১৫ টি উপায়ে নিজেকে ভালো রাখুন
মনের আনন্দে আত্মহারা
চিত্র সূত্র- pixabay.com
নিজেকে ভালো রাখার উপায়:
জীবন তুই বড় সুন্দর, তোর কোলে পায় আমি পরম শান্তি। তোকে উপভোগ করেই তো আমি হই মহা সুখী, জীবন তুই বড় সুন্দর। --- নিজেকে ভালো রাখতে চাইলে এই কথা গুলি প্রতি মূহুর্তে নিজেকে বলুুন। আপনি হয়তো ভাবছেন, আজকে কি বিষয় নিয়ে আমি উপস্থিত হলাম। আমরা তো নিজেকে সব সময় ভালো রাখি। আপনি কি নিশ্চিত আপনি নিজেকে ভালো রাখেন? নিজেকে ভালো রাখতে আপনি কি করেন? আসুন তো একটু জানি-- আপনার ভাবনার সঙ্গে আমার তথ্যের মিল কতটা।
বর্তমানে মানুষ সব থেকে বেশি ব্যস্ত নিজেকে ভালো রাখতে। কিন্তু সব থেকে মানুষ বেশি হোঁচট খাচ্ছে এই একটি স্থানে, গবেষণা সে কথাই বলছে-- গবেষণা বলছে, বর্তমান প্রজন্ম সব থেকে বেশি হতাশা গ্রস্ত, দুঃখী, অসুখী।আসলে আমাদের ভাবনার মধ্যে লুকিয়ে আছে বিশাল বড় গলদ। এখন নিজেকে ভালো রাখার উপায় হিসাবে মানুষ, কিছু ভুল নীতি আঁকড়ে ধরে। অনেকেই নিজে ভালো থাকার জন্য, স্বার্থপর হওয়া টাকে শ্রেয় বলে মনে করে। এরা বলে নিজে ভালো থাকতে গেলে স্বার্থপর হতে হয়, কিছু কিছু সময় হিংসা হতে হয়, নিজের ভবিষ্যতের কথা ভাবতে হয়, ইত্যাদি ইত্যাদি। এই ভাবনা যে কতটা বিপদজনক সেটা যদি একবার আমরা চোখে দেখতে পেতাম তাহলে পৃথিবী টা চমৎকার হয়ে যেত। কারণ সবাই এই মনোবৃত্তি ত্যাগ করত। শুধু নিজের স্বার্থের কথা ভাবলে ভবিষ্যত আলো নয়, অন্ধকার হয়ে যাবে।
একটা কথা বলুন তো? নিজেকে ভালো রাখা কি কোন কঠিন কাজ? আমি মনে করি পৃথিবীর মধ্যে সব থেকে সহজ কাজ হল নিজেকে ভালো রাখা। কারণ এ রিমোট আমার হাতে। কিন্তু তবুও কেন নিরানব্বই শতাংশ মানুষ বলে আমি ভালো নেই! আমি সুখে নেই, আমার মনে শান্তি নেই!
তার কারণ হল আমরা স্বীকার করি আর না করি, মানুষ মন থেকে হিংসা নামক জঞ্জাল কে ত্যাগ করতে পারছে না। আর ভালো থাকার প্রথম শর্ত হল হিংসা, ঘৃণা, অহংকার, ত্যাগ করে একটি সুন্দর মন তৈরি করা। আমরা সকলেই জানি কিভাবে এই খারাপ অভ্যাস গুলো ত্যাগ করতে হয়। কিন্তু সমস্যা হল-- আমার মধ্যে যে এই দূষিত পদার্থ আছে সেটা স্বীকার করি না। আর স্বীকার না করলে আমরা ত্যাগ করব কি করে?
নিজেকে কিভাবে ভালো রাখবেন, এর উত্তর আমি এক কথায় দিয়ে বেরিয়ে যেতে পারি। নিজেকে ভালো রাখতে হলে নিজেকে পরিচ্ছন্ন করে রাখতে হবে।এর বাইরে আর কিছু নয়। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে পরিচ্ছন্ন করব কিভাবে?
