টিকর খাবার ও খাওয়া উচিত তাতে ক্ষতি কম হয়।
                মিষ্টি যে অসুখ বয়ে আনে তা হল- কোষ্ঠবদ্ধতা, আর্থ্রাইটিস,ডায়াবিটিজ,গলস্টোন,ক্যানসার, হার্টের অসুখ, অস্থিরোগ ইত্যাদি।
তাই মিষ্টি হতে সাবধান।

#5.রাগ কমান:

                          রাগ শরীরের জন্য ভীষণ ক্ষতিকারক। দীর্ঘ জীবন যাপনের জন্য রাগ কে বর্জন করতেই হবে।রাগ রোগের অতুর ঘর।যদি কেউ ঘন ঘন রেগে যায় তাহলে তাঁর রক্ত চাপ বিপজ্জনকভাবে বেড়ে যেতে পারে,ষ্ট্রোক ও হতে পারে। রাগ কমানোর মোক্ষম দাওয়াই হল ধ্যান।

            দীর্ঘ দিন ধ্যান করতে থাকলে রাগ বলে কোনও বস্তু শরীরের ভিতরে থাকবে না। মন সব সময় তাজা,ফুরফুরে থাকবে।তখন সব কিছুই খুব ভালো লাগবে।

#6.প্রোটিনে হিসেবি হোন:

                                স্বাস্থ্যের জন্য প্রোটিন খাওয়া ভীষণ প্রয়োজন।শরীরের হাড়,চুল, নখ,ত্বক, পেশি সব কিছু ভালো রাখতে প্রোটিনের প্রয়োজন।তবে এক্ষেত্রে আর একটি বিষয় ও মনে রাখা উচিত বেশি প্রোটিন কিন্তু শরীরের জন্য ক্ষতিকর।যেমন বাড়ন্ত বাচ্চাদের প্রচুর প্রোটিনের প্রয়োজন কিন্তু বড়দের ততটা নয়।

                তাই মাছ,মাংস ডিম,দুধ সব ই খান তবে পরিমাণে অল্প করে।রেড মিট কম খাওয়া উচিত।এছাড়া নিয়মিত নিরামিষ প্রোটিন খেতে হবে।দীর্ঘ দিন আয়ু চাইলে কিছু নিয়ম মানতেই হবে।
নীরোগ জীবন
                               চিত্রসূত্র-pixabay.com

#7.মেপে জল খান:

                         কেবলমাত্র পরিস্রুত জল পান করে আমরা অনেক অসুখ বিসুখ কমিয়ে ফেলতে পারি।সুস্থ সবল জীবন যাপনের জন্য জলের ভূমিকা অপরিসীম।প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে ওঠে এক গ্লাস উষ্ণ গরম জল পান করলে দারুণ কাজ দেয়। এছাড়া প্রতিদিন আট থেকে নয় গ্লাস জল পান করা প্রয়োজন।

#8.যৌবন ধরে রাখতে:

                               ভিটামিন এ, সি,এবং ই ত্বকের যৌবন ধরে রাখতে খুব কাজ দেয়।এ সবের সঙ্গে যোগ করতে হবে বিটা- ক্যারোটিন সমৃদ্ধ খাবার।বিশেষ করে শহরের দূষণের হাত থেকে ত্বক রক্ষা করতে হলে বিটা- ক্যারোটিন সমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে ।দিনে মাঝে মাঝে পরিষ্কার জলে মুখ ধোঁয়া উচিত।

           নিয়মিত ব্যায়াম অভ্যাসের তালিকায় রাখতে হবে।প্রখর সূর্যালোক এড়িয়ে চলুন ।এছাড়া হজম যাতে ভালো হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে । নিয়মিত খেলাধুলায় অংশ নিন।মন টা বাচ্চাদের মতো রাখুন।
নীরোগ জীবন
                                  চিত্রসূত্র-pixabay.com

#9.নিরামিষ খাবার খান:

                      যদি দীর্ঘ দিন সুস্থ সুন্দর থাকতে চান তাহলে নিরামিষ খাবারে নিজেকে অভ্যস্ত করতেই হবে।যদি পুরোপুরি নিরামিষ না খেতে পারেন তাহলে মাঝে মাঝে মাছ,মাংস খান তবে পরিমাণে অল্প খান।তবে একটা কথা মাথায় রাখতে হবে যে, মাছ,মাংসের প্রোটিন টা যেন নিরামিষ খাবারে পূরণ হয় সেদিকে খেয়াল রাখুন।

আমরা বিশেষ করে বাঙালিরা নিরামিষ খাদ্য খুব একটা পছন্দ করি না কিন্তু বাইরের দেশ বিশেষ করে জাপানি রা নিরামিষ খাদ্য বেশি গ্রহণ করে ফলে ওঁরা দীর্ঘ জীবনের অধিকারী হয়।

#10. পরিশ্রম করুন:

                          প্রতিদিন ঘাম ঝড়ে এমন কাজ করা উচিত।দীর্ঘদিন বসে শুয়ে কাটালে নানা রোগ বাসা বাঁধবে।যদি কাজ কম থাকে তাহলে নিয়ম করে কিছু টা ষ্ট্রেচিং এক্সারসাইজ, কিছুটা এয়ারোবিক এক্সারসাইজ আর কিছুটা ওয়েট নিয়ে এক্সারসাইজ করা প্রয়োজন।