এখানে স্বামী পরমানন্দ- র একটি উক্তি প্রযোজ্য---
" তোমার অন্তর পরিবেশ সৎ চিন্তার সুগন্ধে পূর্ণ করিয়া রাখিও।"
মানুষ যখন স্বার্থের বশীভূত হয় তখন তাঁর নীতি জ্ঞান ছিন্নভিন্ন হয়ে যায়। তখন সে দুর্বল হয়ে পড়ে।তার ভাবনা কলুষিত হয়।
সবাই ভালো থাকার জন্য আজ 'আমিত্বে মগ্ন'। আমিত্ব দু ধরনের। একধরনের আমিত্ব মানুষ কে উপরে তোলে , যে আমিত্ব নিজের মধ্যে থেকেও নিজেকে সবার মাঝে মেলে ধরে, আর এক ধরনের আমিত্ব শুধু নিজের স্বার্থের কথা বলে। এ, মানুষ কে নীচে নামায়।
মজার বিষয় হল, আমি এখন যে অবস্থায় ই থাকি না কেন আমি যে কোন মূহুর্তে নিজের অবস্থানের পরিবর্তন ঘটাতে সক্ষম হতে পারি। কিন্তু তার জন্য ভাবনার প্রয়োজন। আজ আমি এই আর্টিকেলের মাধ্যমে কিছুটা হলেও আপনাদের, নিজেকে নিয়ে একটু গভীর ভাবে ভাবাতে সহায়তা করব। তবে আমি যে কথাগুলো বলব সে গুলো আপনাকে মন থেকে বিশ্বাস করতে হবে। আমি কথা দিচ্ছি, আপনি যদি প্রতিটা কথা বিশ্বাস করেন তাহলে-- শুধু নিজেকে ভালো রাখাই নয়, আপনি জীবনে যা চাইবেন তাই পাবেন। আমি যে কথাগুলো বলব সেগুলো আমি নিজের জীবনে প্রয়োগ করে ফল পেয়েছি এবং আমি আমার জীবনে যে 25/5 রুল পূর্ণ করার ইচ্ছা প্রকাশ করেছি তার মধ্যে একটি হল -- "দি সিক্রেট" সম্পর্কে সবাইকে অবগত করা। আজ আমি চেষ্টা করব - The secret এর কিছুটা অংশ তুুলে ধরার।
The secret এর প্রথম কথা হল-- আপনি জীবনে যেটা চান সেটা একবার নয়, বারবার মুখে উচ্চারণ করুন, মহাবিশ্ববের কাছে আপনার ভাবনার ফ্রিকোয়েন্সি পাঠান। এবং আপনি সেটা জীবনে অবশ্যই পাবেন -- এই বিশ্বাস করুন। আপনি যদি নিজেকে ভালো রাখতে চান তাহলে, আপনি খুব ভালো আছেন, সুখে আছেন, শান্তি তে আছেন এটা বলুন।আমরা যে ভাবনা, যে কথার ফ্রিকোয়েন্সি মহাবিশ্বে পাঠায়, সেই একি ফ্রিকোয়েন্সি আমাদের কাছে ফেরত আসে। তাই আপনি যখন বলবেন আমি খুব ভালো আছি আপনি তখন সত্যিই খুব ভালো থাকবেন।
মহাবিশ্ব কোন ভাষা বোঝে না, কেবল আমাদের ডাকে সাড়া দেয়। তাই আমরা যখন নেতিবাচক চিন্তা ভাবনা করি তখন আমাদের কাছে আরও নেতিবাচক চিন্তা ভাবনা ফেরত আসে। আমরা যখন বলি আমি পৃথিবীর মধ্যে দুঃখী মহাবিশ্ব তাতেও বলে তথাস্ত। তুমি দুঃখী থাক। আবার আমরা ইচ্ছা করলে ভালো ভাবনা দিয়ে খারাপ ভাবনার পরিবর্তন করতে পারি। তবে এর সমস্ত শক্তি নিহত থাকে বিশ্বাসের উপরে।
আমি জানি এখানে সবার মনে একটি প্রশ্ন উঁকি দিচ্ছে-- পৃথিবীর কোন মানুষ ই তো দুঃখ, কষ্টে থাকতে চাই না তাহলে থাকে কেন?
এই প্রশ্ন আমার মনেও উঁকি দিয়েছিল-- এর ও মূল কারণ হচ্ছে ভাবনা। কোন না কোন সময় অবশ্যই আমরা দুঃখের কথা ভেবেছি, এবং যখন দুঃখ এসে উপস্থিত হয়েছে তখন সুখের ভাবনা টা ভাবতে ভুলে গেছি! দুঃখ আমার জীবনে কেন এলো, আমি দুঃখী মানুষ এটা ভাবতে ভাবতে দিন রাত পার করছি! যখন মানুষ খুব ক্ষুধার্ত থাকে, তখন সে ঐ মূহুর্তে বিরিয়ানি খাওয়ার কথা ভাবে না, সে এক মুঠো সাদা ভাত চাই, এবং তার মন তখন থাকে দোটানায়-- ভাত পাবো কি পাবো না, এটাই ভাবতে থাকে। ফলে বিরিয়ানির কথা ভাবা তো দূরে থাক, বিরিয়ানির কথা মাথার দশ কিলোমিটারের আশেপাশে ও আসে না।
এখানে ভালো করে বোঝার চেষ্টা করুন-- সাদা ভাত চাইছে, কিন্তু তাতেও দোনামনা। আর বিরিয়ানি তো চাইছেই না। তাহলে পাবে কি করে?
The secret বলছে, যেটা চাইছো, সেটা নিয়ে সন্দেহ করো না। কোথা থেকে আসবে সে ভাবনা তোমার নয়, তুমি শুধু বিশ্বাসের সঙ্গে ভেবে যাও, তোমার ভাবনা সত্যি করার পথ তৈরি করে দেবে মহাবিশ্ব।
উদাহরণ টা খাবার নিয়ে দিলাম, কিন্তু এই একই পদ্ধতি সকল ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। সেটা নিজেকে ভালো রাখা হোক, বা অর্থ উপার্জন হোক, কিংবা পুরো জীবন সুন্দর করাই হোক। সব জায়গায় একি নীতি। আমরা নিজেরাই হলাম আলা উদ্দিনের আশ্চর্য প্রদীপ। তাকে হুকুম কর সে তোমার সমস্ত হুকুম তামিল করবে।
গরীব মানুষ সারা জীবন গরীব থেকে যায়, গরীবের ভাবনা থেকে বেরিয়ে বড় কিছু ভাবতে পারে না তাই। যাঁরা বড় কিছু ভাবতে পারে, নিজের প্রতি বিশ্বাস রাখে তাঁরা বড় কিছু হয়ে দেখায়। এই জন্যই খুব কম সংখ্যক মানুষ গরীব থেকে বড়লোক হতে পারে। কারণ বেশিরভাগ মানুষই মহাবিশ্বের কাছে গরীব ফ্রিকোয়েন্সি পাঠায়। আপনি জীবন নিয়ে যত দুঃখ করবেন তত আপনি দুঃখ কে আকর্ষণ করবেন। এটাই মহাবিশ্বের মূল নীতি।
আপনি যদি নিজের সম্পর্কে খারাপ অনুভব করেন তাহলে এর অনুভূতি হবে যে আপনি নিজের জীবনকেই শুষছেন। কারণ আপনার সব শুভত্ব, প্রতিটি বিষয়, স্বাস্থ্য, সম্পদ, ভালোবাসা-- সব কিছুই রয়েছে ভালো অনুভূতি ও আনন্দের ফ্রিকোয়েন্সি তে। অফুরন্ত শক্তির অনুভব এবং আশ্চর্য স্বাস্থ্য ও পরিপূর্ণ সুস্থতার অনুভব, সবই নির্ভর করে ভালো অনুভূতির ফ্রিকোয়েন্সি তে।