এক্সারসাইজ করলে  হার্ট ভালো থাকে,ফুসফুসের ক্ষমতা বাড়ে,চর্বি হবে না,হাই ব্লাড প্রেশার কমে,কোলেস্টেরল কমে,মানসিক চাপ দূর হয়,যৌনক্ষমতা বাড়ে এবং অবসাদ কাটে।তাই দীর্ঘ নিরোগ জীবনের জন্য শারীরিক কসরত করা টা অবশ্যম্ভাবী।

                   আপনি যদি শারীরিক ওজন সংক্রান্ত সমস্যায় ভোগেন তাহলে  কিভাবে খুব দ্রুত ওজন কমানো যায়? ওজন কমাতে খাদ্য তালিকা   উপরের লিঙ্কে প্রবেশ করুন এবং বিস্তারিত।আশাকরি আপনি 
 উপকৃত হবেন।

নীরোগ জীবন
                                চিত্রসূত্র-pixabay.com
 

#11.ফলের রস:

                 রোগগ্রস্ত থেকে মুক্তি পেতে আর দীর্ঘকাল তরতাজা থাকতে টাটকা শাকসবজি এবং ফলের তুলনা মেলা ভার।ফলে থাকে প্রচুর অ্যান্টি অক্সিডেন্টাল যা দূষিত পদার্থ থেকে শরীর কে রক্ষা করে।যেমন রোজ দু থেকে চার চামচ গাজরের রস খেলে যে কেউ উপকৃত হবে।গাজরের রস রোগ প্রতিরোধ করে,দৃষ্টি শক্তি ভাল করে।তবে ফল গোটা খাওয়া বেশি ভালো।প্রতিটা ফল খাওয়ার আগে ভালো করে ধুয়ে নিতে হয়।

        আর রস করে খেলে যেন ফলের খোসা,বিচি,না থাকে।এগুলো তে প্রাকৃতিক বিষাক্ত পদার্থ থাকে।

#12.সুস্থ থাকতে ভিটামিন সি:

                              শরীর সুস্থ রাখতে ভিটামিন সি এর ভূমিকা অপরিসীম।ভিটামিন সি টিস্যু, ব্লাড ভেসল,মাড়ি, কার্টিলেজ ,হাড় ইত্যাদি  ক্ষয়পূরণ এবং বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। 

ভিটামিন সি এর সঙ্গে  কোলাজেনের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে।কোলাজন আমাদের ত্বক যৌবনদীপ্ত এবং নমনীয় রাখে।   

            ভিটামিন সি শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।দূষণ, রেডিয়েশন, কীটনাশক ইত্যাদি ক্ষতিকর প্রভাব থেকে শরীর কে রক্ষা করে।  

#13.পজিটিভ অ্যাটিটিউড গড়ে তুলুন:

                           আপনার শরীর কী রকম থাকবে তা অনেকাংশেই নির্ভর করে আপনার দৃষ্টিভঙ্গি উপর ।আপনি যদি ভাবেন যে আপনি ভাল নেই তাহলে সত্যি সত্যিই আপনি ভাল থাকবেন না।

                           আর যদি আপনি মনে করেন আপনি চমত্কার আছেন সুস্থ আছেন তাহলে আপনি তাই থাকবেন।আমাদের মন অনেকাংশে ঠিক করে আমি কেমন থাকব।
   
             একটি গবেষণায় দেখা গেছে,  শুধুমাত্র মনের জোরেই অনেক রোগ- অসুখ থেকে দিব্যি সুস্থ হয়ে ওঠা সম্ভব হয়।

#14.মানসিক চাপ কমান:

                                    যদি আপনি মানসিক চাপের মধ্যে থাকেন তাহলে দিনে আধঘণ্টা  থেকে একঘণ্টা করে সপ্তাহে তিন থেকে চার দিন এয়ারোবিক এক্সারসাইজ করুন।

                   এছাড়া মানসিক চাপ এড়াতে খুটিনাটি কোন না কোন কাজে নিজেকে নিয়োজিত করুন
নীরোগ জীবন
                                চিত্রসূত্র-pixabay.com

#15.রিলাক্স করুন:

                                    আপনি যদি সারাদিন কিছু না কিছু বিষয় নিয়ে দুশ্চিন্তায় দিন কাটান তাহলে আপনার শরীর নানা রোগের শিকার হয়ে পড়বে।

               তাই অবসর সময়ে মন পছন্দ সঙ্গীত শুনুন।চোখ বন্ধ করে কোন একটি সংখ্যা ভাবুন।

শরীরের সমস্ত পেশি শক্ত করে পরমুহূর্তেই শিথিল করে দিন। হালকা লাফ- ঝাঁপ করুন। মোট কথা দিনের কিছু টা সময় নিজের মতো করে কাটান।
            

 দীর্ঘ দিন নীরোগ শরীর ধরে রাখতে জীবন যাত্রার পরিবর্তন করা প্রয়োজন।সুস্থ থাকাই হল জীবনে র মূল উদ্দেশ্য তাই উপরিক্ত পদ্ধতি অনুসরণ করে আমরা সুস্থ প্রাণোচ্ছল থাকতে পারি আজীবন।

চিত্রসূত্র-pixabay.com

তথ্যসূত্র- সংগৃহীত।

Tags,দীর্ঘ নীরোগ জীবন 

ধন্যবাদ 😊


                                        

কোন মন্তব্য নেই:

Blogger দ্বারা পরিচালিত.