তাই চলুন আমরা আমাদের ভাবনার পরিবর্তন করি, তাহলে জীবন আপনা আপ সুন্দর হয়ে উঠবে। আমি আপনাকে দি সিক্রেট- এর আর একটি রহস্যে নিয়ে যাব----
আপনি জীবনে যা কিছু চান সেই সব পাওয়ার সবচেয়ে সংক্ষিপ্ত রাস্তা হল, এখন বর্তমানে সুখী হওয়া এবং সুখ অনুভব করা, ভালো আছি এটা অনুভব করা। এটাই হল আপনি জীবনে যা চান সেটা পাওয়ার একমাত্র উপায়।আপনার সুখ, আনন্দ, হাসি, সমস্ত অনুভূতি মহাবিশ্বে প্রেরণ করুন। তখন মহাবিশ্ব আপনার আকর্ষণ শক্তির ডাকে সাড়া দেবে। এবং আপনাকে আপনার চাওয়া সমস্ত জিনিস দেওয়ার জন্য প্রস্তুত হবে। তবে সাবধান জীবনে যত সমস্যাই আসুক না কেন এই ভালো ফ্রিকোয়েন্সির থেকে সরে আসবেন না। তবে এটা আসতে একটু সময় লাগে। আর আমরা এই ধৈর্য্য টাই ধরতে জানি না। তখন বিশ্বাস হারিয়ে ফেলি, ফলে সঙ্গে সঙ্গে আবার অবিশ্বাসের ফ্রিকোয়েন্সি মহাবিশ্বে চলে যায়। তাই তো মহান মানুষেরা বলেন-- ধৈর্য্য ধরতে। কারণ তাঁরা রহস্য সম্পর্কে সকলেই অবগত। পৃথিবীর প্রতিটা বিখ্যাত ব্যক্তি বিখ্যাত হয়েছেন রহস্য কে সিঁড়ি বানিয়ে।
এবার আমরা নিজেকে ভালো রাখার ১৫ টি উপায় সম্পর্কে জানব--
আমরা The secret কে প্রতিটা পদক্ষেপে ব্যবহার করতে পারি। এবং জীবন কে চমৎকার করে তুলতে পারি। তার জন্য অবশ্য নিজেকে বুঝতে হবে। দি সিক্রেট গ্রহণ করার মতো জায়গায় পৌঁছাতে হবে। দি সিক্রেট অগুনিত মানুষের কাছে পৌঁঁছে ছে কিন্তু খুব কম সংখ্যক মানুষ এ মধু পান করতে সক্ষম হয়েছে। চলুুুন জীবনে কিভাব একে প্রয়োগ করা যায় দেখিি--
#1. নিজের কাজ কে আনন্দময় করে তোলো:
যে নিজের কাজে আনন্দ পায় না, সে একজন অসুখী মানুষ। আপনি যে কাজই করুন না কেন সেই কাজটি ভালোবেসে করুন। আমরা যখন খুশি মনে যখন কোন কাজ করি তখন মহাবিশ্বে খুশির ফ্রিকোয়েন্সি যায় ফলে সেই কাজে আরও সফলতা আসতে থাকে।
কিন্তু যদি শুধু অর্থ উপার্জনের জন্য কাজ করি তাহলে যখন অর্থ হাতে পাব তখনই মনে আনন্দ আসবে বাদবাকি দিন মনে বিরক্তি প্রবেশ করবে। ফলে মানসিক শান্তির ব্যাঘাত ঘটবে। কাজ করতে গেলে আগে মানসিক শক্তির প্রয়োজন।
#2. বই পড়ো:
নিজেকে ভালো রাখতে গেলে আগে জ্ঞান সঞ্চয় করত হবে। আর জ্ঞানের ভাণ্ডার হল বই। দুুুঃখের বিষয় হল আমরা প্রথাগত শিক্ষার বাইরে আর বই ছুুঁই না। ফলে হৃদয়ে জ্ঞান খুব কম।
Goeth (গোথ) বলেছিলেন---
" তুমি কি বই পড়ো ? আমাকে বলো। তাহলে আমি বলে দেব তুমি কি ধরনের মানুষ।"
জীবন কে সুন্দর করে সাজিয়ে রাখতে গেলে সবার থেকে ভিন্ন হও। নিজের চিন্তা ভাবনায় শান দাও। আর এই চিন্তা ভাবনা তখনই সম্ভব যখন তুমি বইয়ের সঙ্গে সময় কাটাবে। বিখ্যাত মানুষের জীবন সম্পর্কে জানবে। বই পড়লে ভালো ভাবনা মনে আসবে। এবং মহাবিশ্বে সেই ভালো ভাবনার ফ্রিকোয়েন্সি পৌঁছে যাবে।
#3.খাবারের প্রতি নজর দিন:
হ্যাঁ, খাবার। খাবার আমাদের জীবন সুন্দর করতে বিরাট ভূমিকা রাখে। কিছু কিছু খাবার আমাদের মন ভালো করে, কিছু কিছু খাবার আমাদের মন অস্থির করে তোলে।
যাঁরা সাধু সন্ন্যাসী তাঁরা নিরামিষ খাদ্য গ্রহণ করে। কারণ নিরামিষ খাদ্য খেলে মন চঞ্চল হয় না, মন শান্ত থাকে। ফলে ভালো ভাবনা মনে প্রবেশ করে। কিন্তু আমরা যাঁরা আমিষ খাবার খায় তাঁদের রাগ বেশি হয়, কথায় কথায় মেজাজ হারিয়ে ফেলি।
তাই কমপক্ষে সপ্তাহে দুদিন নিরামিষ খাবার খাওয়া উচিত। এবং যতটা পারা যায় বাইরের খাবার পরিত্যাগ করা উচিত। ঘরে তৈরি প্রাকৃতিক খাবার খাওয়া দরকার।
এছাড়া যে খাদ্য তৈরি করে তাঁর মন মেজাজের উপরেও খাবারের গুনাগুন নির্ভর করে। কারণ রাগ করে মন খারাপ করে রান্না করলে তাঁর মনের খারাপ প্রভাব টা খাবারের উপরে পড়ে।
আগেই বললাম, ভালো থাকতে চাইলে প্রতিটা বিষয়ের দিকে নজর দিতে হবে।
#4. না বলতে শিখুন:
আমি একজন ভালো মানুষ হব, কিন্তু বোকা মানুষ কখনোই হব না। সবাইকে শ্রদ্ধা করো,
ভক্তি করো কিন্তু সবার মন রেখে চলতে যেও না। ভালো মানুষ হও, তবে অবশ্যই এক জন বুদ্ধি মান মানুষ ও হও। তা না হলে তোমাকে কেউ সম্মান করবে না।
কিছু কিছু সময় সবাই কে না বলতে শেখ।নিজের ক্ষতি করে অন্যের উপকার করাটা হল বোকার লক্ষণ।
একটি প্রাচীন গ্রিক প্রবাদ আছে---
" ভালো মানুষ খুব ধীরে 'না' বলে। বুদ্ধিমান মানুষ চট করে 'না' বলতে পারে।"
#5. কথা কম বলুন:
কম কথা বলুন, অন্যের কথা মন দিয়ে শুনুুন। আমরা যত বেশি কথা বলি তত বোকা বোকা কথা বেড়িয়ে আসে। জ্ঞানী ব্যক্তি রা কথা শোনে বেশি বলে কম।
কথা কম বললে মানুষের সঙ্গে সমস্যা কম হয়। খুব বেশি বন্ধু তৈরি করা উচিত নয়। আপনি এমন বন্ধু নির্বাচন করুন যাঁর কাছ থেকে কিছু শিখতে পারবেন। দুটো অনুপ্রেরণা মূলক কথা পাবেন। তবে মনে রাখবেন শুধু শিক্ষিত মানুষ ই অনুপ্রেরণা মূলক কথা বলে তা কিন্তু নয়, যে মানসিক শিক্ষিত সে সুন্দর কথা বলে।
#6. নিজেকে ফাঁকি দেবেন না:
আপনি যদি কম বোঝেন, তাতে কোন ক্ষতি নেই, আমরা কেউ যে বিশাল কিছু বুঝি তা কিন্তু নয়। তবে কম বুঝে বেশি বোঝার ভান করবেন না। তাহলে আপনাকে কেউ পছন্দ করবে না।
সক্রেটিস বলতেন--
" আমি একটা জিনিস ই বুঝি, আমি কিছুই বুঝি না।"
কিছু কিছু মানুষ আছে যাঁরা ভিতরে এক বাইরে এক। এঁরা মুখোশ পরে চলে। এঁরা বোঝে না, যে নিজের ফাঁকি নিজেই দিচ্ছে। কারণ আপনার মনের কথা মহাবিশ্বের কাছে পৌছায়। তাই মনে খারাপ ভাবনা নিয়ে হয়তো ভাবছেন কেউ দেখতে পাচ্ছে না। আরে বোকা আমার নিজের অন্তরের ভাবনা তো আমি নিজে দেখতে পাচ্ছি, অনুভব করতে পারছি।
সেই চোরের গল্পের মতো-- বোকা চোর ভাবে রাতের অন্ধকারে আমি চুপিচুপি চুরি করে পালিয়েছি। কেউ দেখতে পায় নি। কিন্তু বোকা চোর এটা জানে না যে, এই পৃথিবীতে জীব শূন্য বলে কোন স্থান নেই। যেখানে স্বয়ং চোর উপস্থিত সেখানে কেউ দেখতে পাচ্ছে না এটা চোর ভাবে কি করে?
চোরের অন্তর সেই চুরির সাক্ষী থাকে। এবং কোন না কোন সময় তাঁর অন্তর তাঁকে আত্মগেলানী তে ভোগায়। অন্তরই চুরির শাস্তি দিয়ে দেয়।
তাই নিজেকে কখনোই ফাঁকি দেওয়া যায় না।
#7.প্রযুক্তির জালে ফাঁসবেন না:
প্রযুক্তি ছাড়া আমাদে জীবন অচল। তবে প্রযুক্তি কে ভালো কাজে ব্যবহার করুন, আপনি যেন এর গোলাম হয়ে যাবেন না।
বর্তমানে একটা কোন অনুষ্ঠান বাড়ি কিংবা যে কোন জায়গায় গেলে আমরা প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করার বদলে নিজেকে ক্যামেরার মধ্যে বন্দী করে রাখি। এবং সেই সুন্দর মূহুর্ত টা উপভোগ না করে সোস্যাল মিডিয়ায় এখন কোথায় আছি, কি করছি তার আপডেট দিতে থাকি ফলে ঐ মূহুর্ত টা নষ্ট হয়ে যায়।
তার উপরে সেলফি তুলে সোশ্যাল মিডিয়া য় ছাড়ার চক্করে মানুষের সঙ্গে কথা বলার সুযোগ হারিয়ে ফেলি। আবার কেউ যদি লাভ রিয়াক্ট না দেয় তাহলে তো মনের মধ্যে কত দুঃখ কষ্ট জমতে থাকে।
আমাদের হুঁশ থাকে না, আমরা নিজেদের কোথায় দাঁড় করিয়ে দিচ্ছি। আমার ভালো থাকা নির্ভর করছে অন্যের লাভ রিয়াক্টের উপরে। একটু তলিয়ে ভাবুন, এবং নিজের মনের যত্ন নিন।
আমরা স্বামী স্ত্রী দুজনেই সোশ্যাল মিডিয়া য় তে কাজ করছি, কিন্তু আজও পর্যন্ত ঘটা করে নিজেদের ছবি ফেসবুকে দিই নি। এমনকি হোয়াটস অ্যাপ তেও দিই না। আমার কাজের প্রয়োজনে যেটুকু প্রয়োজন সেটুকুই দিই।
#8. ঝামেলা মুক্ত সম্পর্কের ইতি টানুন:
আগেই পোস্টে আমি এ কথা উল্লেখ করেছি, তবুও আবার বলছি, আমাদের জীবনের তিন ভাগের দুুুুইভাগ কাটে সংসার জীবনে। তাই এই সিদ্ধান্ত টা খুব ভেবে চিন্তে নেওয় উচিত।
সবাই বিয়ে করছে, তাই আমি ও বিয়ে করব এই ভাবনা ত্যাগ করুন। কারণ একবার ভুল হয়ে গেলে সেই ভুল কাঁটার মতো বিঁধবে।
আর যদি আপনার সম্পর্ক ইতিমধ্যেই খারাপ দিকে টান নিয়ে থাকে তাহলে তাঁর সঙ্গে বসে সুন্দর করে সমস্যা মেটানোর চেষ্টা করুন। কারণ ঘর হল মন্দির। তাকে সব সময় সুন্দর পবিত্র এবং শান্তিময় রাখতে হয়। তবেই সেখানে সুখ প্রবেশ করে।
আর যদি কিছুতেই সম্পর্ক টা সুস্থ না থাকে তাহলে সে সম্পর্কের ইতি টানুন।
#9. মাঝে মাঝে ঘুরতে যান:
মাঝে মাঝেই ঘুুুুুরতে গেলে মন একদম চাঙ্গা হয়ে যায়। কাজের ফাঁকে বিরতি নিয়ে ঘুুুরে এলে পরে কাজের গতি বাড়ে।
মোট কথা আমি কিসে ভালো থাকব সেটা একমাত্র আমিই জানি তাহলে আমি আমার ভালো থাকার দিকে নজর দেব, এটাই হল আসল কথা। সম্ভব হলে বন্ধুর সঙ্গে সাইকেল করে বিকালে ঘুরে আসুন মন টা দারুণ ফুরফুরে হয়ে যাবে।
চিত্র সূত্র- pixabay.com
#10.প্রাণ খুলে হাসতে ভুলবেন না:
মাঝে মাঝে হাসির সিনেমা দেখুন। বাচ্চাদের সঙ্গে খেলা করুন । নিজেকে বড় করে তুলবেন না। মনটা কে বাচ্চা করে রাখুন।
হাসি হল ভালো থাকার সুস্থ থাকার পাসওয়ার্ড। তাই একে ঠেটে ধরে রাখুন।
আরও পড়ুন: সুখ মানে কি? সুখী হওয়ার ১০ টি উপায়।
#11. পাশের মানুষ টা কে ভালো বাসুন:
সত্যি কথা বলতে, আমি আমার নিজের অভিজ্ঞতা থেকে এটুকু বলতে পারি, এই একটা মানুষের সঙ্গে যদি সুন্দর সম্পর্ক বজায় রাখা যায় তাহলে পৃৃথিবী আপনার হাতের মুঠোয়।
স্বামী স্ত্রীর সম্পর্ক সুন্দর থাকলে এই পৃথিবীর সবাই কে ভালোবাসতে ইচ্ছে করে। সব কিছু বড্ড ভালো লাগে। বাবা, মা, ভাই বোন , বন্ধু, বান্ধব সকলকেই আদর করতে ইচ্ছে করে। কিন্তু এখানে সুখ না পেলে পৃথিবী অন্ধকার ময়।
তাই পাশের মানুষ টা কে ভালোবাসুন। আপনার সব সুখ ঐ খানে।
#12. অন্যের কাছে প্রত্যাশা কমান:
ভালো থাকতে চাইলে অন্যের কাছে প্রত্যাশা কমান। সে যত আপন মানুষ ই হোক না কেন, কারো কাছে কিছু প্রত্যাশা করা উচিত নয়।
কারণ আমরা যেটা চাই, সেটা না পেলে মন খারাপ হয়, তখন সম্পর্কের মধ্যে ফাটল ধরে। তাই আপনি ভালোবাসা দিন, কিন্তু সেটা ফেরত পাওয়ার আশা না করে। তবে মন থেকে আপনি যদি কাউকে কিছু দেন তাহলে আপনার মনটা সব সময় সুন্দর থাকবে। এবং একটা সুন্দর ফ্রিকোয়েন্সি মহাবিশ্বে চলে যাবে এবং আপনার কাছে সেই সুন্দর ফ্রিকোয়েন্সি আবার ফেরত আসবে।
#13. কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে ভুলবেন না:
আমরা যখন কারো কাছে কৃৃতজ্ঞ থাকি তখন আমাদের অনুভূতি থাকে সব থেকে হাই ফ্রিকোয়েন্সি তে। কৃতজ্ঞতার জাদু অপরিসম।
আমরা যত কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করব তত আমাদের জীবন সুন্দর হয়ে উঠবে।
এবং অবশ্যই প্রতিদিন প্রার্থনা করার অভ্যাস করুন।
জাতির জনক মহাত্মা গান্ধী বলতেন --
" প্রার্থনা না করলে আমি কবেই পাগল হয়ে যেতাম।"
#14. নিজেকে নিয়ে পাগলামি করুন:
নিজেকে নিয়ে পাগলামি করুন মাঝেমধ্যে। লোকে কি বলবে, লোকে কি ভাববে এ ভাবনা ছেড়ে, নিজের মন কি বলছে সে কথা শুনুুন।
যদি টুম্পা গান চালিয়ে দিয়ে নাচতে ইচ্ছা করে তাহলে ঘরের দড়জা বন্ধ করে পাগলের মতো নাচুন। দয়া করে এটা বলবেন না, যে আমার নাচার বয়স নেই। বয়স ত্বকে বাড়ে, মনে নয়।
#15. নেশা করবেন না:
নেতিবাচক কোন নেশাা করবেন না। নেশা দুরকমের। বই পড়া নেশা ইতিবাচক। কিন্তু মদ খাওয়া, খারাপ সঙ্গে খারাপ স্থানে যাওয় হলো নেতিবাচক নেশা। এগুলো মানুষের জীবন নষ্ট করে।
উপসংহার
জীবন সত্যিই খুব সুন্দর। একে সুন্দর করেে উপভোগ করুন। নিজেকে ভালো রাখতে হবে এই ভাবনা নিয়ে এগিয়ে চলুন। হৃদয়ে মায়া দয়া টা নষ্ট হতে দেবেন না। মানুষের পাশে দাঁড়ান। জীবন সুন্দর হতে বাধ্য হবে।
কারণ আমরা ভালো কাজ করলে মহাবিশ্বের কাছে ভালো বার্তা যাবে। এবং সেই ভালোর প্রভাব আমাদের কাছে ফিরে আসবে। তবে নিজেকে ভালো রাখার জন্য উপরের পয়েন্ট গুলোই কিন্তু সব নয়, এর বাইরেও অনেক কিছু আছে নিজেকে ভালো রাখর।
ধন্যবাদ।
চিত্র সূত্র- pixabay.com
তথ্যসূত্র- দি সিক্রেট এবং ব্যক্তিগত মতামত।
TAGS, আত্মা উন্নয়ন, মন ভালো রাখার উপায়, ভালো থাকার উপায়।
কোন মন্তব্য নেই: